সব কিছুই যখন ধীরে ধীরে দুর্মূল্য হয়ে উঠছে তখন সস্তা হয়ে উঠেছে আমজনতার জীবন। যত রকম সংকট আছে সব সংকটের ঝড় যায় তাদের জানের ওপর দিয়ে। ইদানীং রাজনৈতিক সংকট সবচেয়ে আলোচিত। এই সংকটেরও বেড়াজালে পড়েছে সাধারণ মানুষের জীবন। আপনি কচুর লতি কিনতে বাজারে যাবেন? রাস্তায় ককটেল ফুটবে।
কচুর লতি দূরে থাক কানের লতি নিয়ে অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারলেই ভাববেন ভাগ্যবানদের এলিট ক্লাসে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। অফিসে যাবেন? হঠাৎ বাসে লাঠিসোঠা নিয়ে আক্রমণ। ঘটনা কিছুই না, লাইভ পিকেটিং চলছে। অফিস গোল্লায় যাক, প্রাণটা হাতে নিয়ে ঘরে ফিরতে পারলেই বুঝবেন, আহা বড় বাঁচা বেঁচে গেছি!
কথা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কেন প্রাণ নিয়ে সংকটে পড়বে? ব্যাপারটা নিয়ে একটু মাথা ঘামানো যাক। মানুষের প্রাণের মায়া বড় মায়া।
এই মায়াটাকে পুঁজি করেই এই সংকট ঘোরপাক খাচ্ছে। প্রাণের মায়া একবার ত্যাগ করতে পারলেই এই সংকট নিরসন হবে। ধরা যাক, এমন হলো কারও প্রাণের মায়া নেই। তখন এই সংকটকালীন মুহূর্তগুলো কেমন হবে পরে একবার ভেবে দেখুন। আপনি বরাবরের মতোই কচুর লতি কিনতে বাজারে রওনা করেছেন হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ।
আপনি ব্যাপক বিরক্ত হয়ে দৌড়ে গিয়ে ককটেল নিক্ষেপকারীকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, ওই মিয়া হাতের নিশানা এত খারাপ ক্যান? এই 'সই' নিয়া ককটেল মারার পেশায় নামছেন লজ্জা করে না?
এর উত্তরে ককটেল নিক্ষেপকারী কী বলবে সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে সত্যিই এভাবে যদি পথচারীরা ককটেল নিক্ষেপকারীদের ধরতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই আমরা একদিন এর উত্তরটা জানতে পারব।
দ্বিতীয় ঘটনায় আসা যাক। আপনি অফিসে রওনা করেছেন। বাসে চড়লেন হঠাৎ লাইভ পিকেটিং।
গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর পুরোদমে চলছে। আপনি ধীরে সুস্থে পিকেটার ভাইয়ের কাছে গেলেন। আপনাদের কথোপকথন-
আপনি : এঙ্কিউজ মি, পিকেটার ভাই, আপনার হাতে তো অনেক জোর দেখছি, আসেন পাঞ্জা লড়ি। আপনি যদি মোলায়েম করে এই প্রশ্নটা করতে পারেন তাহলে পিকেটার ভাই হয়তো তব্দা খেয়ে আপনার দিকে তাকাবে। তার কাছ থেকে উত্তর আশা করা যায় না।
এসব প্রাণের মায়া ত্যাগ করে হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু সম্ভব কিছু করায় মানুষের বরাবরই অনীহা। মানুষ চিরকালই অসম্ভবকে সম্ভব করতে চায়। চলমান সংকটেও এই অসম্ভবের স্বাদ আছে। এ কারণে রাজনৈতিক খেলার মাঠ জমে উঠেছে।
কিন্তু ফাঁকতালে ফাটা বাঁশের চিপায় পড়ে গেছে আমজনতা। যদিও আমজনতার নাম ভাঙিয়ে উল্টো আমজনতাকেই সংকটের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে, তাতে অবশ্য কিছু বলার নেই। তবে করার আছে অনেক কিছু। কারণ সংকট-সংকট খেলায় দর্শক সারিতে চিরকালই বিরস বদনে বসে থাকে এই আমজনতারাই। তাদের স্বাভাবিক জীবনটাকে নিয়ে সংকট-সংকট খেলাটা খুব বেশি দিন চলতে থাকলে এক সময় বিরক্ত হয়ে দর্শক সারি থেকে তারা সরে সোজা যার যার বাসায় হাঁটা দিতে পারে।
তখন গ্যালারি মানে রাজপথ থাকবে শূন্য। আর যে খেলায় দর্শক নেই, সে খেলাতে প্রাণ নেই। দর্শক সব চলে গেলে তখন কিন্তু পক্ষদল আর
বিপক্ষদল একজন আরেকজনের 'দর্শক' ভাবা ছাড়া গতি থাকবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।