আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নওগাঁ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দাবী নয়-প্রাপ্য।



ইতিহাসে সভ্যতা, শিক্ষা, সংষ্কৃতি ও শিল্প ভাষ্কর্যের গৌরবের জাজ্বল্যমান সাক্ষ্যি হয়ে আছে নওগাঁ জেলা। সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা এই অঞ্চলটিতে জগদ্দল ও সোমপুর বিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এক সময় বৌদ্ধধর্ম প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে। কিন্তু দূরদর্শী ও জ্ঞান তাপস বৌদ্ধভিক্ষুদের কল্যাণে ও শাসকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার যৌথ প্রয়াসে শিক্ষা বিস্তার ও জাতি উন্নয়নের মহৎলক্ষ্যে এক একটি মহাবিহার ধীরে ধীরে ধর্মের গণ্ডি পেরেয়ি রূপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, জ্ঞান সাধনার আখড়াতে। এই সব বিহার ভরে ওঠে জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধর্ম, চিকিৎসা, রাজনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি গ্রন্থ, পুঁথিতে ঠাসা সব গ্রন্থাগারে। কালের আবর্তনে আজ সেগুলি বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক হিসাবে পৃথিবীর বুকে আজো মাথা উঁচু করে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে।

সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বর্তমানে নওগাঁ জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আমাদের দাবী নয়-প্রাপ্য। একক জেলা হিসেবে ধান উৎপাদন ও চাল সরবারাহে নওগাঁ জেলা শীর্ষে। এছাড়া গম, ভুট্টা,আলু ,ইক্ষু, সরিষা সহ অন্যান্য রবি শস্য ও শাক সবজি উৎপাদনেও ভূমিকা অসামান্য । নওগাঁর ভূ-প্রকৃতি ও আবহওয়া চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত বিধায় এখানে যে কোন ফসল ফলানো সম্ভব। ধান প্রক্রিয়াজাত করণের সবচেয়ে বড় শিল্প এলাকা হিসেবে নওগাঁর নাম উঠে এসেছে।

এই শিল্পে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থা্‌নের সুযোগ হয়েছে। ধান প্রক্রিয়াজাত করণের সাথে সাথে বাইপ্রডাক্ট নিয়েও বড় শিল্পের সম্ভাবনাও রয়েছে। নওগাঁ জেলায় ছোট যমুনা, আত্রাই, পুনর্ভবা নদী সহ ২২ টি বিশাল জলমহাল,৪৩৮৬০টি আবাদি পুকুর সহ অসংখ্য জলাধার আছে যা থেকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যত্র মৎস্য সরবরাহ করা হয়। গবেষণা,সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন সম্ভব হলে এখানে মৎস্য চাষের বিপুল সম্ভবনা রয়েছে। সহায়ক পরিবেশ আর খাদ্যের সহজলভ্যতার জন্য নওগাঁতে গবাদি প্রাণী, হাঁস –মুরগী,সৌখিন পাখি পালন,মৌ–চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্তমানে যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্ভবনার দ্বার উম্মচন করেছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আজ আমাদের উত্তরাঞ্চলের কৃষিখাত হুমকির সম্মুখীন এবং তা মোকাবেলার জন্য এই এলাকার মাটির গঠন, পানির স্তর, জলবায়ু নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণের সমন্বয়ে কৃষিখাতের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অপরিহার্য। যার সুবিধা শুধু উত্তরবঙ্গ নয় দেশের সামগ্রিক কৃষিখাতের উপর বর্তাবে। স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে গবেষণার যেমন সুযোগ ঘটবে তেমনি শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনেও যুগান্তকারি অধ্যায়ের সূচনা হবে। উল্লেখিত কৃষিখাতের অপার সম্ভবনার সদব্যবহার করতে ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নওগাঁ জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আমাদের দাবী নয়-প্রাপ্য।

কৃষি ক্ষেত্রে অবদান ও বিভাগওয়ারী উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায় বর্তমান রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার মধ্যে নওগাঁ জেলার অবদান সবচেয়ে বেশী কিন্তু শিক্ষা,কর্মসংস্থা্‌ন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে। আমরা এই বৈষম্যের অবসান ও উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ চাই। ভৌগলিক অবস্থান ও যোগাযোগ বাবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় বরেন্দ্র ভুমির কেন্দ্র হল নওগাঁ জেলা যার সাথে অন্যান্য জেলার গড় দূরত্ব যেমন কম তেমনি রয়েছে স্থল, রেল এবং নদী পথের যাতায়াত সুবিধা। জনসংখ্যা ও শিক্ষা বাবস্থার কথা বিবেচনা করলে দেখা যায় নওগাঁ জেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লাখ এবং শিক্ষার হার ৬২.৫২%. ৬ টি সরকারী মহাবিদ্যালয়, ৭৪ টি বে-সরকারী মহাবিদ্যালয়, ৪০ টি আলিম মাদ্রাসা, বি,এম কলেজ ৪৪টি, সরকারী টেকনিকাল কলেজ ১ টি ও বে- সরকারী কৃষি কলেজ ২ টি এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাত্র ১ টি। উপরোক্ত প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে নির্দ্বিধায় বলা যায় নওগাঁ জেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন আমাদের দাবী নয়-প্রাপ্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.