আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিভিন্ন পুরাণে বর্নিত অমর হওয়ার দশ উপায়

যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।

মানুষের একটা প্রধান ইচ্ছা হল অমর হওয়ার ইচ্ছা। মানুষ অমর হইতে চায়। যদিও সেটা বাস্তবে সম্ভব নয় (যদি না বিজ্ঞান কোন উপায় বের করে)।

বাস্তবে সম্ভব না তাই কল্পনাপ্রবন মানুষেরা অমরত্বের কল্পনা করেছে বিভিন্নভাবে। তাদের সেই চিন্তা গুলো সুন্দর। পৃথিবীর বিভিন্ন মিথোলজিতে অমর হওয়ার বিভিন্ন উপায়ের কথা আছে। সেরকমই বিভিন্ন মিথোলজির অমর হওয়ার দশটা উপায়ের বর্ননা নিয়ে এই পোস্ট। ১।

মৎসকন্যার মাংস ভক্ষণ জাপানিদের উপকথার কাহিনীতে আছে এই কথা। তাদের নিনজিও নামে এক মৎসকন্যার মাংস খেলে মানুষ অমর হয়। এই মৎসকন্যা অনেকটা বানরের মত মুখবিশিষ্ট। তারা সাধারনত সমুদ্রে থাকে। কখনো জেলেদের জালে ধরা পড়লে ওই জাহাজে আসে দূর্ভাগ্য বা ঝড়।

অমর হতে হলে এই বানরমুখো মৎসকন্যার মাংস আপনাকে খেতে হবে। কীভাবে খেতে হবে তার কোন বর্ননা নেই। গ্রিল করে বা রেসিপি অনুষ্ঠান দেখে দেখে যেকোন রকম রান্না করে খাওয়া যেতে পারে ধারনা করি। এইট হান্ড্রেড নান নামের এক গল্পে এই মৎসকন্যার মাংস খেয়ে অমরত্বের স্বাক্ষাত কাহিনী ও আছে। এ মেয়ের জন্য তার বাপ নিয়ে এসেছিল নিনজিও এর মাংস।

সে ত খেয়ে ফেলল। খাওয়ার পর সে অভিশপ্ত হল অমরত্বের মাধ্যমে। অভিশপ্ত বলছি কারণ সে দেখতে পেল তার চোখের সামনে মরে যাচ্ছে তার একের পর এক স্বামী, কত শত সন্তানাদি। দেখতে দেখতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ( ডেভ এজার্সের অমর মাছির মত ) শেষে সে বুদ্ধের কাছে গিয়ে বুদ্ধধর্ম গ্রহন করে নান হয়ে গেল।

অবশেষে তার কিছু ভালো কাজের জন্য ৮০০ বছর পর সে মরতে পারে। এই ৮০০ বছরের বুদ্ধ নানের কথায় জেমস হিল্টনের লস্ট হরাইজন সায়েন্স ফিকশনের শতবর্ষেও তরুনী থাকা বুদ্ধ মঠের নানের কথা মনে পড়ল। লস্ট হরাইজন, শাংরি লা ভালো লেগেছিল এই অমরত্বের অবাস্তব কিন্তু রহস্যজনক কাহিনী গুলোর জন্যই হয়ত। ২। জেসাসকে উপহাস করা খ্রিস্টান মিথোলজিতে যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশে যাবার সময়ে উপহাস করেছিল এক ইহুদি।

পাথর ছুড়ছিল। এক পর্যায়ে যিশু বিরক্ত হয়ে তাকে বলেছিলেন যতদিন আমি না ব্যাক করছি ততদিন তুমি থাকবে। সেই লোকটি আর মরে নি। জোসেফ নাম ধারন করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহন করে। প্রতি একশ বছরে একবার ভয়ানক রোগাক্রান্ত হয়।

অজ্ঞান হয়। এবং এরপর আবার ত্রিশ বছরের হয়ে ফিরে আসে। ৩। দেবতাদের রাগান্বিত করা গ্রীক মিথোলজিতে দেবতাদের অতিমাত্রায় রাগান্বিত করলে উনারা অমর রেখে শাস্তির ব্যবস্থা করেন। সিসিপাস দেবতা জিউসের সাথে ট্রিক করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলেন।

তার শাস্তি স্বরুপ অমর হয়ে পাহাড়ে বিরাট পাথর ঠেলাই তার কাজ এখন। এছাড়া রাজা ইক্সিয়ন। শ্বশুর কে মারার পর মাউন্ট অলিম্পাসে গেলেন জিউসে কাছে মাফ চাইতে। গিয়ে রুপবতী হেরার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে রেপ করতে চাইলেন (ঢেকী স্বর্গে গেলেও ধান ভানে )। দেবতা জিউস তার এই কু ইচ্ছার শাস্তি স্বরুপ অমর করে তার উপর অনবরত শাস্তি জারি রেখেছেন।

৪। চিন্নাবার মার্কারীর এক ধরনের খনিজ। টাওইজম মতে অমরত্বের উপাদান। এটা সরাসরি খেতে হয়। তাদের ধারনা ছিল এসব মেটাল (চিন্নাবার, সোনা) পাকস্থলিতে গ্রহন করলে এদের গুণাগুণ দেহে সঞ্চারিত হবে।

এভাবেই আসবে অমরত্ব। কিন্তু আসে নি আসলে। বিষাক্ত চিন্নাবার গ্রহনে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর মাঝে ট্যাঙ ডাইনেস্টির সম্রাট ও আছেন। আলকেমির মাধ্যমে অমরত্বের চিন্তা এরপর চীনারা বাদ দেয় হয়ত।

৫। অচিন বৃক্ষের পাতা সুমেরিয়ান মিথোলজি তে অমর হতে লাগে অচিন বৃক্ষের পাতা। গিলগামেশ তার বন্ধুর মৃত্যুতে খুব ভেঙে পড়ল। তার মনে হল সেও তো একদিন মরে যাবে। এই মরে যাওয়া থেকে বাঁচা যায় কীভাবে।

সে খোজতে বের হল। অনেক খোজাখোজির পর এক সুফী দরবেশ টাইপ পুণ্যাত্বার স্বাক্ষাত পেল। তিনি অমর ছিলেন। তিনি জানালেন তার অমরত্ব এক বিশেষ ধরনের অমরত্ব। যা তাকে সৃষ্টি কর্তা দিয়েছেন।

পৃথিবীতে মহাপ্লাবন আসবে। সেই মহাপ্লাবন থেকে মানুষদের রক্ষা করতে তিনি নৌকা বানাচ্ছিলেন। বিরাট নৌকা। গিলগামেশ অমর হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি অচিন বৃক্ষের বর্ননা দিলেন। বললেন, এই বৃক্ষের পাতা খেলে অমর হতে পারবে।

গিলগামেশ বহু কষ্ঠে খোজে পেয়েছিল সেই গাছ। কিন্তু সে খাওয়ার আগেই এক বিষধর সর্প গাছটাকে খেয়ে ফেলে! ৬। অমরত্বের পীচ ফল জার্নি টু দি ওয়েস্ট এর বানর রাজা সুন উকং এর কাজ ছিল পীচ ফলগুলো রক্ষা করা। কিন্তু সে একটি ফল খেয়ে। এই খাওয়ার ফলস্বরুপ আয়ু পায় এক হাজার বছর।

তাকে ধরা হয়। কিন্তু মৃত্যুদন্ড দেয়া গেল না। সে পালিয়ে গিয়ে দেবতাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করল। ব্যর্থ হয়ে দেবতারা বুদ্ধের কাছে গেলেন। বুদ্ধ ট্রিক করে বানররাজ কে বন্দি করে দিলেন পাঁচশ বছরের জন্য।

জেড সম্রাট এবং তার বউ জি ওয়াংমু এই ফলের চাষ করতেন। তাদের গাছে প্রতি তিন হাজার বছরে একবার ফল আসত। অমরত্বের ফল বছর বছর আসে না। ৭। অমৃত হিন্দু মিথোলজিতে আছে অমৃতের কথা।

অমৃত পান করিলে অমর হওয়া যায়। অমৃত তাই একটু পপুলার শব্দ। অমৃতের স্ত্রী লিঙ্গ ও আছে। অমৃতা রাও। ৮।

স্বর্ন আপেল নর্স মিথোলজিতে দেবতাদের অমরত্ব, অনন্ত যৌবন ইত্যাদির জন্য গুরুত্বপূর্ন এই স্বর্ন আপেল। এই স্বর্ন আপেল গুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল বসন্তের দেবী ইডুন এর। লোকি একসময় ধোকা দিয়ে স্বর্ন আপেল সহ তাকে তুলে দেয় দৈত্যের কাছে। আপেলবিহীন দেবতাদের জীবন হয়ে উঠল দূর্বিসহ। তাদের সব ক্ষমতা চলে গেল।

তারা বুড়ো হতে শুরু করল। শেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে দেবী এবং আপেল দুই ই উদ্ধার করলেন। এবং তারা ফিরে পেলেন হারানো শক্তি, হারানো রাজত্ব। ৯। এম্ব্রোসিয়া গ্রীক দেবতাদের অমরত্বের রহস্য।

তারা এই এম্ব্রোসিয়া পান করেই অমর থাকতেন। এর স্বাদ অনেকটা মধুর মত মধুর। অনেক ডেমিগড ও এই বস্তু পানের সুযোগ পেতেন। ডেমি গড, গড এসব ব্যাপারে সহজ ধারনা পেতে এই ছবি সহায়ক হিশেবে দেয়া হলঃ ১০। পবিত্র পাত্র ( হলি গ্রেইল) এটি সেই কাপ যাতে বিখ্যাত লাস্ট সাপারে যিশু পান করেছিলেন।

কথিত আছে এই কাপে যিশু যখন ক্রুশে ছিলেন তখন তার রক্ত সংগ্রহ করেছিলেন জোসেফ। কিং আর্থার এবং তার নাইটেরা এর খোজে ব্যাপক ঘোরাঘোরি করেন। কিন্তু পাওয়া যায় নি। এটি স্পর্শ করলেই অমর হওয়া যাবে এমনি বলে খ্রিস্টান মিথোলজি। উপসংহারঃ এত সব অমর হওয়ার চিন্তা দেখে যদি অমর হওয়ার চিন্তা জেগে থাকে তাহলে দুঃখিত।

অমর হওয়ার সত্যি সত্যি কোন উপায় আছে বলে জানি না। তবে নাম বদলিয়ে অমর বা অমরসানী রাখা একটা উপায়ের ভেতর পড়তে পারে। এছাড়া গানওয়ালা কবির সুবনের গান শোনা যেতে পারে, অমরত্বের প্রত্যাশা নেই , নেই কোন দাবী দাওয়া...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.