কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী। “... প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র সঙ্গে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে একটা সমঝোতা হতেই হবে। ” -তারেক শামসুর রেহমান
দেশটা কী শুধু আওয়ামীলীগ আর বিএনপি’র ???
আপনার, গত ডিসেম্বর ১৯, ২০১২ ইং বুধবার, দৈনিক কালের কণ্ঠ’র মুক্তধারা পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হরতালের রাজনীতিতে বাংলাদেশ শিরোনামের লেখাটি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে কিন্তু খুব কষ্টে ম্যালেরিয়া সারানোর সমান প্রত্যাশায় কিন্তু কুইনাইন গেলার প্রচণ্ড তিক্ততা সয়ে পড়লাম। স্বভাবতই আপনার লেখার প্রতি আমার একটা গভীর টান আর দারুণ আকর্ষণ থাকে। কেননা, আপনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের অধ্যাপক।
তাছাড়া আপনি নিজেকে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিশেবে পরিচয় দেন। আপনি জ্ঞানী মানুষও বটে হে।
কিন্তু আপনার লিখাটা শিরোনামে চটকদার। শুধু মেদ-চর্বিতে ভরপুর। মশলাটাও যেখানে ঠিকমত মাখানো হয়নি।
হলের ডাইনিংয়ের বারো টাকা মুল্যের খিচুড়িও বোধহয় এরচে’ ভালো। লেখাটা চর্বিত চর্বন ছাড়া আর কিছুই না। অনেকটা জামার আস্তিনে লুকানো শেষ বয়েসী বিলুপ্তপ্রায় যৌবনকে পুঁজি করে, গুলশান-বনানীর আন্টিরা মুখে কড়া মেকাপের প্রলেপ দিয়ে রঙ-চঙ মেখে পার্টিতে ভাব ধরে থাকা, ছেলে ভুলানোর শঠতার মতই।
স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু আপনি রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দাবীদার অতএব আপনার লেখা থেকে আমরা বেশি কিছু আশা করতে পারি। কিন্তু আপনার লেখাটায় এমন কিছু নেই যা থেকে আলাদা কিছু পাওয়া যায় যা একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দাবীদারের কাছ থেকে পাওয়া উচিৎ।
আপনি যদি বলেন, আমি সাধারণের জন্যে লিখেছি, তাও বেমানান। লেখাটায় ইতিহাসের কিছু ঘটনার প্রায় অপ্রাসঙ্গিক টানা-হেঁচড়া আর সমসাময়িক কিছু রাজনৈতিক চিত্রের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন। কিন্তু বিশ্লেষণের স্টাইলটা ছিল অনেকটা সম্প্রতি গজিয়ে উঠা বিশেষ করে দাদাদের দেশের কিছু টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্যাকেজ নাটকে প্রদর্শিত বউ-শ্বাশুড়ির চুলোচুলির দৃশ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বয়ানের মত। কাট-কপি-পেষ্ট ও বলা চলে। যে আলোচনা আপনার লেখায় এসেছে তার চেয়ে ঢের ভালো জানেন আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অফিস সহকারি ফয়েজ ভাই।
আর আলোচনায় যে সমাধানের পথ আপনি বাতলে দিয়েছেন বিশ্বাস করুন তার চেয়ে আরো যৌক্তিক, কার্যকরি এবং গভীর পর্যবেক্ষণী নিয়ে একটা সুন্দর সমাধান দিতে পারেন আমাদের শহীদ সালাম-বরকত হলের চা-সিগ্রেট বিক্রেতা নাজির ভাই। সুতরাং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক আলোচনায়, সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, এতদসংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ে ডাক্তার, কবিরাজ, ইঞ্জিনিয়ার, বৈদ্য কীভাবে কাজ করেন তার প্রাসঙ্গিকতা বুঝতে আমার বেগ পেতে হলো না। যে দেশে বীরশ্রেষ্ট রুহুল আমীনের ছেলে ভ্যান চালিয়ে দিনাতিপাত করে, নিরপরাধ সাধারণ পথচারি খুন হয় সরকারি দলের পাণ্ডাদের হাতে, খোদ প্রধানমন্ত্রী দূর্নীতিবাজদের স্বীকৃতি দেয় দেশপ্রেমিক বলে, শেয়ার বাজার লুণ্ঠন, শ’য়ে শ’য়ে মানুষ পুড়িয়ে একদিনের শোক পালনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব সমাপন, পাথরে চাপা পড়া লাশ টাকায় কিনে নেয়ার পৈশাচিক উল্লাস, তখনো বিরোধীদল আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনর্বহালের জন্য, জামাতি বজ্জাত রাজাকারের হরতালে বিরোধীদলের নৈতিক সমর্থন দেয়, ক্ষমতায় আসার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠছে আর এমন সময় আপনি বলে উঠলেন সমঝোতা দরকার। এদের হাতে আবারো রাষ্ট্র ক্ষমতা দিতে আপনার মধ্যে কোন দ্বিধা রইল না। আপনার মত এহেন একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দূরবস্থায় যদি সরকার আর বিরোধীদলের চামচামিই করে বেড়ায়, সাহস নিয়ে সহজ সমাধানটা যদি তুলে না ধরেন, আপনি বলতে পারলেন না তাঁদের- আপনারা দুজনই চুপ করুন, আপনারা অক্ষম (সক্ষম বলে কোন কালেই মনে হল না), অবসরে যান তবেই দেশের মঙ্গল।
আপনি সেটা পারলেন না। সুতরাং আপনি চুপ করেন। নপুংসুক মার্কা লেখা বন্ধ করেন। চামচাগিরি থামান, দেশের মঙ্গল হবে। আপনাদের মত ভাড়া খাটা, ক্ষেপ মেরে বেড়ানো জ্ঞানভণ্ডদের জন্যই আজকে দেশের এই বেহাল অবস্থা।
সমঝোতা যে দরকার সেটা আমরাও ভাল করে জানি। কিন্তু সেটা আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র মধ্যে এবং সেখানে প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় লোকজন, আওয়ামীলীগ-বিএনপি ত্যাগ করা কিছু লোকজন, জন-মানুষের প্রতিনিধিদের মধ্যে, খালেদা-হাসিনা’র মধ্যে নয়। মিস্টার রেহমান, লিখেছেন “... তাই একটা সমঝোতা অত্যন্ত জরুরি। ” “... প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র সঙ্গে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার ব্যাপারে একটা সমঝোতা হতেই হবে। ” “... আর পথ খোলা একটাই-সংলাপ।
” বাহ্ ! কী চমৎকার শুনাইলেন গো। খাচ্ছেন-দাচ্ছেন, অলিভ অয়েল মাখছেন, আমোদ-ফূর্তি করছেন, বেশ তো আছেন। সত্যি করে বলেন তো, এজন্য বিএনপি আপনাকে কত টাকা দিয়েছে। দেশটা কী শুধু আওয়ামীলীগ আর বিএনপি’র ???
জনাব রেহমান, আপনি লিখেছেন “... ১১ ডিসেম্বরের হরতালের সময় যখন রিকশায় একাকী ঢাকার রাস্তায় ঘুরেছি, তখন অনেক কথা ‘কানে’ এসেছে। মানুষ অনেক কথা বলে।
সব কথা শুনতে নেই। হিসাবটা মেলাতে চাই। ” প্রথমত, আপনি হরতালের দিনেও রিকশায় ঢাকার রাস্তায় ঘুরেছেন আর আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন আপনার ক্লাসের অপেক্ষায় আপনার পেছনে প্রভুভক্ত কুক্কুরের মতন ঘুরঘুর করে তখন শারিরীক অসুস্থতার কথা বলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আপনার যাতায়াতের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করে রেখেছে। ফাঁকিবাজ।
দ্বিতীয়ত আপনি কী এই হিসাবটা মিলাতে চেয়েছেন কীভাবে ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন কিংবা বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচি (ভিসি) হবেন। তৃতীয়ত আপনার মত জ্ঞানপাপীদের ঝামেলা হচ্ছে আপনারা সাধারণ মানুষের কথা শুনতে অনিশ্চুক। শুধু নিজেদেরটাই শুনেন। একদলের কাজ হচ্ছে ভারতের চামচামি অন্যদলের কাজ হচ্ছে আম্রিকার দালালী আর তাদের কথা শোনা। আর সেসব কথা আপনাদের একদলের কাজ হচ্ছে খালেদাকে শুনানো অন্যদলের কাজ হাসিনাকে।
তাদের যুক্তিহীন বক্তব্যকে শ্রুতিমধুর ও যৌক্তিক করে তোলার জন্য লেচকার (লেকচার না) দিয়ে বেড়ান, লেখালেখি করেন, স্তুতি-বন্দনা করেন। অথচ আমরা সাধারণ মানুষ, যাদের কথা আপনি শুনতে চান না, তারা কী বলে, জানেন? তারা বলে, বাংলাদেশের দালাল চাই। বাংলাদেশের জন্য দালাল চাই। জ্ঞানপাপাচারী চাই না।
রেহমান সাহেব, আপনি আরো লিখেছেন, “... দেড় বছরের ছোট্ট শিশু সিয়াম এসেছিল মৃত মায়ের বকেয়া বেতন তুলতে।
আমাদের মুনাফালোভী গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের ওই অবুঝ শিশুর নিষ্পাপ ছবি দেখেও মন গলেনি। কেউ কি নিতে পারতেন না ওই অবুঝ শিশুর লেখা-পড়ার দায়িত্ব!” কী করে পারবে হে, জনাব রেহমান? আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার মত শিক্ষকদের (?) অত্যন্ত স্নেহময় আদর মাখানো দায়িত্ব নেয়ার কারণে যখন শিক্ষার্থীদের আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়। আপনার মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যখন এই অবস্থা আর তারা তো ব্যবসায়ী, টাকায় মানুষ কিনে। আপনি বুকে হাত রেখে বলুন, আপনার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে আপনি কতজন অসহায় শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়েছেন? ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কতজন শিক্ষার্থীকে পথে বসিয়েছেন??? আপনার বিভাগের জনৈক ছাত্র একইসাথে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স অধ্যয়নের অপরাধে আপনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বাতিল করে দিয়েছেন। আপনার যেদিন বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব শেষ হয় সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে “নাজাত দিবস” পালন করা হয়েছিল, বুঝেন কতটা তীব্র ঘৃণা, অবহেলা, ক্ষোভ আর ক্রোধ থেকে ছাত্ররা তাদের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এই কাজটা করতে বাধ্য হয়? ৫০ নম্বর পেলে যে শিক্ষার্থী এমফিল প্রথম পর্বের পরীক্ষায় পাশ করে তাকে আপনি ইচ্ছে করে ৪৯ নম্বর দিয়ে ফেল করিয়ে দিয়েছেন পরবর্তীতে যা ভিসি স্যারের রিভিউর মধ্যে ধরা পড়ে।
আপনি কীভাবে আদর্শের বুলি আওড়ান? সমস্ত লেখাজুড়ে আপনি হরতাল নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে, মির্জা ফখরুলকে কেন গ্রেফতার করা হলো এ বিষয়ে (অবশ্য মির্জা সাহেবকে গ্রেফতার বিষয়ে আমিও ঘৃণা প্রকাশ করি)। হ্যাঁ, প্রসঙ্গত নানা কথা আসতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে আড়ালে আপনি যে চামচামিটা করলেন সে বিষয়ে। আচ্ছা, আপনার কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষার খাতায় এরকম করলে আপনি তাকে ফেল করিয়ে দিতেন এবং ডেকে দুটো কড়া কথা শুনিয়ে দিতেন। বলতেন তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
তুমি তো আমার লিষ্টের/পছন্দের ছাত্র না।
ভাগ্য আপনার ভালো, আপনি নামের আগে ডট সমেত ড (ড.) টা লাগাননি। তাহলে হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গতে পারতাম। বাংলাদেশের আইনে “white collar crime” বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকলে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করে দিতাম “white collar criminal” হিশেবে।
সুতরাং আপনি এবার চুপ করুন।
দুইজনের কারণে এমনিতেই আমরা অতীষ্ট, তার ওপর আপনি/আপনার। ওফ্ অসহ্য।
বিশেষভাবে দ্রষ্টব্যঃ কী ধরণের লিখা এখন আপনার লেখা উচিৎ, তার একটা নমুনা আপনার জ্ঞ্যাথার্তে এখানে লিঙ্ক আকারে সংযুক্ত নিষিদ্ধ ইশতিহার করে দিলাম। সারাজীবন তো ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে এ্যসাইনমেন্ট করিয়ে নিয়ে সেটা সম্পাদন করে নিজের নামে চালিয়ে দিলেন। আজও না হয় তাই করলেন, কিন্তু আপনি লিখলে হয়ত তার গুরুত্ব ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।