আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের ক্রিকেটে "স্পট-ফিক্সিং" - আবেগ ও বাস্তবতার এক দ্বান্দ্বিক সংঘর্ষ

সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে... মহা-সেন আসি আসি করেও বাংলাদেশে সেভাবে আসতে পারে নি। চালাতে পারে নি ধ্বংসযজ্ঞ। কিন্তু মহা-সেন না আসলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঠিকই ঝড় উঠেছে। আঘাত হেনেছে মহা-সেন, সিডর...অথবা প্রলয়ঙ্কারী সাইক্লোন। দেশের মানুষের আশার সাগরে একমাত্র যে জাহাজ, সেই “ক্রিকেট” নামের জাহাজের মাস্তুলে প্রচন্ড এক আঘাত হেনেছে “স্পট ফিক্সিং” নামের এক প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়।

যার ঘূর্ণিপাকে পরে অতীতেও হারিয়ে গেছে ক্রিকেটের অনেক রথী-মহারথী...এবার বাংলাদেশও হারাতে বসেছে তার সূর্যসন্তানদের। বিগত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক কিছুই ঘটেছে, যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন, আনকোরা। একসময় আমরা দেখতাম ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মত ক্রিকেটবিশ্বের “হেভিওয়েট” দেশের অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় ম্যাচ পাতানোর দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন। রাজপ্রাসাদ থেকে পতিত হয়েছেন আস্তাকুরে। আমরা দেখতাম, আর মনের অবচেতনেই নিজেদের বলতাম...আমাদের ক্রিকেটাররা কখনো এ পথে পা বাড়াবেন না।

পা বাড়াতে পারবেন না। এ অনুভূতি ছিল অনেক স্বস্তির, গর্বেরও। ভারতের মত ক্রিকেট হয়তো আমাদের কাছে “ধর্ম” নয়, “ইট ক্রিকেট, ড্রিঙ্ক ক্রিকেট” স্লোগানও হয়তো ঠিক আমাদের সাথে যায় না...কিন্তু ক্রিকেট আমাদের কাছে ছিল থরোথরো আবেগের অন্য আরেক রূপ। যে আবেগ দুকূলপ্লাবী স্রোতের মত আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত স্বপ্নের এক আশ্চর্য মায়াবী জগতে...যেখানে শুধু ভালোলাগাই থাকে, থাকে আবেগী এক ভালোবাসা। জিতুক অথবা হারুক...সবসময়ই এ দেশের মানুষ আমাদের ক্রিকেটারদের ভালোবেসেছে।

তাদের জন্য কেঁদেছে। রাতের পর রাত জেগে প্রার্থনা করেছে পরম করুণাময়ের কাছে। সবকিছুকেই কেন যেন বড় বেশি মিথ্যা বলে মনে হচ্ছে আজ। প্রথম আলোর প্রথম পাতায় যে শিরোনাম টা আজ দেখেছি, সেটা দেখে নির্বাক হয়ে গেছি। আমার মতই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন দেশের কোটি কোটি মানুষ।

স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই দেশের ক্রিকেটে তোলপাড় চলছে। মোহাম্মদ আশরাফুল কে নিয়ে চলেছে কানাঘুষা, সন্দেহ। সে সন্দেহ সঠিক নাকি অমূলক, সেটা নিয়ে অন্ধকারে ছিলাম। অপেক্ষায় ছিলাম, আকসুর তদন্ত রিপোর্ট এর। এ প্রসঙ্গে তাই কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিলাম।

কিন্তু আজ উৎপল শুভ্র এর এই প্রতিবেদন দেখে আসলে কি বলবো অথবা কি বলা উচিৎ, বুঝতে পারছি না। তাঁর এই প্রতিবেদন কতটুকু সঠিক, আমি জানি না। হলুদ সাংবাদিকতার দায়ে প্রথম আলো অনেকদিন ধরেই অভিযুক্ত। কিন্তু তার পরেও এরকম একটা ইস্যু নিয়ে তারা এত বড় একটা ঝুঁকি নিবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কাজেই আমরা ধরেই নিতে পারি, খবরটি শতভাগ সত্য না হলেও ৭০-৮০ ভাগ সঠিক অবশ্যই।

আর তা যদি হয়েই থাকে, দেশের ক্রিকেটে এখন ঘোর অমানিশা। এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিসিবি অভ্যস্ত নয়। অভ্যস্ত নয় এ দেশের হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী সাধারণ মানুষ। আশরাফুলের পাশাপাশি যে তিনজনের নাম এসেছে, দেশের ক্রিকেটের তিন দিকপাল বলা যায় তাদেরকে। তাঁরা তিনজনই একটা গৌরবময় সময়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।

আবেগ আসে। আসে অবিশ্বাস। এও কি সম্ভব? খালেদ মাসুদ পাইলট এবং মোহাম্মদ রফিক স্পট ফিক্সিং করতে পারেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। কাজেই আকসু এর তদন্ত রিপোর্ট এর আগে তাঁদের নিয়ে কোন মন্তব্য আমি করবো না। তবে খালেদ মাহমুদ সুজন এর ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ হতে পারছি না।

কারণ বিপিএল এ ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস এর যে ম্যাচটি আতশ কাচের নিচে আনা হয়েছে, সে ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল চিটাগাং কিংস। মাহমুদ সেই দলের কোচ। সন্দেহ এসেই যায়। আর তা ছাড়াও অতীতে অনেকবারই তিনি কিছু বেফাঁস কথাবার্তা বলে দলের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটিয়েছেন। ২০১১ এর বিশ্বকাপের সময় সাকিব-তামিম সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেছেন।

যার পরিণতিতেই কিনা, দলের মনোবল একেবারে শুন্যের কোঠায় চলে যায়। ঘটে যায় ৫৮ আর ৭৮ এর লজ্জ্বা। সাকিব-তামিমের অধিনায়কত্ব-সহ অধিনায়কত্ব কেড়ে নিতে তাঁর ছিল অগ্রণী ভূমিকা। আড়ালে থেকে তিনি কলকাঠি নেড়েছিলেন। চিটাগাং কিংস দলে থেকে তামিমের গত বিপিএল এ না খেলার পিছনেও পরোক্ষে ছিলেন এই ভদ্রলোক।

এসবের অনেক কিছুই মিডিয়ায় সেভাবে আসে নি। বর্তমান জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় এর সাথেও তাঁর সম্পর্ক ভালো না। মিডিওকার এই সাবেক খেলোয়াড় বড় বেশি কূটনৈতিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাক্তি। কাজেই ম্যাচ পাতানোর সাথে তাঁর সম্পর্ক উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও মনেপ্রাণে চাই, তিনি নির্দোষ প্রমাণ হন।

আমি নিজে ব্যাক্তিগতভাবে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিং এর একজন বড় ভক্ত। তাঁর দুঃসময়েও তাঁকে সমর্থন দিয়ে গেছি। আমার মত আরো অনেক ভক্তই তাঁর আছে। স্বভাবতই তাঁর বিরুদ্ধে স্পট ফিক্সিং এর অভিযোগ টা আমাকে বজ্রাহত করে দিয়েছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে তিনি নাকি স্পট ফিক্সিং এ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি এটাও বলেছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে সে ম্যাচ পাতানোর জন্য চাপ দিয়েছে। সত্য মিথ্যা জানি না। শুধু একটা কথাই বলার আছে, এটা যদি একটা বড় নীলনকশার অংশ হয়ে থাকে, তাহলে শুধুমাত্র আশরাফুল কে বলির পাঠা যেন না বানানো হয়। রাঘব বোয়ালেরা যেন পার পেয়ে না যায়। আর আশরাফুল কেও এর জন্য শাস্তি পেতে হবে।

তিনি যদি এর সাথে শুরু থেকেই থেকে থাকেন, তাঁর জন্য সমুচিত শাস্তি যেন তাঁকে দেওয়া হয়। যাতে করে আর কোন খেলোয়াড় তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ না করেন। আকসু এর তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত যেহেতু বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না, এর বেশি কিছু বলা সমীচিন হবে না। তবে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটা ভারতের ষড়যন্ত্র নয়। তারা তাদের মত ম্যাচ ফিক্সিং করেছে।

আমরা আমাদের মত। আশরাফুলের প্রাথমিক স্বীকারোক্তিই এর বড় প্রমাণ। আমরা জাতি হিসেবে বড় বেশি আবেগী। দেশে হাজারো দুঃখ দুর্দশা কে পাশ কাটিয়ে আমরা ক্রিকেট কে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। ক্রিকেট কে নিয়েই বাঁচতে চাই, হাসতে চাই।

আমাদের এ হাসি থাকবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দিবে। আবেগ আর বাস্তবতার সংঘর্ষ বড় নির্মম। আবেগময় হাসি বাস্তবতার জমিনে এসে রূপ নেয় বুকভাঙা কান্নায়। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের সামনে দাঁড়িয়ে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.