আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীরবতা ০১



প্রচণ্ড কড়া রোদ। তার সাথে গাড়ির ধোঁয়া। বিশ্রী একটা পরিবেশ। কোমরের দিকটায় কেমন সুড়সুড় করছে। ছারপোকার ওষুধ এবার কিনতেই হবে।

ও!! মোবাইল বাজছে। গাড়ির হর্নে শুনতে পাচ্ছিলাম না। -হ্যালো, অরণি, বল? -তুমি কোথায়? -মতিঝিলে। -মতিঝিলে কি কর? - চা খাচ্ছি। -এই গরমের মধ্যে কেউ চা খায়? সিগারেটও খাচ্ছ সাথে, না? -হ্যাঁ, গন্ধ পাচ্ছ? -আমার সাথে ফাইজলামি করবে না।

শোন, আম্মুর সাথে শপিংএ যাবো, আগামি ৩ ঘণ্টা আমাকে ফোন করবে না। -তিন ঘণ্টা শপিং করবে? -জানি না কতক্ষন করবো। আমাকে ফোন দিবে না। -ঠিক আছে, দেবো না। মাসের ২৮ তারিখ আজকে।

পকেটে আছে ৩৩ টাকা। এই মাসেই ৩১ দিন হতে হল? ৩০ দিন হলে আরও একদিন আগে বাসা থেকে টাকা আসতো। গতকাল কাওরান বাজারে গিয়ে দেখলাম প্রায় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা রাস্তায় বসে কাঁদছে। জিজ্ঞাসা করতেই বলল, খাওয়া হয়নি কিছু সারাদিন। হাতে ১০০ টাকা দিয়ে বললাম, খেয়ে নিলেন।

তখন বাকি ৩৩ টাকা ১০০ টাকা থেকে অনেক বেশি মনে হচ্ছিল। ফোন বেজে উঠলো। - শোন, তোমার কোন কালার পছন্দ? বেগুনি না খয়েরি? - কেন বল তো? - তোমার এত জানার দরকার কি? আচ্ছা, একটা টাই কিনছি। - আমার জন্য? আমার তো দুটি কালারই পছন্দ। - ঠিক আছে, দুইটাই নিচ্ছি।

আমারও দুটোই পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা শোন, বেলা ইটালিয়ার পিজা ভালো না ডমিনাসের? বাসায় নিতে হবে। - আমি জানি না। - জানো কি তুমি? সারাদিন শুধু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাঘুরি আর সিগারেট খাওয়া। খট করে ফোন রেখে দেওয়ার শব্দ পেলাম।

রাস্তায় বসে এক টোকাই ছেলে বার্গার খাচ্ছে, দেখতে ভালো লাগছে। পাশের বড় একটা ফাস্টফুডের ডাস্টবিন থেকে পেয়েছে। আকাশটা হঠাৎ মেঘলা হয়ে এল। অরনিকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে। তার হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছা করছে।

বৃষ্টি ব্যপারটা উপরওয়ালা একজনের উপভোগের জন্য দেন নি। একজন হলে বিষণ্ণতা পেয়ে বসে, তাই বৃষ্টি দেখতে হয় দুইজনে, ভিজতে হয় দুইজন মিলে। -অরনি, আকাশে মেঘ করেছে, দেখেছো? -কি আশ্চর্য? তোমাকে না বললাম, ৩ ঘণ্টায় কোন ফোন করবে না? আমার একটা কথা যদি তুমি শুনতে! তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, সাথে ছাতা আছে, গাড়ি আছে, বাসায় যেতে সমস্যা হবে না। -তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। আমি আসি? -ন্যাকামো করো না।

আম্মু আছে সাথে, আর এখান থেকে আমাকে চাচাতো ভাইয়ের শ্যালকের বাসায় যেতে হবে। দাওয়াত আছে। -ও! ঠিক আছে। কাল ক্যাম্পাসে দেখা হবে তাহলে। পিঠের ব্যাগটা বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।

ছাতা হারিয়েছি গত বছর। সুতরাং বৃষ্টিতে ভিজে পায়ে হেঁটেই মেসে যেতে হবে। আজ মেসে খালার ছোট মাছের তরকারি রান্না করার কথা। অরনির সাথে দেখা হলে ওকে একদিন জিজ্ঞাসা করতে হবে, ও ছোট মাছ খায় কিনা? অরনির হাতে হাত রেখে সংসদ ভবনের সামনে কিছুক্ষন হাটলে মনটা অসম্ভব ভালো হয়ে যেত। ভেজা চুলে অরনির চেহারায় যে পবিত্রতা আসে, তা বলে বুঝাতে পারব না।

কিন্তু আমি কি নিয়ে চিন্তা করছি? ৩৩ টাকায় আগামী ৩ দিন কিভাবে চলবো, সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। রাস্তার মানুষ সব বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। আমার ভিজে যাবার ভয় নেই। ভিজে যাওয়া মানুষ সামান্য বৃষ্টিতে বিচলিত হয় না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।