বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী নয়ন আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এই জবানবন্দি দেন।
মহানগর হাকিম তারেক মইনুল ইসলাম ভূঁইয়া তাঁর খাসকামরায় নয়নের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ৫ অক্টোবর নয়ন ও ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের সহকারী ফারুক হোসেনকে আট দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
ফারুক এখনো রিমান্ডে আছেন।
গতকাল নয়ন আলী তাঁর জবানবন্দিতে আদালতকে বলেন, তিনি ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মাস্টাররোলে নিয়োগ পান। তাঁর কাজ ছিল মামলার নথিপত্র আনা-নেওয়া করা। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস ও ফারুক হোসেনের আদেশে কাজ করতেন। ফারুক হোসেন সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ফখরুল ইসলামের সহকারী আইনজীবী মেহেদী হাসানের সঙ্গে পরিচয় করে দেন।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাস জানতেন, নয়ন কম্পিউটারের কাজ জানেন। এ কারণে তিনি তাঁকে দিয়ে চিঠি লেখাসহ বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো কাজ করাতেন।
নয়ন জবানবন্দিতে আরও বলেন, চেয়ারম্যানের কম্পিউটার থেকে মামলার বিভিন্ন তারিখের আদেশ, রায়ের খসড়া ফারুকের কথামতো তিনি মেহেদীকে সরবরাহ করতেন। ফারুক তাঁকে বলেছিলেন, সাকা চৌধুরীর যে আবেদন নাকচ হয়েছে, ওই আদেশসহ সব আদেশ দিতে হবে। ফারুকের কথামতো নয়ন কখনো বেঞ্চ সহকারীর কম্পিউটারে, আবার কখনো ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের বেঞ্চ সহকারীর কম্পিউটার থেকে ১০০টি আবেদন ও আদেশের কপি পেনড্রাইভে করে নিয়ে নেন।
১৯ সেপ্টেম্বর বাড়ি যাওয়ার দু-তিন দিন আগে তা ফারুককে দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য ফারুক মেহেদীর কাছে টাকা চাইলে মেহেদী বলেন, মামলার শুনানির দিন দেওয়া হবে। তখন ফারুক তাঁর নিজের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নয়নকে দেন।
নয়ন আলী আদালতকে বলেন, সাকার আইনজীবী ফখরুল ইসলামের সহকারী মেহেদীর অর্থের প্রলোভন ও প্ররোচনার ফাঁদে পড়ে তিনি ট্রাইব্যুনালে থাকা কম্পিউটার থেকে রায়ের খসড়া সরবরাহ করেন। মেহেদীই তাঁকে কাকরাইলের চেম্বারে আইনজীবী ফখরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
ফখরুল ইসলাম তাঁকে ৫০০ টাকা দেন।
জবানবন্দিতে নয়ন আরও বলেন, ‘ফখরুল ইসলাম স্যার বলেন, “নয়ন তুমি তো আমাদের অনেক উপকার করেছ”। ’ তখন মেহেদীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে তিনি একটি মোবাইল ফোন তাঁকে দেন। গ্রেপ্তারের পর ওই মোবাইল ফোন পুলিশকে দিয়েছেন নয়ন আলী।
জবানবন্দিতে নয়ন আলী বলেন, মেহেদীকে তাঁর পেনড্রাইভ থেকে রায়ের খসড়া মুছে ফেলতে বললে মেহেদী বলেন, ‘ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম স্যারের কথা ছাড়া তা করা যাবে না।
স্যার মুছতে না করেছেন। পরে আমি তাঁর চেম্বারে যাই। চেম্বারে ব্যারিস্টার ফখরুল এবং সাকা চৌধুরীর ম্যানেজার উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দুজনেই আমাকে বলেন, “বাকি অংশ এনে দিবি, নয়তো তোকে জানে মেরে ফেলব। ” সাকা চৌধুরীর ওই ম্যানেজারের সঙ্গে ফারুক হোসেনেরও ভালো সম্পর্ক আছে।
’
নয়ন বলেন, ‘মেহেদী ২২ সেপ্টেম্বর আমাকে বলেন, স্যাররা বেঞ্চ কী ডিকটেশন দিয়েছে, তা তাঁকে সরবরাহ করতে বলেন। প্রতিদিন যা লেখা হতো, তা আমি বিকেলে ব্যারিস্টার স্যারের চেম্বারে দিয়ে আসতাম। গত ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কপি সরবরাহ করি। শেষ দিন আমি রায়ের চূড়ান্ত খসড়া চাইলে ওই ফোল্ডারে পাসওয়ার্ড দেওয়া থাকায় তা খুলতে না পেরে মেহেদী স্যারকে ফোন করি। মেহেদী বলেন, হ্যাকার দিয়ে করানো যায়।
তখন আমি বলি, এটা করা ঠিক হবে না। তখন মেহদী বলেন, দরকার নেই, পরে সমস্যা হলে আমরাই ফেঁসে যাব। ’
নয়ন আলী তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘১ অক্টোবর রায় ঘোষণার আগে শুনি, রায় ফাঁস হয়ে গেছে। পরে মেহেদীকে ফোন দিয়ে বলি, এটা কী হলো। তখন মেহেদী বলে, আমিও শুনেছি।
ব্যারিস্টারের চেম্বারে গেলে মেহেদী বলেন, ভাই আমরা এই কাজ করিনি। মেহেদী তাঁকে বলেন, তবে সাকা চৌধুরী সাহেবের ম্যানেজার ও তাঁর পরিবারের লোকজন কপি নিয়ে গেছেন। তাঁরাই হয়তো অনলাইনে দিয়ে দিয়েছেন। তবে তুমি চিন্তা করো না, তাঁদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দেব। এরপর আমি চলে আসি।
’
নয়ন তাঁর জবানবন্দিতে সবশেষে বলেন, রায় ঘোষণার দিন বিকেলবেলা মেহেদী ফোন করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না করেন। আরও বলেন, তাঁকে মেরে ফেললেও যেন তাঁদের নাম প্রকাশ না করেন। তাঁরা তাঁর বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।