আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিই মিসরের প্রেসিডেন্ট

মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার কায়রোর একটি বিশেষ আদালতে বিচার শুরু হয়েছে। সহিংসতায় উসকানি দেওয়া এবং হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে এ বিচার হচ্ছে। আদালতে উপস্থিত একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, মুরসি বিচার প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে দেশের বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দাবি করেন। আদালত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বিচার মুলতবি করেছেন।
গত ৩ জুলাই মিসরের সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যুত করে ইসলামপন্থী প্রেসিডেন্ট মুরসিকে।

এর পর থেকে তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়।
কায়রোর নিরাপত্তাবিষয়ক প্রধান ওসামা আল-সোগাহায়ার জানান, মুরসিকে গতকাল অজ্ঞাত স্থান থেকে হেলিকপ্টারে কায়রোর পুলিশ একাডেমিতে আনা হয়। পদচ্যুত প্রেসিডেন্টের বিচার করতে এই একাডেমিতেই বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়েছে। একই আদালতে মুরসির ১৪ সহযোগীরও বিচার হচ্ছে।
বিচারক আহমেদ সাবরি ইউসেফ আদালত কক্ষে ক্যামেরা এবং রেকর্ড করার সরঞ্জাম নিষিদ্ধ করেন।

আদালতের একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, মুরসি প্রথমে কারাগারের প্রথাগত সাদা পোশাক পরতে না চাওয়ায় বিচার-প্রক্রিয়া শুরু করতে বিলম্ব হয়। পরে অবশ্য তিনি তা পরেন।
আদলতে বিচার-প্রক্রিয়া চলার সময় উপস্থিত থাকা বার্তা সংস্থা এএফপির একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মুরসি বিচার প্রত্যাখ্যান করে আদালতে নিজেকে দেশের বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ডক্টর মুরসি, এই প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট...এই আদালত অবৈধ। ’ এ ছাড়া মুরসি তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা সেনাবাহিনীর সমালোচনা করে এ ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের বিচারেরও আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘এটা ছিল একটা সামরিক অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের নায়কদের বিচার করতে হবে। অভ্যুত্থান একটি বিশ্বাসঘাতকতা; এটা একটা অপরাধ। ’
এর আগে শুনানি শুরু হওয়ার সময় ব্রাদারহুডের দুই জ্যেষ্ঠ নেতা এসাম আল-ইরিয়ান ও মোহাম্মদ আল-বেলতাগি ‘সামরিক শাসন নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেন।
বিচারের সময় কায়রোর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পুলিশ একাডেমির বাইরে মুরসির পোস্টার ও সেনাবাহিনীবিরোধী বিভিন্ন বার্তা-সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন হাতে জড়ো হয় অসংখ্য সমর্থক।

এ ছাড়া হাজার হাজার মুরসি-সমর্থক কায়রোতে সাংবিধানিক আদালতের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। মুরসির সমর্থক ইব্রাহিম আবদেল সামাদ বলেন, ‘মুরসির বিচার বিভ্রান্তিকর। অপরাধীরা বৈধ প্রেসিডেন্টের বিচার করছে। ’
কায়রোর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত উচ্চ আদালতের সামনেও চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেখানে মুরসির সমর্থক ও বিরোধীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।

কায়রোর নাহদা স্কয়ার বন্ধ করে দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এই স্কয়ার থেকে গত আগস্ট মাসে মুরসির সমর্থকদের হটিয়ে দিতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালালে বহু লোক হতাহত হয়েছিল।
২০১১ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সাবেক স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন মুরসি। তবে এক বছর না যেতেই তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। গণবিক্ষোভের জের ধরে সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

তার পর এই প্রথম তাঁকে জনসমক্ষে দেখা গেল।
এই বিচার উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করতে কায়রোতে ২০ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিচার চলার সময় পুলিশ একাডেমির বাইরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল। সেখানে শত শত দাঙ্গা পুলিশ সদস্য ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়। সেনাবাহিনীরও বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া যান মোতায়েন ছিল।


যে অভিযোগে মুরসি ও তাঁর ১৪ সহযোগীর বিচার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা গত বছরের ডিসেম্বর মাসের একটি ঘটনা নিয়ে। সে সময় মুরসি দেশের প্রেসিডেন্ট। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে তখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় সংঘর্ষে অন্তত ১০ বিক্ষোভকারী নিহত হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে মুরসিকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।


এই বিচারকে মিসরের সেনা-সমর্থিত নতুন সরকারের জন্য বড় একটা পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেননা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানো নিয়ে এরই মধ্যে তারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
কুখ্যাত তোরা কারাগারে থাকবেন মুরসি: গতকালের বিচার কার্যক্রম শেষে মুরসিকে সম্ভবত কুখ্যাত তোরা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র এর আগে এ রকমই জানিয়েছিল। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।