কমেন্টার
মানব সভ্যতার ইতিহাসে যদি পূর্ণ হিসাবে কারও নাম বিবেচনা করতে হয়, তবে একটি নাম উচ্চারণ করতে হয়, তিনি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি। ইতালীর রেনাসাসের কালজয়ী চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। । তার পুরো নাম লিওনার্দো দি সের পিয়েরো দা ভিঞ্চি। জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ ই এপ্রিল,ইতালিতে।
লিওনার্দোকে পৃথিবীর বেশিরভাগই মানুষই চেনে শুধুমাত্র "মোনালিসার" কারণে। এ ছাড়া তার ড্রেফাস ম্যাডোনা, দ্য ক্যাপটিজম অব খ্রিস্ট, দ্য ম্যাডোনা অব দ্য কারনেশন, বেনোইস ম্যাডোনা, দ্য অ্যাডোরেশন অব দ্য মেজাই, লেডি ইউথ অ্যান আরমাইন ও দ্য ব্যাটল অব আনসিয়ারির মতো অনেক চিত্রকর্ম রয়েছে। কিন্তু তিনি ছিলেন একাধারে ভাস্কর,স্তপতি,অংকশাস্ত্রবিদ,প্রকৃতি বিজ্ঞানী,দার্শনিক,সংগীতজ্ঞ,সমর যন্ত্রশিল্পী ।
তার সৃষ্ট চিত্রকর্ম মোনালিসার মতৈ তিনি নিজেও কম রহস্যময় নন।
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির জন্ম এক কুমারী নারীর গর্ভে।
তার বাবা পিয়েরো এন্টোনিও দ্য ভিঞ্চি পেশায় ছিলেন উকিল।
ভিঞ্চি শৈশব থেকেই প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। গনিতে তার এতোটাই দক্ষতা ছিল যে , শিক্ষকরা পর্যন্ত কখনো কখনো বিভ্রান্ত হয়ে যেতো তাকে পড়াতে গিয়ে। তার প্রশ্নের পর প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে শিক্ষকরা ক্লান্ত হয়ে যেতো। শুধুমাত্র গনিতই নয়, সংগীতেও তার আকর্ষণ ছিল।
তার কন্ঠস্বর ছিল সুমিষ্ট। পরবর্তীকালে যখন তিনি বাঁশি বাজাতেন এক স্বর্গীয় সুষমায় ভরে উঠত সমস্ত পরিমণ্ডল।
তখনকার সময়ে আর্টিস্টকে তেমন সম্মান দিতো না মানুষেরা। তাছাড়া এতে ছেলের কোনো প্রতিভা আছে কিনা সে বিষয়েও পিয়েরো নিশ্চিত ছিলেন না। তাই লিওনার্দো যখন ছবি আঁকা শেখার অনুরোধ জানাল, সরাসরি তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলেন।
লিওনার্দো উপলব্ধি করতে পারলেন বাবার অনুমতি ছাড়া ছবি আঁকা সম্ভব নয়। তাই একটি বুদ্ধি করলেন। একটা বড় কাঠের পাটাতনের ওপর গুহার ছবি আঁকলেন। গুহার মধ্যে আধো আলো আধো ছায়ার এক অপার্থিব পরিবেশ। তার সামনে এক ভয়ঙ্কর ড্রাগনের ছবি, তার মাথায় শিং।
চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলছে। ভয়ঙ্কর হিংস্র দাঁতগুলো যেন ছুরির ফলা, নাক দিয়ে বেরিয়ে আসছে আগুনের লেলিহান শিখা।
ছবি আঁকা শেষ হতেই ঘরের মধ্যে ছবিটাকে রেখে সব জানালা বন্ধ করে দিলেন। পিয়েরো কিছুই জানেন না। ঘরে ঢোকামাত্রই সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে বেরিয়ে এলেন।
পিয়েরো শান্ত হতেই লিওনার্দো গম্ভীর গলায় বললেন, আমি মনে হয় আমার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পেরেছি।
পিয়েরো তখন আর কোন প্রতিবাদ করেননি। । ভিঞ্চিকে ছবি আকা শেখার অনুমতি দিলেন। সেই সময় ফ্লোরেন্সের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলেন ভেরক্কিয়ো।
চিত্রশিক্ষার জন্য তার স্কুলে গেলেন লিওনার্দো। তখন তার বয়স আঠারো বছর।
এই ভেরক্কিয়ো ছিলেন ভিঞ্চির গুরু। তার কাছ থেকেই শিক্ষা নিয়েছিলেন কিভাবে মানব জীবনের গভীরে ডুব দিয়ে অপার রহস্যময়তাকে ফুটিয়ে তুলতে হয় রঙ তুলিতে। দু'বছর পর শিক্ষাশেষে ভিঞ্চি সিদ্ভান্ত নেন তিনি স্বাধীনভাবে শিল্পচর্চা করবেন।
ফ্লোরেন্সে শিল্পীদের একটি সংস্থায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন।
চিত্রকর্মের পাশাপাশি তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন। প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যে ঘটেছিল বিজ্ঞানী আর শিল্পীর এক আশ্চর্য সংমিশ্রণ। এভাবে তিনি ১০ টি বছর কাটিয়ে দেন ফ্লোরেন্সে। এসময় তার অংকিত কিছু ছবি হলো- এনোনসেশন,মেরি ও যিশুর দুটি ছবি, এক রমনীয় প্রতিকৃতি।
(এই ছবিগুলো ছিল প্রচলিত শিল্পরীতির থেক আলাদা) । ছবির মধ্যে প্রথম শেডের ব্যাবহয়ার আরম্ভ করেন ভিঞ্চিই।
১৪৮২ সালে ভিঞ্চি চলে আসেন মিলানে। সেই সময় ফ্লোরেন্সের ডিউকের প্রাসাদে এক সঙ্গীত অনুষ্ঠনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে লিওনার্দো তার বাঁশি বাজালেন।
তার অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভায় মুগ্ধ হলেন ডিউক। তাকে নিজের প্রাসাদে আমন্ত্রণ করলেন। কয়েক দিনের পরিচয়েই ডিউক উপলব্ধি করতে পারলেন কী অসাধারণ প্রতিভাধর পুরুষ এই লিওনার্দো। তিনিই তাকে মিলানের অধিপতি লুডোভিকোর কাছে পত্র লিখতে অনুরোধ করলেন। লিওনার্দো লিখলেন তার সেই বিখ্যাত পত্র।
এতে তিনি লিখলেন সামরিক প্রয়োজনে ৯টি মৌলিক সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কারের কথা।
মিলানের অধিপতি আমন্ত্রণ করে নিয়ে এলেন লিওনার্দোকে। প্রথম সাক্ষাতেই মুগ্ধ হলেন লুডোভিকো। লিওনার্দোকে নিজের রাজদরবারের অন্যতম প্রধান সভাসদ করে নিলেন। রাজপ্রাসাদেই তার থাকার আয়োজন করা হলো।
মিলানে থাকা অবস্থায় ভিঞ্চির প্রতিভার পূর্ণ বিকশিত হয়েছিল। লিওনার্দো তখন কল্পনা করতেন একটি আদর্শ শহরের। যেখানে মানুষের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা থাকবে, একদিকে মানুষ,অন্যদিকে যানবাহহ। শহরটি হবে ছোট। ৫ হাজারের বেশি বাড়ি থাকবে না।
শহরের কোন নর্দমা বাইরে বের হবে না। প্রতিটি নর্দমা হবে মাটির নিচে। সেখান দিয়ে সব আবর্জনা শহরের বাইরে নদীতে গিয়ে পড়বে।
ভিঞ্চির এই আদর্শ শহরের পরিকল্পনা সর্বকালের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু ডিউক তার এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে ব্যররথ হন।
এসব কাজের অবসরে তিনি চর্চা করতেন জ্যামিতিক, জ্যোতির্বিদ্যা, অঙ্ক এবং এসব ক্ষেত্রে বহু মৌলিক চিন্তার প্রকাশ ঘটেছিল। এসব বৈজ্ঞানিক কাজকর্মের মধ্যেই তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন লুডোভিকোর স্বার্থগত পিতার এক মূর্তি স্থাপন করার। সমস্ত পরিকল্পনা সমাপ্ত করার পর তিনি শুরু করলেন সেই অভূতপূর্ব বিশাল মূর্তি। উচ্চতায় ২৬ ফুট। একটি ঘোড়ার ওপর বসে আছেন স্বর্গত রাজা।
মূর্তিটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল আট বছর। এই সময় তিনি ম্যাডোনা নামে একটি ছবিও আঁকেন। এবার তাকে নতুন একটা কাজের ভার দিলেন লুডোভিকো। যিশুর জীবনের কোনো বিষয় নিয়ে ছবি আঁকতে হবে।
শুরু হলো লিওনার্দোর ভাবনা।
কী ছবি আঁকবেন? দীর্ঘ ভাবনার পর স্থির করলেন যিশুর শেষ ভোজের ছবি আঁকবেন। চিত্রশিল্পের জগতে লাস্ট সাপার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি। ‘যিশু তার বারোজন শিষ্যকে নিয়ে শেষ ভোজে বসেছেন। তার দুপাশে ছয়জন ছয়জন করে শিষ্য। সামনে প্রশস্ত টেবিল।
পেছনে জানালা দিয়ে মৃদু আলো এসে পড়েছে। যিশু বলেছেন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাকে ধরে দেবে। শিষ্যরা চঞ্চল হয়ে উঠেছে। তারা সকলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে তাদের মধ্যে কে বিশ্বাসঘাতকতা করবে’।
ছবিটি সান্তামারিয়া কনভেন্টের এক দেয়ালে আঁকা হয়েছিল।
দি লাস্ট সাপার লিওনার্দোর এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। সমালোচকদের মতে, এখানে লিওনার্দোর মানসিকতা, তার ভাবনা কল্পনার সাথে মিলিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। লাস্ট সাপার শুধু যে একটি সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্র তাই নয়, মানুষের শিল্প প্রতিভা যে কোনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এ তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
রথমে তিনি এঁকেছিলেন যিশুর বারোজন শিষ্যর মুখ। এই শিষ্যদের মুখে ফুটে উঠেছিল বিচিত্র অনুভূতি।
পরিশেষে তিনি আঁকলেন যিশুর মুখ। শোনা যায় কেমন হবে যিশুর মুখ, দীর্ঘ এক বছর তা স্থির করতে পারেননি। অবশেষে আঁকলেন যিশুর মুখ। এ মুখে ভয় নেই, ঘৃণা নেই, উদ্বেগ নেই।
লাস্ট সাপার ছাড়াও তার আরো দুটো তৈলচিত্র ছিল ।
ভার্জিন অফ দ্য রক্স এবং মেসিলিয়া।
১৫০০ সালের ভিঞ্চি আবার ফিরে আসেন ফ্লোরেন্সে। এসময় সিজারের অনুরোধে তিনি মধ্য ইতালির ছয়টি মানচিত্র তৈরী করেন। সেই মানচিত্র আজও উইন্ডসর লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।
কিছুদিন পরই ভিঞ্চি আকেন জগত বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসা।
কে এই মোনালিসা এ বিষয়ে ভিন্নমত আছে। কয়েকজনের অভিমত মোনালিসার প্রকৃত নাম ছিল লিজা। তিনি ছিলেন ফ্লোরেন্সের এক অভিজাত ব্যক্তির স্ত্রী। ভিন্ন মত অনুসারে মোনালিসা ছিলেন জিয়োকোন্ত নামে এক ধনী বৃদ্ধের তৃতীয় পত্নী। নাম মাদোনা এলিজাবেথ।
দিনের পর দিন অসংখ্য ভঙ্গিতে মুখের ছবি এঁকেছেন। কিন্তু কোনো ছবিই তার মনকে ভরিয়ে তুলতে পারেনি। একদিন লিওনার্দোর চোখে পড়ল এলিজাবেথের ঠোঁটের কোনায় ফুটে উঠেছে বিচিত্র এক হাসি। চমকে উঠলেন লিওনার্দো। এই হাসির জন্যই যেন তিনি তিন বছর অপেক্ষা করেছিলেন।
মুহূর্তে তুলির টানে ফুটিয়ে তুললেন সেই সহাস্যমণ্ডিত কালজয়ী হাসি। "মোনালিসা" তৈরির সময় সাদা ক্যানভাসের উপরে বিভিন্ন স্তর তৈরির জটিল পদ্ধতি ব্যবহার করেন লিওনার্দো । আর এতে তিনি এতটাই দক্ষ আর সফল ছিলেন যে পরবর্তিতে আর কেউই এই পদ্ধতিতে সমানভাবে সফল হয়নি । বিভিন্ন অনুপাতের মিশ্রনের তৈলাক্ত স্তর ব্যবহার করে কাজটি করেন লিওনার্দো । এতে বিভিন্ন স্তরে আলাদা আলাদা ভাবে রং মিশিয়ে তিনি ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেন "মোনালিসা" এর ।
ভিঞ্চি তার মডেলদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য অর্থাৎ কে, কবে, কোথায় তার ছবির মডেল হয়েছেন তার নোটবুকে রাখতেন । কিন্তু মোনালিসার মডেলের সম্পর্কে কোন তথ্য তার নোটবুকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু কেন ? তাহলে কে তার চিত্রকর্মের মডেল হয়েছিল ?
ইতালির একজন গবেষক দাবি করেছেন, রেনেসাঁ যুগের শিল্পী লেওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’র চোখে একাধিক বর্ণ লেখা রয়েছে । মোনালিসার দুই চোখে কয়েকটি বর্ণ রয়েছে । এখান থেকে ওই ছবিটির মডেল কে ছিলেন, তা জানা সম্ভব হতে পারে ।
ইতালির ফ্লোরেন্সের এক বণিকের স্ত্রী ছিলেন সেই মডেল । যাঁর নাম ছিল লিসা গেরারদিনি । কিন্তু ইতালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাপতি ভিনসেতি বলছেন, মোনালিসার ডান চোখের মণিতে ‘এল’, ‘ভি’ বর্ণ দুটি লেখা রয়েছে; যা লেওনার্দোর নামের আদ্যক্ষর । আর বাঁ চোখে রয়েছে ‘বি’ অথবা ‘এস’ বর্ণ বা ‘সি’, ‘ই’ বর্ণদ্বয় । এ দুটি বর্ণও কোনো অর্থ বহন করে এবং সম্ভবত তা এই চিত্রকর্মটির মডেলের পরিচয় বহন করছে ।
তাঁর মতে, ফ্লোরেন্সের বণিকের স্ত্রী নন, বরং মোনালিসার মডেল ছিলেন অন্য কোনো নারী । কারণ লেওনার্দো ছবিটি ইতালির মিলান শহরে বসে এঁকেছিলেন ।
জীবনের শেষ দিকে এসে ক্রমশই তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ছিল। ডান হাত অকর্মণ্য হয়ে গিয়েছিল। বা হাতেই ছবি আকতেন।
তখন তিনি ঈশ্বরের প্রতি অনুরক্ত হন। ১৫১৯ সালের ২ মে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এই কালজয়ী শিল্পী।
ভিঞ্চির মৃত্যুর পরে প্রায় ২০০ বছর পরে খুজে পাওয়া যান পাচ হাজার পাতার এক পান্ডুলিপি যা তার নিজের হাতে লিখা। এটি লিখা হয়েছিলে ইতালীয় ভাষায় এবং সমস্ত পান্ডুলিপি লেখা হয়েছিল উলটো করে। ফলে সোজাসুজি পড়া যেতো না... পড়তে হতো আয়নার মাধয়মে।
এছাড়াও নানান কোড ব্যবহার করে লেখাকে আরো দুর্বোধ্য করে দিতেন তিনি।
বিখ্যাত নোটবুকটি থেকে অনেক তাকলাগানো তথ্য জানা গেছে ভিঞ্চি সম্পর্কে। ১৬ শতকের এই চিত্রশিল্পী,ভাস্কর যে নিজের সময়ের চেয়ে কতোটা এগিয়ে ছিলেন তা অনুধাবন করা যায় নোটবুকটি দেখলে।
তার এই পাণ্ডুলিপিতে অসংখ্য বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। চীন উপকথা, মধ্যযুগীয় দর্শন, সমুদ্রস্রোতের কারণ, বাতাসের গতি, তার চাপ, পৃথিবীর ওজন।
নিশাচর পাখির গতিপ্রকৃতি। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব। উড়ন্ত যান। সাঁতার কাটার যন্ত্র। আলোর প্রকৃতি, যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রের নকশা।
সুগদ্ধ সেন্ট তৈরির ফর্মুলা। বিভিন্ন পাখি জন্তু-জানোয়ারের আচার-আচরণ, বিভিন্ন গাণিতিক সূত্র।
লিওনার্দো আলোকবিজ্ঞান (Optics), বলবিজ্ঞান (Mechanics), অঙ্গ-ব্যবচ্ছেদ বিজ্ঞান (Anatomy), ভূতত্ত্বে (Geology) বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একধরনের প্লাস্টিক সৃষ্টি করেছিলেন, একধরনের ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন, কন্টাক্ট লেন্স এবং স্টীম ইঞ্জিন নিয়ে লিখে গেছেন, আকাশ কেন নীল তা ব্যাখ্যা করেছেন, এবং শরীরের প্রতিনিধিত্ব করা ভিজ্যুয়াল টেকনিক আবিষ্কার করে গেছেন যা আজকের দিনে শুধুমাত্র CAT স্ক্যানের মাধ্যমেই দেখতে পাওয়া যায়।
যক্ষের ধনের মত আটকে না রেখে কেন যে তিনি তার নোটবুক বই আকারে বের করেননি তা চিরকাল এক রহস্যই রয়ে গেছে।
তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা এত গভীর ছিল যে গোপনে বেশকিছু মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করে দেখেছিলেন দেহের গঠন। তার এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বেশ কিছু শারীরতত্ত্বের ছবি এঁকেছিলেন। সেই ছবি এত নির্ভুল ছিল, পরবর্তীকালে চিকিৎসকরা বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। আধুনিক উড়োজাহাজের তিনিই প্রথম নকশা আঁকেন। তার পাণ্ডুলিপির এক জায়গায় লিখেছেন একদিন মানুষ আকাশে উড়বেই।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি একটা রেনেসাঁ এনেছিলেন বলা যায়। আবার তার কাজে অবহেলার ছাপও স্পষ্ট। কিছু ইতিহাসবিদের তো বদ্ধমূল ধারণা তিনি একধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগতেন। যেটার কারণে তিনি অনেক কাজই অর্ধেক করে রেখে দিতেন। এর প্রভাব দেখা যায় তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসাতে।
তিনি মোনালিসার চোখে ভ্রূ দিতেও ভুলে গেছিলেন।
যতই আমরা বলি না কেন যে ভিঞ্চির মানসিক বিশৃঙ্খলা ছিল। তবে তার বুদ্ধিও নেহাত কম ছিল না। তার এক অদ্ভুত রোগ ছিল। আর যেটাকে বলা হয় ডিসলেসিয়া।
এ রোগে আক্রান্তরা সব কথাই লিখেন উল্টো করে। অবশ্য এতে সুবিধাও আছে, অনেক চিন্তাভাবনা কেউ চুরি করতে পারবে না।
মোনালিসার ঠোঁট আঁকতেই নাকি ভিঞ্চির লেগেছিল পাক্কা ১০ বছর।
লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আরেকটি অদ্ভুত শখ ছিল, সেটা হল খাঁচাভর্তি পাখি কেনা। আর তার চেয়েও মজার বিষয় হল পাখিগুলো তিনি কিনতেন এ জন্যই যেন তিনি সেগুলো মুক্ত করে দিতে পারেন।
তার আকার ছবিগুলো সম্পর্কে আর জানতে ব্লগার নাহিদ মাহমুদের পোস্টটি দেখতে পারেন- লিওনার্দো দা ভিঞ্চি
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।