‘হরতালের সময় নিজের ঘর কী জিনিস, আর পরিবার কী; সবই ভুলে যাই। শুধু এটাই জানি, ডিউটি করতে হবে। ’ মুখজুড়ে কিছুটা ক্লান্তির ভাব, তবুও হাসিমুখে নিজের পেশাগত দায়িত্বের কথা বললেন ট্রাফিক পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক সৈয়দ নূরুল ইসলাম।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আজ রোববার বেলা একটার দিকে যখন এ কথা নূরুল ইসলাম বলছিলেন, তখন টানা ৮৪ ঘণ্টা হরতালের মাত্র সাতটি ঘণ্টা পেরিয়েছে। হরতাল শেষ হতে আরও ৭৭ ঘণ্টা বাকি।
এই সময়ের মধ্যে কখন বিশ্রাম নেবেন, আর কখনই বা খাবার খাবেন, এর কিছুই জানেন না নূরুল ইসলাম। নূরুল ইসলামের মতো পুলিশের অন্য সদস্যরাও বিরামহীন নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন নগরবাসীকে।
আজ সকাল ছয়টা থেকে ডিউটি শুরু হয়েছে নূরুল ইসলামের। তবে কর্মস্থলে হাজির হতে হয়েছে ভোর সাড়ে পাঁচটার সময়। সেজন্য তিনি সবুজবাগ এলাকার বাসা থেকে বের হন ভোর পাঁচটায়, যখন তাঁর ছেলেমেয়েরা সবাই ঘুমিয়ে ছিল।
পরিস্থিতির অবনতি না হলে, নূরুল ইসলাম বাসায় ফিরবেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। তখনো হয়তো তাঁর সন্তানেরা ঘুমিয়েই থাকবে। নূরুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই এটাই তো আমাদের জীবন। বাচ্চাদের আবদার মেটাতে পারছি না। ওদের পড়াশোনা কীভাবে চলছে, তা-ও জানি না।
সবকিছুই স্ত্রীর দায়িত্বে চলে। ’
হরতালের সময় পরিশ্রম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই উল্টো প্রশ্ন করে নূরুল ইসলাম বলেন, ‘হিসেব করলে দেখা যায় হরতালের সময় প্রতিদিন বিশ্রামের জন্য মাত্র চার ঘণ্টা পাই। এর ওপর আমাদের সাপ্তাহিক কোনো ছুটি তো নেই। এটি কি একজন মানুষের যথেষ্ট? সামাজিকতার বাইরে চলে যাচ্ছি। ’
পথে-প্রান্তরে দায়িত্ব পালনের সময় যে কজন সহকর্মী পাশে থাকেন, তাঁদের নিয়েও একসঙ্গে খাবার খাওয়া ওঠে না।
পালা করে সময় মিলিয়ে খাবারের কাজ সেরে নেন নূরুল ইসলামেরা। কিন্তু হরতালের সময় পুরো এক দিন খাবারের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ মেলে মাত্র ১০০ টাকা। নূরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য সময় মোটরসাইকেলে করে বাসায় গিয়ে খেয়ে আসি। এখন কি ১০০ টাকায় পেট চলে? তাই খরচ বেড়ে গেছে ভাই। ’
একই অবস্থা বাড্ডা থানার শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক (আজ হাইকোর্ট এলাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় দায়িত্বরত) আশিকুর রহমান খানের।
তিনি জানান, তাঁর পুরো পরিবার খুলনায় বসবাস করে। এমনও দিন যায় যখন মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে ক্ষণিকের জন্য কথা বলা সম্ভব হয় না। হরতালের সময় উল্টো বাড়ি থেকে ফোন করে তাঁরা সুস্থতার খবর নেন।
আশিক বলেন, ‘বাস পোড়ানো, মারামারি, বোমা বা ককটেল বিস্ফোরণ হলে তো ডিউটির শেষ হয় না। অনেক সময় পুরো ২৪ ঘণ্টাই মাঠে থাকতে হয়।
’
ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর আশিকুর বলেন, এখন আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড অফিসারের মর্যাদা পাচ্ছি। আশায় আছি হয়তো ১০ বছর পর প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার মর্যাদা পাব। এজন্য এত কষ্ট করছি। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক কষ্ট দূর হয়ে যায়, যখন দেখি আমি নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে পারছি। ’
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।