ফিলিপাইনে গত শুক্রবারে প্রলয়ংকরী টাইফুন আঘাত হানার চার দিন পর দেশটির সরকার আজ মঙ্গলবার ‘জাতীয় দুর্যোগ অবস্থা’ জারি করেছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত মানুষেরা লুটপাট শুরু করেছে।
রয়টার্স বলছে, প্রেসিডেন্ট বেনিগনো অ্যাকুইনো ঘূর্ণিঝড়-আক্রান্ত জনপদ টাকলোবানে লুটপাট ও সংঘাত বন্ধে সেনা মোতায়েন করেছেন। ত্রাণকাজে সহায়তা করতে ওই দেশে রণতরি পাঠিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
টাকলোবান শহরের প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। নগর ও হাসপাতাল প্রশাসনের লোকেরা নিজ পরিবারের মানুষদের বাঁচানো ও খাবার সঞ্চয়ে উঠেপড়ে লেগেছেন।
ফিলিপাইনের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন রুবেন গুইনলবে রয়টার্সকে জানান, ‘কার্যত সেনাবাহিনী ছাড়া সরকারের আর কোনো বিভাগ এখন কার্যকর নেই, এটা ঠিক নয়। আমরা এখানে সরকার চালানোর দায়িত্ব নিতে আসিনি। ’
অরাজক পরিস্থিতি
ঝড়ের আগে টাকলোবানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার।
কিন্তু এখন শহরটির পথে-মাঠে-বাটে প্রচুর লাশ ছড়িয়ে আছে।
ফিলিপাইনের স্বরাষ্ট্রসচিব ম্যানুয়েল রোক্সাস বলেন, ঝড়ে টাকলোবানের সরকার ভেসে গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউ মারা গেছেন, কেউ হারিয়ে গেছেন আবার কেউ এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে, কাজ করতে পারছেন না। দায়িত্ব পালনের জন্য শহরের ২৯৩ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০ জনকে পাওয়া গেছে।
রোক্সাস বলেন, ‘আজ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত।
লুটপাটের খবর এখনো পাইনি। খাবারের সরবরাহ আসছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার খাবারের প্যাকেট আসছে। প্রতিটি প্যাকেট পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার তিন দিন খেতে পারবে।
ফিলিপাইনের সমাজসেবা ও উন্নয়ন বিভাগের সচিব কোরিজন সোলিমান বলেন, টাকলোবানের ৪৫ হাজার পরিবারে এক-তৃতীয়াংশের কাছে রিলিফ পৌঁছেছে।
অধিকাংশ দোকান বন্ধ। লুটপাটের ফলে বেশির ভাগ দোকান ধ্বংস বা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিমানবন্দরে গন্ডগোল
আজ মঙ্গলবার টাকলোবান বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর দুটি সি-১৩০ কার্গো বিমান অবতরণ করে। বিমান দুটিতে ত্রাণের চেয়ে সৈনিকই গেছে বেশি।
সেনাদের মধ্যে বিশেষ বাহিনীর লোকদেরও দেখা গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সরকার শহরটিতে জনবিক্ষোভের আশঙ্কা করছে এবং তা দমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শহরটিতে এখন পর্যন্ত খুব অল্প ত্রাণ পৌঁছেছে।
বিমানবন্দরে নামার পর সেনাদের ওই স্থানেই মোতায়েন করা হয়। রাজধানী ম্যানিলায় ফিরতে উদগ্রীব লোকজনকে ঠেকাতে সেনাদের ব্যবহার করা হয়। ভারী বৃষ্টিতে অপেক্ষমাণ মানুষগুলো ভেবেছিল, তারা বিমান বাহিনীর বিমানগুলোতে করে ফিরতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের যুদ্ধজাহাজ
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের আঘাতে ছয় লাখ ৬০ হাজার মানুষ এখন গৃহহারা, যাদের মধ্যে অনেকের কাছেই খাবার, পানি ও ওষুধের সুবিধা পৌঁছানো যাচ্ছে না।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ত্রাণ সাহায্যের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য লবণাক্ত পানিকে স্বাদু পানি করার যন্ত্র বহনকারী যুদ্ধজাহাজ ও সেনা বহনকারী বিমান পাঠিয়েছে। ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, এইচএমএস ডারিং সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রা শুরু করেছে এবং দুই-তিন দিনের মধ্যে দুর্গত এলাকায় পৌঁছে যাবে ।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।