বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মৌলবাদী রাজনীতি গভীর উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে ভারতকে।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নয়াদিল্লির মূল উদ্বেগ, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত হলে, ভোটের আগে এবং পরে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক সংখ্যালঘু মানুষ আশ্রয়ের জন্য ভারতীয় ভূখণ্ডে চলে আসতে পারে। যা নিঃসন্দেহে নয়াদিলি্লর জন্য খুবই বিড়ম্বনা এবং সমস্যার হবে। এরই মধ্যে বিষয়টির ইঙ্গিত পেয়েছে সাউথ ব্লক।
পাশাপাশি ভারত মনে করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা এবং মৌলবাদী হিংসা বাড়লে তা গোটা অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়বে। গোটা বিষয়টির সুবিধা নিতে পারে এমন কিছু রাষ্ট্র যারা ভারতের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন নয়। তাই বিষয়টি রুখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পাশে দাঁড়াতে সব রকম চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সহিংস রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে সে দেশে অবস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনার সঙ্গে কথা হয়েছে পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের। তবে আমেরিকার সঙ্গে ঢাকা পরিস্থিতি নিয়ে মতৈক্য হয়নি নয়াদিল্লির।
সূত্রের খবর, আমেরিকা কিন্তু জামায়াত-বিএনপি জোট নিয়ে যথেষ্টই নিশ্চিন্ত। ড. ইউনূসকে নিয়ে শেখ হাসিনার অবস্থান, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত কোনো কিছুতেই খুশি নয় ওয়াশিংটন। তবে সরকারি সূত্রের খবর, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত জোটের মৌলবাদী রাজনীতি যথেষ্টই অস্বস্তিতে রেখেছে ভারতকে। সাম্প্রতিক হরতাল এবং সে দেশজুড়ে হিংসাত্দক ঘটনা ভোট পর্যন্ত চলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নয়াদিলি্লর অবস্থান- বাংলাদেশে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তার সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সরকার বদলায় কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির অভিমুখ মূলত একই থাকে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাম্প্রতিক অতীতে বৈঠক করেছেন ভারতীয় শীর্ষ নেতারা। তবে খালেদা জমানায় হুজি এবং জেএমবির মতো সংগঠনের উত্থানের কথা ভোলেনি নয়াদিলি্ল। আবার সেই পরিস্থিতি তৈরি হোক এমনটা আদৌ কাম্য নয় তাদের কাছে। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতি এবং অস্থিরতা বাড়লে গোটা অঞ্চলই বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
পাকিস্তান পরিস্থিতির সুবিধা নিতে পারে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চলছে, তাও বাংলাদেশের উত্তেজনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। বাংলাদেশে রয়েছে একটি বড় অংশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। লস্কর এবং আল-কায়েদার প্রভাবও যে এই রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে, সেই রিপোর্টও এসেছে। ফলে গোটা অঞ্চলে যে অস্থিরতা তৈরি হবে তার প্রভাব ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং চীনের ইউনান প্রদেশে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশসংক্রান্ত রিপোর্টও যথেষ্ট চিন্তার মধ্যে রেখেছে ভারতকে। তা হলো- বাংলাদেশে অবস্থিত ১৮টি ইসলামী ব্যাংক ঢাকাকে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরে পরিণত করছে। সে দেশে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বাড়ছে এই সক্রিয়তা। গোটা ঘটনাটির পেছনে ইসলামাবাদ তথা আইএসআইর কতটা হাত রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকেও ঘরোয়াভাবে নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে ভারত।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মৌলবাদী সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত আদৌ কাম্য নয় ভারতের। কিন্তু ওই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, চিহ্নিত ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে মোটা 'ঋণ' দিচ্ছে বাংলাদেশের জামায়াতপন্থি মৌলবাদী 'এনজিও'গুলোকে। গোয়েন্দাদের অনুমান, এ অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে সে দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, সন্ত্রাস এবং অবৈধ অস্ত্র কেনার কাজে। সীমান্তে ভারতবিরোধী বিভিন্ন কার্যকলাপেও এই পুঁজি কাজে লাগানো হচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুটা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকার প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমের কিছু দেশ অকাতরে ডলার সরবরাহ করছে ওই ব্যাংকগুলোকে।
এই 'পশ্চিমী' যোগাযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।