আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সঠিক সময়েই শচীনের অবসর, বললেন অজিত

শচীন টেন্ডুলকারের জীবনে বড় ভাই অজিত টেন্ডুলকারের অবদানের কথা কে না জানে! ছোট ভাইটিকে একপ্রকার জোর করেই ক্রিকেট শেখার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে অজিত যে ক্রিকেট দুনিয়ার কত বড় উপকার করেছেন, সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অজিতের কারণেই ক্রিকেট দুনিয়া পেল এক কিংবদন্তির সন্ধান। ২৪ বছর ধরে ক্রিকেট অনুরাগীরা আনন্দে মাতলেন এক গ্রেটের সান্নিধ্যে! ক্রিকেটের পরিসংখ্যান বই ধন্য হলো সম্ভব-অসম্ভব প্রায় সব রেকর্ডের সংস্পর্শ পেয়ে।
এত কিছুর পরও গত ২৪ বছর পর্দার আড়ালেই থেকেছেন শচীনের বড় ভাই অজিত। নিভৃতচারী পারিবারিক আবহের অন্যতম প্রতিভূ অজিত এত বছর পর ছোট ভাইকে নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে।

সেখানে তাঁর মন্তব্য, একেবারে ঠিক সময়ই অবসরে যাচ্ছে শচীন।
২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই যেন কাউন্ট-ডাউনটা চলছে। কবে বিদায় বলবেন শচীন। ধীরে ধীরে কাছে চলে এসেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আর মাত্র কয়েকটি দিন, এরপর আর কোনোদিনই ব্যাট হাতে বাইশ-গজি জায়গাটায় বোলারদের ‘খুন’ করতে দেখা যাবে না ভারতীয় ক্রিকেটের চিরদিনের এই ‘ওয়ান্ডারবয়’কে।

শচীন তাঁর অবসরের সিদ্ধান্তটা নিজেই নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অজিত। তবে পারিবারিক পরিমণ্ডলে নিজের ভবিষ্যত্ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন বেশ অনেক দিন ধরেই। পরিবারের সবাই তাঁকে তাঁর মতো করেই ব্যাপারটা দেখার কথা বলেছিলেন। শচীন সেটাই করেছেন। ক্রিকেটটা যেহেতু চিরদিন খেলে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই অবসরের ব্যাপারটা চলে আসেই।

একদিন না একদিন তাঁকে বিদায় নিতেই হতো। কিন্তু সেই বিদায়টা সঠিক সময়ে হচ্ছে বলেই তা পরিবারকে তৃপ্তি দিয়ে যাচ্ছে।

অজিত কখনোই নাকি শচীনের খেলা মাঠে গিয়ে দেখেন না। আদরের ছোট ভাইটি মাঠে যখন পারফরম করেন, তখন নাকি বড় ভাই উদ্বেগ-উত্কণ্ঠায় অস্থির হয়ে থাকেন। ‘নজর লেগে যাওয়া’র চিরাচরিত ভারতীয় চিন্তা এ ক্ষেত্রে তাঁকে বেশি ভুগিয়েছে বলেই জানিয়েছেন অজিত।

মুম্বাইয়ের উচ্চ-মধ্যবিত্ত পারিবারিক আবহে রয়ে-সয়ে কাজ করার একটা ব্যাপার সব সময়ই ছিল। বাবা রমেশ টেন্ডুলকার ছিলেন মারাঠি সাহিত্যের অধ্যাপক। ছেলে শচীন যখন ক্রিকেটকেই নিজের জীবন হিসেবে বেছে নিলেন, তখন তাতে কোনো প্রকার বাধা দেননি তিনি। তবে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার ব্যাপারটি অবাক করেছিল তাঁকেসহ পুরো পরিবারকেই। এ ব্যাপারে বড় ভাই অজিত বলেন, ‘আসলে আমরা পুরো ব্যাপারটি নিয়েই ধাপে ধাপে ভাবতে চাচ্ছিলাম।

প্রথমে স্কুল ক্রিকেট, তারপর রাজ্য ক্রিকেট ও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। বাবাও চেয়েছিলেন শচীন ধাপে ধাপেই এগোক। কিন্তু ১৯৮৯ সালে ও যখন পাকিস্তান সফরে ভারতীয় দলে জায়গা পেয়ে গেল, তখন আমরা সবাই বেশ অবাক হয়েছিলাম। ব্যাপারটা দারুণ আনন্দও দিয়েছিল আমাদের। ’

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সময় বাবা রমেশ টেন্ডুলকারের মৃত্যু এলোমেলো করে দিয়েছিল শচীনের জগত্।

ওই সময়টার কথা মনে করে অজিত আজও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ইংল্যান্ড থেকে বাবাকে শেষ দেখাটি দেখতে মুম্বাই চলে এসেছিলেন শচীন। শেষকৃত্য শেষে আবারও ইংল্যান্ড ফিরেই কেনিয়াকে বিধ্বস্ত করা এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সে ম্যাচে সেঞ্চুরি করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বাবাকে খোঁজার সেই দৃশ্যটি আজও ক্রিকেটের অন্যতম ‘আইকনিক’ দৃশ্য।

সেদিন বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে যেভাবে ছুটে এসেছিলেন, সেভাবেই আবার দলের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ড।

শোকের আবেগকে পাথর চাপা দিয়ে দলের স্বার্থ, দেশের প্রয়োজনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। ব্যাপারটি মনে করে বড় ভাই অজিত ফিরে যান ওই সময়টায়, ‘বাবার মৃত্যু ওকে দারুণভাবে স্পর্শ করেছিল। কিন্তু ওর মাথায় সেদিন ছিল দেশের প্রয়োজন। ওটার কারণেই সে ইংল্যান্ড ফিরে গিয়েছিল। আমি নিশ্চিত, বাবা যদি এক মুহূর্তের জন্যও ওই সময় পরলোক থেকে ফিরতে পারতেন, তাহলে উনিও শচীনকে ইংল্যান্ড ফিরে যাওয়ারই নির্দেশ দিতেন।

ছোটবেলা থেকেই ও বাবাকে খুব মানত। মনে মনে সে ওটাই কল্পনা করে নিয়েছিল বোধ হয়। ’

শচীনের বিদায় মুহূর্তে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে থাকবেন তাঁর পুরো পরিবার। সে এক মিশ্র অনুভূতি। ২৪ বছরের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে সেদিন।

ব্যাপারটি আবেগ ভাসিয়ে দেবে গোটা পরিবারকে। সেটা অজিত জানেনও। কিন্তু ছোট ভাইটির আবেগ যে তার চেয়েও বেশি! ওটা কল্পনা করেই কয়েকটা দিন চোখ ভেজাতে আপত্তি নেই বড় ভাইয়ের।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.