আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্যা লাস্ট সাপার বাই গ্র্যান্ড মাস্টার লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি


ছবিটির প্রাথমিক বিষয়বস্তু হলেন যিশুখ্রিষ্ট ও তাঁর বারোজন শিষ্য একত্রে নৈশভোজ সারছেন। খ্রিষ্টীয় ধারণানুযায়ী যিশুখ্রিষ্ট তাঁর বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মৃত্যুর আগে যে শেষ নৈশভোজ সারেন তাই যিশুর শেষ নৈশভোজ নামে পরিচিত। এই ভোজে যিশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে নিয়ে মদ পান করেন ও রুটি খান। নৈশভোজে যিশু ঘোষণা করেন এই শিষ্যদেরই একজন পরদিন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। আলোচ্য চিত্রে ফুটে ওঠেছে যিশু তার শিষ্যদেরকে এই কথাটি বলছেন আর তাঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে কে সে বিশ্বাসঘাতক।

ছবিতে যিশুর বারোজন শিষ্যকে তিনজনের একেকটা দলে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়েছে আর যিশুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন যিশু সম্পূর্ণ মাঝখানে আলাদাভাবে উপস্থাপিত হয়েছেন। এই চিত্রটি তেরোজন পুরুষের একটি চিত্রকর্ম। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি এ ছবিতে যিশুর মুখ ফুটিয়ে তোলার জন্য দীর্ঘ সময় নিয়েছিলেন বলে শোনা যায়, যাতে যিশুর মুখে অভিব্যক্তিহীন একটা আবহ ফুটিয়ে তোলা যায়। বার্থুলেমু, জেমস এবং এন্ড্রু তিনজনই বিস্মিত জুডাস, পিটার,জনঃ জুডাস পড়ে আছে নীল আর সবুজ রঙ এর কাপড় তার মুখে বিস্ময় ফঁউটে উঠেছে তার পরিকল্পনা ফাস হয়ে যাওয়ায়, সে একটা ব্যাগ ধরে রেখেছে বলা হয় এটা তাকে যীশুকে হত্যার উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছিলো, ১২ জনের মধ্যে তার হাতটাই টেবিলে রাখা হয়তো ভিঞ্চি তাকে আলাদা করে বোঝানোর জন্যই এভাবে একেছিলেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার হাতের ধাক্কায় লবনের বাটি পড়ে যাচ্ছে--এটা হয়তো ভিঞ্চি এ কারনে একেছিলেন , যেনো বোঝা যায় যা তিনি তার প্রভুর সাথে বেঈমানি করেছেন ইংরেজীতে বলে betray the salt meaning to betray one's Master. পিটার কে রাগান্বিত দেখা যাচ্ছে , তার হাতে একটি ছুড়ি যেটা যীশুর উলটো দিকে নির্দেশ করে।

মূলত পিটার ছিলো পাপিষ্ঠা কিন্তু পরবর্তীতে ঐ একই পিটারই তিনবার নির্লজ্জভাবে তার নেতাকে অস্বীকার করে, যখন যীশু শত্রুদ্বারা আক্রান্ত হয়। এবং জনকে দেখা যাছে হতভম্ব অবস্থায়, প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাবার উপক্রম। পরের গ্রুপে আছে থমাস জেমস এবং ফিলিপঃ থমাসের মন খারাপ দেখা যাচ্ছে, জেমস হতবাক , তার হাত দুটি শূন্যে, ফিলিপ কে দেখে মনে হচ্ছে সে কিছু একটার ব্যাখ্যা চাইছে। একদম শেষে ম্যাথিউ, জুড এবং সায়মনঃ ম্যাথিউ এবং জুডকে দেখা যাচ্ছে সায়মনের দিকে চেয়ে কিছু একটা জানতে চাচ্ছিলেন, হতে পারে তাতক্ষনিক প্রতিক্রিয়া কী এ ব্যাপারে তারা উটতসুক। ইসলাম ধর্মে কি আছে? সূরা মায়েদায় আল্লাহ তাআলা সম্পূর্ণ লাস্ট সাপারের বর্ননা করে গেছেন।

সূরা মায়েদা মানে হচ্ছে খাদ্যে পরিপূর্ন টেবিল। সূরা মায়েদার ৮২৫ আয়াতে বলেছেন ঃ দেখ ! শিষ্যরা বলেছিলো, "হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা ! তোমার প্রভু কি স্বর্গ থেকে আমাদের জন্য [খাদ্য পরিপূর্ণ] একটি টেবিল প্রেরণ করতে পারেন ?" ঈসা বললো, "যদি তোমরা মুমিন হও, আল্লাহ্‌কে ভয় কর" ৮২৫। তারা বলেছিলো, "আমরা কেবলমাত্র উহা থেকে আহার গ্রহণ করবো এবং আমাদের হৃদয়কে পরিতৃপ্ত করবো এবং আমরা জানতে চাই যে, তুমি আমাদের প্রকৃতই সত্য বলেছ। এবং আমরা এই অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হতে চাই। মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিলো, "হে আল্লাহ্‌, আমাদের প্রভু ! আমাদের জন্য স্বর্গ থেকে খাদ্যভর্তি একটি টেবিল প্রেরণ কর ৮২৬।

আমাদের প্রথম জন থেকে শেষ জনের পর্যন্ত - ইহা হবে আনুষ্ঠানিক আনন্দোৎসব এবং তোমার নিকট থেকে নিদর্শন এবং আমাদের জীবিকা দান কর ৮২৭। নিশ্চয়ই তুমি [আমাদের প্রয়োজনীয়] সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা। " আল্লাহ্‌ বলেছিলেন, "আমি তোমাদের নিকট ইহা অবশ্যই প্রেরণ করব। কিন্তু এর পর তোমাদের মধ্যে কেহ কুফরী করলে, আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যা বিশ্বজগতে অপর কাউকে দিব না" ৮২৮। যাদের আল্লাহ্‌ উপরে বিশ্বাসের ভিত্তি নড়বড়ে তারাই মোজেযাতে অধিক আগ্রহী।

মোজেযা আল্লাহ্‌র ইচ্ছার প্রতীক। সুতরাং আল্লাহ্‌র ইচ্ছা ব্যতীত কেউ যদি অলৌকক ক্রিয়া কর্ম দেখে নিজের খেয়াল বা ইচ্ছার পূরণ করতে চায়, তবে তার নিজস্ব দায়-দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায়। মোজেযা বা অলৌকিক ক্রিয়া কর্মের দর্শনের পরিবর্তে তারা ঈমান আনয়ন করবে এরূপ অভিমত ব্যক্ত করার পরে তারা যদি ঈমান না আনে, আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে মিথ্যার অবতারণা করে বা মিথ্যা উপাস্যের ইবাদত করে, তবে তার শাস্তি সাধারণ পাপের শাস্তির অধিক হবে। আল্লাহ তাআলা আগেই এটা ঈসা আঃ কে অবগত করেন যে ঐ টেবিলের এক জনই ঈসাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে, পরবর্তীতে অনেক ঘটনার পর ঈসা আঃ যখন পালাতে গিয়ে একটা কক্ষে বন্দী হয়ে যান, তখন সেই জুডাস, কক্ষে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে আসতে চান, কিন্তু আল্লাহ তাআলার অশেষ কুদরতে ঈসা আঃ আল্লাহ এর কাছে ফিরে যান আর ঐ জুডাসের চেহারা ঈসা আঃ এর মতো করে দেন এবং পরে তাকেই ঈসা ভেবে শূলে চড়ানো হয়। তবে দুই ধর্মেই পুনুরুত্থান বা রিসারেকশানের কথা বলা আছে।

টেবিলে যে নারীকে দেখা যাচ্ছে (একমাত্র) সে হচ্ছে মেগডালিন যিনি যীশু মারা যাবার পর তাকে পুনরায় দেখেছিলেন (খৃস্ট ধর্মমতে)। এবং পুন্রুত্থানের কথা যীশু তাকেই বলে গেছেন। অন্যদিকে ইসলাম ধর্মে এটা উল্লেখ নেই, কিন্তু বলা আছে যখন ইসলাম ধর্ম থাকবে ধ্বংসের পথে, তখন ঈসা আঃ আবার আসবেন এসে পুনরায় ইসলাম প্রতিঠিত করবেন । তারপর তাঁর মৃত্যু হবে, স্বাভাবিক ভাবে। কারন আল্লাহ পাক বলেন (কোন সূরায় মনে নাই) " প্রত্যেক প্রানীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে"।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.