আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়িতে ব্যাস্ত রাজনৈতিক দলগুলি কল্পনাও করতে পারে কিনা সন্দেহ যে কাদের চক্রান্তের ক্রিড়নক হিসেবে তারা ভূমিকা পালন করছে।



১৯৬৫ সালের ২রা জানুয়ারি আইউব খান যখন ফাতেমা জিন্নাহকে পরাজিত করে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করে তখন তার দক্ষিণ এশিয়ার নেতা হবার উগ্র বাসনা পেয়ে বসে। সিআইএ তক্কে তক্কে ছিল। সিআইএ একটি টোপ ফেলে এবং আইউব খান তা গিলে ফেলে। এদিকে সিআইএ শিখন্ডি হিসেবে তৈরি করে রেখেছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নর কালাবাগের আমীর মুহাম্মদ খানকে। আইউব খতম হলেই তিনি বসবেন ক্ষমতায়।

পাকী-মার্কিন সামরিক চুক্তি অনুযায়ী ওই সময় পাকিস্তানের সমরনীতি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত ছিল মার্কিন সমর বিভাগের হাতে। যে সংস্থার মাধ্যমে পেন্টাগন পাকিস্তানের সমরনীতির উপর খবরদারি করতো, সেটা “মিলিটারি অ্যাসিট্যান্স অ্যাডভাইজারি গ্রুপ” সংক্ষেপে ‘ম্যাগ’। রাওয়ালপিন্ডির সেনা সদর দফতরই ছিল ম্যাগ-এর দফতর। ওই বছর অর্থাৎ ১৯৬৫ সালের ৬ আগস্ট কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স তাদের নেতা শেখ আব্দুল্লাহর গ্রেফতার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সিআইএ দিনটিকে সামনে রেখে পরিকল্পনা নেয়।

ম্যাগ আইউব খানকে পরামর্শ দেয় শ্রীনগরে ঢুকে গোলযোগ তৈরি করতে, তাহলে কাশ্মীর দখল পরিকল্পনা সুবিধাজনক অবস্থানে আসবে। কাশ্মীরের একটি এলাকা উরিপুঞ্জ, সেখান থেকে শ্রীনগরে যাবার হাঁটা পথ রয়েছে। ভারতীয়রা এলাকাটাকে বিপজ্জনক মনে করতো না বলে প্রহরীও রাখেনি। হালকা অস্ত্র-শস্ত্র এবং খাদ্যসম্ভার দিয়ে পাকিস্তান বিমান বাহিনী গোপনে আকাশ পথে কয়েক হাজার উপজাতীয়কে উরিপুঞ্চ এলাকায় নামিয়ে দেয় ৫ আগস্টের দিন পাচেক আগে। শ্রীনগরে ঢোকার সময় দেখে ফেলে এক রাখাল বালক।

খবর চলে যায় নিকটতম পুলিশ স্টেশন। সেখান থেকে শ্রীনগর পরে দিল্লি। ভারতীয় সেনাবাহিনী পেছন থেকে এসে ঘেরাও করে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের। আইউব খান ম্যাগের কাছে জানতে চান এখন কি হবে? ম্যাগ পরামর্শ দেয় চাম্ব সেক্টর দিয়ে সেনাবাহিনীর নিয়মিত ইউনিট ঢুকিয়ে দিতে। ম্যাগের পরামর্শে সেনাবাহিনীর নিয়মিত ইউনিট জম্মু কাশ্মীর সীমান্ত অতিক্রম করে এবং সূচিত হয় ১৯৬৫ সালের পাকী-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধের।

ভারতীয় সেনাবাহিনী বাধা দিলেও পাকিস্তান সেনাবাহিনী আখনুর ও জারিয়ান দখল করে জম্মুর দিকে এগিয়ে যায়। আইউব খান তখন অতিমাত্রায় উৎসাহিত। ম্যাগ শ্রীনগর দখলের পরামর্শ দেয়। পরামর্শ অনুযায়ী আইউব খান তার সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশকে শ্রীনগরে ধাবিত হবার নির্দেশ দেয়। এমনকি লাহোরের দিক থেকে ভারতীয় সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণের মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সেনাও রাখেননি।

এবার সিআইএ তার শেষ চালটি চালে। দিল্লিকে পরামর্শ দেয় খেমকারান সেক্টর দিয়ে অরক্ষিত লাহোরে ঢুকে পড়তে এবং ৬ই সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় পাকী-ভারত সর্বাত্মক যুদ্ধ। ৬ সেপ্টেম্বর খেমকারান সেক্টর দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী আক্রমণ পরিচালনা করতেই আইউব খান বোঝেন ভয়ঙ্কর ফাঁদে তিনি পা দিয়েছেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাগ’কে অপসারণ করে সেনাবাহিনীর কমান্ড নিজ হাতে তুলে নিলে যুদ্ধের মোড় ভিন্ন দিকে যায়- সে ইতিহাস সবার জানা। পাঠক, জেনে রাখুন পাকিস্তান তখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ভারত তার শত্রু।

আমাদের দেশে দুটি দল দুই দেশের মতো একে অপরের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। কামড়া কামড়ি করছে। শিখন্ডি হিসেবে রয়েছে নোবেল লরেট এবং আরো অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ বুদ্ধিদাতা এজেন্টরা দু’পক্ষকেই বুদ্ধি বিলিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু পাশ কাটিয়ে দেশকে বাঁচানোর জন্য ক্ষমতা হাতে নেয়ার মতো যোগ্য লোকের এখন অভাব।

যারা আমাদের বন্ধুর বেশে তারাই শত্রু, আর শত্রু সে তো ভয়ঙ্কর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.