যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই আমার কোরাণ শিক্ষা
ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়ার পর, আমরা ঢাকা শহরের মালিবাগে নতুন বাসা নিলাম। পাশের বাসার আন্টি এসে আম্মুকে জিগ্যেস করলেন, আপনার মেয়েকে কোরাণ শিক্ষা দেন না? আম্মু বললো, ওতো এখনো অনেক ছোট। আন্টি বললেন, যত তাড়াতাড়ি ধর্ম-কর্মের শিক্ষা দিবেন, সেটা মেয়ে মানুষের জন্য ততো ভালো। আমাদের বিল্ডিং-এ একজন হুজুর আসেন ছোট ছোট মেয়েদেরকে পড়াতে। সবাই মিলে পড়লে বেতন কম লাগতো।
অর্থ্যাৎ মূল উদ্দেশ...্য হলো, কম টাকায় সন্তানকে কোরাণ শিক্ষা দেয়া আর আরবী শিখানো। প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী আরবী আর কোরাণ বুঝুক আর না বুঝুক তাকে তা গিলতেই হবে।
এবার আসি এই হুজুর প্রসঙ্গে,
যিনি আমাদের ভবনে রোজ এসে আমি সহ আর কিছু মেয়েকে কোরাণ পড়াতেন, এক একদিন এক একজনের বাসায়। সেই সময় হুজুরের জন্য থাকতো স্পেশাল নাস্তার ব্যাবস্থা। নাস্তাটা সামনে আসলে হুজুরের চোখ খুশীতে চকচক করতো।
যদিও তিনি বলতেন টিভি দেখা হারাম, কিন্তু সার্কের আর ভোটের সময় সকালে টিভি চললে, তিনি আমাদের ঘুরিয়ে বসিয়ে কোরাণ পড়তে দিয়ে সিনেমা দেখতেন। ( ঐ সময় বাংলাদেশে শুধু বিটিভি ছিলো, এবং স্পেশাল প্রোগ্রাম না থাকলে সকালের কোন অধিবেশন ছিলনা। )
হুজুরেরর হাতে সবসময় একটা জালিবেত থাকতো। কেউ যদি একটা উচ্চারণ ভুল করতো, তাহলে তিনি সেই জালি বেত দিয়ে পিটানো শুরু করতেন। একদিন হুজুর আমাদের ভবনের একটি মেয়ের উপর ক্ষেপে গিয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে জালি বেত দিয়ে পিটানো শুরু করলেন।
মেয়েটির অপরাধ ছিলো, উচ্চারণ ভুল এবং নামাজ পড়ানো শিখানোর সময়, হুজুর দেখলেন তার পায়জামার এক পায়ের অংশ উপরে উঠে গেছে। হায়রে, ঝপাৎ , ঝপাৎ তিনটা বেত মারার পর সেই মেয়েও অজ্ঞান হওয়ার ভান করলো। ভান করলো বুঝতে পারলাম এই কারনে, হুজুর ঠিক রুম থেকে বের হওয়ার পর মেয়েটি এক চোখ খুলে কানায় দেখলো হুজুর সত্যি সত্যি গ্যালো কিনা। আন্টি (মেয়েটির মা) এসে ঘোষণা দিলেন , এই হুজুরের কাছে আমার মেয়ে আর কোরাণ পড়বে না। যদিও আন্টি কন্যাকে দিনে চারবার বেত্রাঘাত করে পাড়া মাতাতেন।
[বিঃ দ্রঃ সেই আপুর ঐ হুজুরের কাছে কোরাণ পড়া বন্ধ হলেও আমার হয় নাই ]
পাশের বাসার আন্টি বললেন, হুজুর যেই জায়গায় মারবে, সেই জায়গা নাকি বেহেস্তে যাবে এবং একজনের জন্য অন্যদের কোরাণ শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ হবে না। সুবাহানল্লাহ। সত্যি ধর্মান্ধতা বিশাল বড় রোগ। হুজুর মারলেও শরীরের সেই অংশ বেহেস্তে যায়. এই শিক্ষা আমার ছোটবেলায় পাওয়া।
একদিন হুজুর আমাকে জিগ্যেস করলেন, তোমার আব্বা কি ঢাকায় কোথায় জমি-জমা কিনেছেন? আমি বললাম, না হুজুর।
উনি বললেন, ঢাকা শহরে একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে তোমার আব্বা একটি বাড়ি বানাইতে পারলেন না, বাড়ি তো দূরের কথা জমিও নাই। আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম, নাই হুজুর। তিনি বললেন, আর আমি মসজিদের ছোট হুজুর হইয়াও ( তিনি তিন বেলা কয়েকটা বাসায় পড়াতেন। ঐ বাসাগুলোতেই তার খাওয়া-দাওয়ার ব্যসস্থা ছিলো আর মসজিদে চাকুরী করতেন, দুপুর তিনটা থেকে ৬টা পর্যন্ত মসজিদে বাচ্চাদের আরবী পড়াতেন) রামপুরার ঝিলে একখান জমি কিনে ফেলছি। তোমার আব্বা পারলো না।
উনারে বইলো, উনি চাইলে ঐ ঝিলে উনার জন্য জমির ব্যবস্থা করতে পারি শুধু কিছু কমিশন লাগবে।
এই ছিলো আমার হুজুর, কোরাণ শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ার কেন ঢাকায় জমি কিনবেনা না কেন তা নিয়ে তার মাথা ব্যাথা!! আমার বাবা সারা জীবন সৎ মানুষ আর তার ঢাকায় জমি বা বাড়ি কেনার আগ্রহ কোনদিনই ছিলো না। তার একটাই স্বপ্ন, ছেলে-মেয়েরা বড় হবে, নিজেদের মতো ক্যারিয়ার গড়ে নিবে আর তিনি অবসর নিলে, তার স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে গিয়ে শেষ জীবনটা পার করবেন।
তারপর থেকে সারাজীবনই দেখেছি, আমাদের হুজুররা মুখে যতই পরকালের কথা বলেন, আসলে ওনারা পরকালের চেয়ে ইহকালই বেশি ভোগ করেন।
ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।