বন্ধ হওয়ার পর ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও ফের আন্দোলনের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও মামলায় নাম থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতেই চাই। কিন্তু যেভাবে ওই দিন সহিংসতা হয়েছে তাতে আমাদের মধ্যেও কিছুটা আতঙ্ক কাজ করছে। ”
গত ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত ফি ও সান্ধ্যকোর্স বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
পাশাপাশি পুলিশের পিটুনি, শটগানের গুলি ও টিয়ার শেলে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
রাতেই সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ ও ছাত্রলীগ মোট ছয়টি মামলা করে। এসব মামলায় ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে ৪৭৫ জনকে আসামি করা হয়, যাদের অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষার্থী ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী।
সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য উপাচার্য শিগগিরই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসার কথা জানালেও কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে তা তিনি নিশ্চত করতে পারেননি।
সাধারণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীরাও ক্যাম্পাসে ফিরতে চান। কিন্তু এর আগে তাদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলছেন তারা। সাধারণ শিক্ষকরাও দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার পক্ষে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, “আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হোক। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষত ভুলে যেতে পারে।
নয়তো যখনই খুলবে তখনই প্রশাসনের পদত্যাগের বিষয়ে আন্দোলন আরো জোরদার হবে। ”
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য উৎসব মোসাদ্দেক বলেন, “আমাদের ওপর হামলা করে ফের আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। আমাদের ভিতর কিছুটা আতংক কাজ করছে।
“আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে ক্যাম্পাস খুলে দিক। আর যদি তা না করে- তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা ফের আন্দোলনে নামব।
”
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আজহার আলী বলেন, চলমান সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকেনি। তবে উপাচার্য সাহায্য চাইলে তারা এগিয়ে যাবেন।
এদিকে ২ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর ছাত্রলীগের সহসভাপতি দেলাওয়ার হোসেন ডিলস ও ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের সজীব আহমেদকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নিলেও গণমাধ্যমে যেসব অস্ত্রধারীর ছবি এসেছে, তাদের এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।
ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বলেন, “আমরা কেবল ভাংচুর করা ভবনগুলো পরিদর্শন করেছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের তদন্ত কাজে সহায়তা করার জন্য চিঠি দিয়েছি। এছাড়া যারা ওই দিনের ঘটনাটি সম্পর্কে জানাতে চান, তাদেরকে বক্তব্য দেয়ার জন্য স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। ”
অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করা গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এখনো কাউকে চিহ্নিত করতে পারিনি। যদি পারি সেক্ষেত্রে তাদেরও তদন্ত কমিটিতে ডাকা হবে। ”
রাজশাহী পুলিশের উপকমিশনার (পূর্ব) প্রলয় চিচিম জানান, গ্রেপ্তার দুই জনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে অন্যদের আটক করতে মাঠে নামবে পুলিশ।
“আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি খুব শিগগির আটক করতে পারব। ”
হামলার ঘটনায় উল্টো আন্দোলনকারী শিক্ষর্থীদের নামে মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আজহার আলী।
তিনি বলেন, “এভাবে বসে থেকে তো কোনো সমাধান হতে পারে না। আমাদের ছেলেরা যদি অপরাধ করে সেই ক্ষেত্রে তাদের শাসন করা যেতে পারে যৌক্তিক উপায়ে।
অস্ত্র উচিয়ে প্রশাসনের অনুগত ছাত্র সংগঠন হামলা করবে আর তাদের শাস্তি হবে না- এটা অনৈতিক। ”
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান মিলন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধকের দপ্তর আর পুলিশ প্রশাসনই মামলার বিষয়টি দেখছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।