আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা, যাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা। মুজিকাকে বলা হয় দ্য ওয়ার্ল্ড পুয়োরেস্ট প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, জ্ঞান আর ফিলোসফি জানার পর মনে হল, তিনিই বিশ্বের সবচেয়ে ধনি প্রেসিডেন্ট। অন্তত মেধা, প্রজ্ঞা, মনন, জ্ঞান আর দূরদর্শীতায় মুজিকাকে সবচেয়ে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হয়েছে আমার কাছে। তিনি যৌবনে ছিলেন একজন গেরিলা।

একজন সত্যিকারের যোদ্ধা, একজন সমরনেতা এবং একজন আধুনিক রাষ্ট্রনেতা হলেন আজকের উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকা। জোসো মুজিকা বসবাস করেন তাঁর খামার বাড়িতে। দুইজন পুলিশ আর তাঁর তিন'পা ওয়ালা কুকুর মানুয়েলা থাকেন বাড়ির নিরাপত্তায়। মুজিকা থাকেন তাঁর স্ত্রী'র খামার বাড়িতে রাজধানী মন্টেভিডিও'র বাইরের এক পাহাড়ি কৃষি জনপদে। সেখানে তিনি ও তাঁর স্ত্রী মিলে ফুলের চাষ করেন।

পরিবার চলে স্ত্রী'র আয় থেকে। আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুজিকা যে বেতন পান, তার অন্তত শতকরা ৯০ ভাগ (যা প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলারের সমান) তিনি বিভিন্ন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানে ও গরিব মানুষের মধ্যে দান করেন। কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে উদ্ধুদ্ধ হয়ে তিনি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য গেরিলা হিসেবে যুদ্ধ করেন। উরুগুয়ের টুপামারোস গেরিলা হিসেবে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত যাদের সবাই চিনতো। মুজিকা নিজে সেই গেরিলা যুদ্ধে আহত হন।

তাঁর শরীরে ছয়টি গুলি লাগে। ১৪ বছর তিনি উরুগুয়ের জেলে বন্দি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসলে জেল মুক্তি পান মুজিকা। মুজিকা বলেন, একজন আমেরিকান সারাদিন যা খায়, সেই পরিমাণ খাবার যদি পৃথিবীর সবাই ভোগ করতো তাহলে, পৃথিবীর মতো আরো তিনটি এক্সট্রা প্লানেট আমাদের দরকার হত। জার্মানিতে মানুষের যতো গাড়ি আছে, গোটা ভারতের সকল নাগরিকের যদি সে পরিমাণ গাড়ি থাকতো, তাহলে আমাদের নিঃশ্বাস নেবার জন্য আর কতোটুকু অক্সিজেন অবশিষ্ট থাকতো সেটাই আজ বড় প্রশ্ন? তিনি বলেন, ধনিদের অতিরিক্ত ভোগের কারণেই পৃথিবী সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দূষিত হচ্ছে।

উরুগুয়ের আইন অনুসারে, ৭৭ বছরের উর্ধ্ব বয়সি কেউ আর নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে না। তাই ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুজিকা আর প্রতিদ্বন্দিতা করবেন না। তিনি আগামী বছর রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন। তাঁর বর্তমান বয়স ৭৮ বছর। ১৯৩৫ সালের ২০ মে জোসে মুজিকা জন্মগ্রহন করেন।

তাঁর বাবা দিমিত্রিও মুজিকা ছিলেন একজন কৃষক। আর মা লুসি করডানো একজন ইতালিয় মাইগ্র্যান্ট। মুজিকা'র বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর, তখন তাঁর বাবা মারা যান। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সে মুজিকা বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে সাইকেল চালিয়ে অনেক পুরস্কার জেতেন। কিউবান বিপ্লবের প্রতি সারা দিয়ে তিনি ১৯৬০ সালে উরুগুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে টুপামারোস গেরিলা মুভমেন্টে যোগ দেন।

১৯৬৯ সালে মন্টেভিডিও'র কাছে পান্ডো শহরের দখল নিতে তিনি সফল গেরিলা অভিযান পরিচালনা করেন। পরে তাঁর জর্জ পাসেকো আরেকো'র সাংবিধানিক বিধিনিষেধের আওতায় জেল হয়। ১৯৭১ সালে তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে পুন্টা ক্যারেটাস জেলখানা থেকে পালিয়ে যান। কিন্তু ১৯৭২ সালে তিনি আবার পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। ১৯৭৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাঁকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে আর্মি জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৮৫ সালে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সাধারণ নির্বাচনে একজন ডেপুটি হিসেবে নির্বাচিত হন। আর ১৯৯৯ সালে তিনি নির্বাচিত হন সিনেটর হিসেবে। ২০০৪ সালে তিনি পুনরায় সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের ১ লা মার্চ মুজিকা উরুগুয়ের কৃষিমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

আর ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। উরুগুয়ের সবাই তাঁকে ডাকেন পেপে মুজিকা। মুজিকার স্ত্রী লুসিয়া টোপোলনাস্কিও একজন টুপামারো গেরিলা সদস্য। লুসিয়া বর্তমানে উরুগুয়ের একজন নির্বাচিত সিনেটর। প্রেসিডেন্ট মুজিকা সরকার প্রদত্ত লাক্সারি বাড়িতে না থেকে নিজের স্ত্রী'র খামার বাড়িতে খুব সাদাসিদে জীবনযাপন করেন।

যাকে সবাই বলে গরিব প্রেসিডেন্ট। কিন্তু মুজিকা বলেন, এটা তাঁর সহজ সরল জীবনের মতোই সাধারণ। এটাই তাঁর জীবন। এভাবে থাকতেই তিনি পছন্দ করেন। সবাই যখন তাঁকে গরিব বলেন, জবাবে পেপে বলেন, তারাই আসলে গরিব যারা তাঁকে গরিব বলতে চান।

তিনি বলেন, গরিব হল তারা, যাদের খুব বেশি বেশি সবকিছু দরকার। কারণ, যাদের সবকিছু খুব বেশি বেশি লাগে, তারা কখনোই জীবনের প্রতি স্যাটিসফাই হয় না। আই অ্যাম ফ্রুগাল, নট পুয়োর। আমি একজন ফ্রুগাল, আলোকিত সুইটকেসের মতোই আমি একজন ফ্রুগাল। যতোটুকু না হলেই জীবন চলে না, ঠিক ততোটুকু নিয়েই আমি সন্তুষ্ট।

বিলাসি জীবনযাপন আমার একদমই পছন্দ না। আমার সাধারণ জীবনযাপনের সুবিধা হল, আমি কাজ করার জন্য প্রচুর সময় পাই। আমি যা যা পছন্দ করি, নিজে নিজেই তার সবকিছু করতে পারি। আমি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে চাই আর আমি সেভাবেই বেঁচে আছি। লিভিং ফ্রুগালি ইজ এ ফিলোসফি অব লাইফ, বাট আই অ্যাম নট পুয়োর।

আমার একটি নিজস্ব জীবনযাপন পদ্ধতি আছে। আর প্রেসিডেন্ট হলেও আমি সেই জীবন স্টাইলে কোনো পরিবর্তন করিনি। আমি যা আয় করি, তা দিয়ে আমার খুব ভালো মতোই চলে যায়। এইটুকু আয় দিয়ে অবশ্য অন্যরা তেমন চলতে পারবে না। আমার বউও একজন সিনেটর।

সে তার আয় থেকেও দলকে সহয়তা করে। তার যা আয় তা দিয়ে আমাদের দু'জনের জীবন কাটানো যায় খুব সহজেই। এছাড়া আমরা আমাদের আয়ের একটা ক্ষুদ্র অংশ ব্যাংকে রাখি, যদি কোনো বিপদআপদ আসে তখন যাতে খরচ করা যায়। আমি আমার দলকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করি। এছাড়া আমার অবিবাহিত মেয়েরা যারা মা হয়েছে, তাদের জন্য একটি হাউজিং প্রকল্প আছে, সেখানে অনেক খরচ করি।

যা আমার জন্য কোনো স্যাকরিফাইজ নয়, এটা আমার ডিউটি, তাই আমি এই কাজে সহায়তা করি। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে ড্রাগ আর সন্ত্রাস একযোগে বিস্তার লাভ করেছে। বিগত একশো বছর আমাদের পুলিশ মাদকের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযান পরিচালনা করে আসছে। মাদক আর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আমাদের সমাজে নানাভাবে ক্ষতি করছে। আমরা সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করে মাদককে রাষ্ট্রীয় ব্যবসার খাত হিসেবে চিন্থিত করতে চাই।

তাই আমরা গোটা আমেরিকান দেশগুলোতে এখন ওপেন মাদক ব্যবসা করছি। কিন্তু সবাই যেটা চায় আমরা সেটা কিনতে দেই না। কিছু বাধ্যবাধকতা রেখেছি। সব মাদক দেশের সবাই ব্যবহার করতে পারবে না। আমাদের ফার্মেসিগুলোতে যেখানে ওষুধ বিক্রি হয়, সেখানে চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে মাদক কেনার সুযোগ রেখেছি।

যদি কেউ ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন নিয়ে সেই মাদক কেনে কোনো অসুবিধা নেই। যারা রেজিস্টার করেছে তারা ফার্মেসি থেকে মাসে একবার প্রয়োজনীয় ডোস কিনতে পারে। যদি কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাদক কিনতে চায়, আমরা ধরে নেই তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তখন তাকে আমরা মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দেই। আর এটাকে আমরা তখন স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবেই মনে করি।

আর প্রথমেই আমরা সেই ব্যক্তিকে আইডেন্টিফাই করি আর তার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করি। আমাদের এখানে সবচেয়ে বেশি মাদক সেবিরা সাধারণত মারিজুয়ানা ব্যবহার করেন। আমরা মাদক ব্যবহারের প্রাথমিক সকল উপকরণ ট্যাকেল করার চেষ্টা করছি। সমাজে মাদকসেবিরা প্রথম যা যা দিয়ে মাদক ব্যবহার শুরু করে। আমরা কোকেন বা অন্যান্য স্ট্রং মাদক ব্যবহার অনুৎসাহিত করি।

সেজন্য মারিজুয়ানাকে রাষ্ট্রীয়ভাবেই ব্যবহার করার জন্য গোটা দেশে আইনগতভাবেই বৈধ করে দিয়েছি। মারিজুয়ানা ছাড়া আর সকল মাদককে আমরা নিষিদ্ধ করেছি। কিন্তু মাদক নিয়ে আমাদের আগে এক্সপারিমেন্ট করতে হবে। নইলে এর ভয়াবহতা আমরা বুঝতে পারবো না। তাই মারিজুয়ানা সামাজিকভাবে বৈধ করেছি।

গোটা বিশ্ব যেখানে মাদকের কোনো সমাধান করতে পারেনি, তাই আমরা মারিজুয়ানাকে সামাজিকভাবেই স্বীকৃতি দিয়েছি। অন্যান্য মাদক থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এ নিয়ে আমাকে কেউ কোনো ধরনের প্রেসার দেয়নি। আর আমাদের এক্স প্রেসিডেন্টগণের সাপোর্ট আছে আমার এই উদ্যোগে পেছনে। এটা খুব কৌতুহলী একটা ব্যাপার, তারা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তারা কেউ এই উদ্যোগ নিতে এগিয়ে আসেননি।

আর আমার এই উদ্যোগে তারা এটা অনুভব করেছেন যে, শুধু এনফোর্সমেন্ট করলে মাদক প্রতিরোধ করা যাবে না, কিছুটা ছাড়ও দিতে হবে। মাদকের সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হল ড্রাগ ট্রাফিকিং। এটা সমাজের জন্য রাষ্ট্রের জন্য খুব ভয়ংকর ক্ষতি আনতে পারে। আমি মনে করি মাদক হল একটি রোগের মত। তবে মারিজুয়ানা খুব ভালো জিনিস।

সিগারেটও অনেক খারাপ। এমন কি অ্যালকোহলও খুব খারাপ জিনিস। কিন্তু মারিজুয়ানা খুব ভালো। দ্য অনলি গুড এডিগশান ইজ লাভ। ফরগেট এভরিথিং এলস।

আমি জীবন নিয়ে অনেক পরীক্ষা করেছি। আমার মনে হয়েছে আমি রেসিস্ট রিফিউজ করতে পেরেছি। ম্যান ইজ এ স্ট্রং অ্যানিমল হোয়েন হি হ্যাজ কনভিকশানস। মে বি আই অ্যাম এ বিট প্রিমিটিভ। মে বি আই হ্যাভ এ প্রিমিটিভ স্ট্রেন্থ, এ প্রোডাক্ট অব মাই অ্যানচেস্টারস, অব মাই পিজেন্ট চাইল্ডহুড।

আমার মাথায় যা আসে, যা আমার মন সাড়া দেয়, আমি তাই করি। এই ভাবনা আমাকে খুব আসক্ত করে রাখে। অনেকে আমাকে সাইকিয়াটিস্ট দেখাতে পরামর্শ দেন। কারণ আমার হ্যালুসিনেশান ছিল। যখন ডাক্তার দেখালাম, আমার মনে হল, তারা আমাকে পুরোপুরি পাগল মনে করছেন।

তারা আমাকে অনেক ধরনের ওষুধ দিয়েছিল। আমি সেগুলো জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে মেরেছি। কিন্তু আমি তাদের আমাকে বোঝার জন্য যথেষ্ট সময় এবং সুযোগ দিয়েছি। তারা আমাকে পরে পড়ার জন্য বই দিত। প্রায় সাত বছর তারা আমাকে জেলখানায় কোনো বই দেয় নাই।

তারা আমার সাথে পুরোপুরি পাগলের মত আচরণ করেছে। পরে তারা আমাকে ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রি'র বই পড়তে দেয়। আর তখন আমার মাথা আবার কাজ করতে শুরু করে। আর এখন আমার এই অবস্থা। মাদক আসলে গোটা বিশ্বের জন্য একটা কমোন যুদ্ধ।

আর আমরা সেটাকে জয় করার জন্য কিছু নানামুখী এক্সপারিমেন্ট করছি এখন। আর একজন প্রেসিডেন্ট যখন দেশের শান্তির জন্য একটা সঠিক উপায় বের করেন, তখন সবাই সেটাকে সহায়তা করে। আমার দেশের জনগণ আমাকে সেই সহযোগিতা করছেন এখন। একটা দেশের অনেক ধরনের দুঃখ কষ্ট আছে। আমরা সেটাকে তীলে তীলে সারানোর চেষ্টা করছি।

যদি আমরা ব্যর্থ হই, আমাদের এই যুদ্ধ কখনোই শেষ হবে না। আর আমরা এখন সেই সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমি যদি জনগণকে সহায়তা না করি, আমার মনে হয় সবাই তখন আমাকে সেলফিস বলবেন। সহায়তা করার অর্থ মোটেও প্রতিরোধ করা নয়। আমি যদি সমঝোতার পথে না যেতাম কেউ আমাকে পছন্দ করতো না।

আমি যদি আমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে সবকিছু ব্যর্থ হবে। সেজন্য আমি আমার বিরোধী সকল রিবেল গ্রুপকে আমন্ত্রণ করেছি। আমরা একসাথে বসে আলাপ করেছি। সমাধানের উপায় বের করার একটা কমোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। তাদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও আমরা একটা উপায় বের করতে পেরেছি, সেটাই আসল কথা।

আমি মনে করি, আমার এই উদ্যোগ, এটা ল্যাটিন আমেরিকায় খুব কাজে লাগবে। আমাদের মধ্যে এখন পারস্পরিক আস্থা আর সম্পর্ক আগের চেয়ে শক্তিশালী। এটাই বাধা কাটানোর পক্ষে সবচেয়ে ভালো কাজ করছে বলে আমি মনে করি। উরুগুয়েতে আমরা সমস্যা সমাধানের জন্য টেবিলে আলোচনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আর এখন আমরা কলাম্বিয়া সরকারের সাথে এবং ইএলএন-এর সাথেও সংলাপের পথ উন্মুক্ত রেখেছি।

আমরা যা করছি, এটা একটা ফলা দেবে নিশ্চিত। হিউম্যানিটি? আমার ধারণা, বর্তমান পোপ একজন অন্যরকম মানুষ। আমাদের রয়্যাল কোর্ট, চার্চে এখন অনেক কিছু আধুনিক হয়েছে। আমরা অ্যাবরসন পারমিট করছি। মারিজুয়ানা পারমিট করছি।

বর্তমান পোপ বলছেন, তিনি মানবিকতা ফিরিয়ে দেবেন। সেজন্য আমি পোপকে খুব সম্মান করি। অন দ্য আদার হ্যান্ড, ইট ইজ ট্রু, আই অ্যাম এন অ্যাথিয়েস্ট। কিন্তু আমি ক্যাথলিক চার্চও পারমিট করি, কারণ আমি একই সঙ্গে একজন ল্যাটিন আমেরিকান। আমাদের ল্যাটিন আমেরিকানদের দুইটা জিনিস হল কমোন, ভাষা এবং এই মহাদেশে ক্যাথলিক চার্চের ইতিহাস।

যদিও আমার দেশের প্রায় সবাই স্যাকুলার, কিন্তু আমি এই ইতিহাসকে খুব গুরুত্ব দেই। কিন্তু ক্যারিবিয়ান, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, কলাম্বিয়ার মানুষ সত্যিই ক্যাথলিক। যে কারণে আমি আমার মানুষদের থেকে ডিভোর্স নিতে চাই না। ল্যাটিন আমেরিকান হিসেবেই আমি পরিচিতি পেতে চাই। আমি মানুষের প্রয়োজনীয় আসল ভোগের বিরোধীতা করি না।

আমি বলতে চাই অপচয় কমাতে হবে। আমরা খাবারের জন্য কৃষকাজ করি। বসবাসের জন্য ঘরের ছাউনি দেই। আর যাদের স্কুল নেই, তাদের পড়াশুনার জন্য স্কুল নির্মাণ করি। আমাদের পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে।

পৃথিবীর প্রায় সকল শক্তিশালী ব্যক্তির বসবাসের জন্য ৪০০ বর্গমিটারের বাড়ি, তিন-চার-পাঁচটি করে গাড়ি আছে। সমুদ্রপাড়ে অবকাশ যাপনের জন্য বিলাসবহুল বাড়ি আছে। পৃথিবীর যেখানে সেখানে ঘুরতে যাবার জন্য স্পেশাল বিমান আছে। যা সবার নেই। সাধারণ মানুষের নেই।

আমি সাধারণ মানুষের মত বাঁচতে চাই। বিলাসিতা আমি পছন্দ করি না। একদম করি না। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের কি শিক্ষা দেয়? আমাদের ইনডিসপুটেবল ফ্যাক্টের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। একজন আমেরিকান যা ভোগ দখল করছে, অন্যরা তা করলে আরো তিনটা এক্সট্রা প্লানেট লাগবে আমাদের।

আমরা ক্রমশ ভোগের পেছনে ছুটছি। এটা সংক্রামক রোগের মত। এটা অসুস্থতা। এটা পাগলামি। আমি এটা পছন্দ করি না।

আমি প্রয়োজনীয় জিনিসেই তুষ্ট। আমি ১৯৮৭ সালের একটি ওল্ড মডেলের গাড়ি এখনো চালাই। আমার আর দরকার নেই। পুরানটায় আমার কাজ চলছে। আমি কেন নতুন গাড়ি কিনব? আমি নিজে জেল খেটেছি।

মানুষের কতোটুকু প্রয়োজন তা আমি ভালো করে জানি। আমি মানুষের চাহিদা যেমন বুঝি, তেমনি অপচয় বা বিলাসিতাও বুঝি। আমি বলতে চাই, আমি এই পৃথিবীর একজন খাঁটি প্রিজনার। আমি এই পৃথিবীর জেলে আছি। সো, আমাকে অপচয় করলে চলবে না।

তাই আমি নিজে এভাবে চলি। এটা আমি অন্যদেরকে চাপিয়ে দিতে পারি না। তাহলে তারা আমাকে খুন করবে। বাট এলাউ মি দ্য ফ্রিডম টু এক্সপ্রেস মাইসেলফ। আমরা একদিকে গ্লোবাল ওয়ার্নিংয়ের কথা বলছি, অন্যদিকে আমরাই এই প্রকৃতি ধ্বংস করছি।

এটা লজ্বার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য পৃথিবীকে আমরা আসলে সবাই মিলে ধ্বংস করছি। আমি শুধু বলতে চাই, আমরা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যেনো উন্নয়নের কথা ভাবি। নইলে আমরা কেবল নতুন প্রজন্মের জন্য মৃত্যু ক্রয় করছি।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।