আমি আমজনতা । আপনাদের মতন এই দেশের সব কিছুর ভূক্তভোগী । । বর্তমান বাংলাদেশে একটি প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত এর ক্যাম্পাস। আমাদের ক্যাম্পাসেই আছে দেশের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার যেখানে আপনি পাবেন মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা অনেক বই, ছবি, পোষ্টার সহ অনেক ডকুমেন্টের বিশাল সংগ্রহ।
বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তাচেতনার স্থান। সেই মুক্ত চিন্তভাবনার সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের গৌরবজ্জল ইতিহাস ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেই আমরা চেষ্টা করি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কিভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায়। আমাদের অনুপ্রেরণা বীর মুক্তিযোদ্ধারা, বীরাঙ্গনারা, জাতীয় নেতারা। তাদেরকে স্মরণে রাখতে, প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ শুরুর অনুপ্রেরণা যাতে মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে আসে সেইজন্য জন্মলগ্ন থেকেই ক্যাম্পাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে ভাস্কর্যের দাবি ছিলো।
অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বেশ কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকবৃন্দের সহায়তায় স্থাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাস্কর্য চেতনায় ৭১ ।
নি:সন্দেহে সেদিন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আনন্দের দিন। সেদিনই প্রশাসন থেকে ঘোষণা এসেছিল এই ক্যাম্পাসেই গোলচত্বরে স্থাপন করা হবে দেশের সবচাইতে সুন্দর মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য। আমরা আশায় বুক বাধলাম।
ক্রমশ কাছে চলে এসেছে সেই দিন।
নতুন ভাস্কর্যের থিম একজন মা যিনি তার সন্তানকে আশীর্বাদ করছেন যুদ্ধে যাবার আগমুহুর্তে। সেই সন্তান বন্দুক কাধে বিদায় নিচ্ছে তার মায়ের কাছ থেকে। অনিশ্চিত তার জীবন। সে আর কখনো তার মাথায় মায়ের এই কোমল স্পর্শ পাবে কিনা জানেনা। দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার জন্য গর্ভধারিনী মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার এই দৃশ্যই মনে করিয়ে দেয় একাত্তরের সেই দিনগুলির কথা।
এই ভাস্কর্য আমাদের অনুপ্রাণিত করবে দেশমাতৃকার মঙ্গলের জন্য কাজ করতে।
মুক্তিযুদ্ধ ছিলো আপামর বাঙালীর যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে সব বাঙালী এক ছিলো। ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস নির্বিশেষে সব দেশপ্রেমিক বাঙালী ছুটে গিয়েছিলো তার মাকে স্বাধীন করবে বলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধর্ম, বর্ণ সবকিছুর উপরে।
অনেক কিছুই হবে, হচ্ছে, হয়েছে। অনেক মতামত থাকবে। কিন্তু সব মতামতের উপরে দেশ। দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ। শাবিপ্রবি সবসময় প্রগতিশীলতার পরিচয় দেয় এবং সবসময় দেবে।
যে কোন ধরণের বাধা-বিপত্তি, দন্দ্ব এড়িয়ে আমরা দেশের জন্য কাজ করে যাবো। আমরা সবাই চাই এই অনিন্দ্যসুন্দর ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হোক শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে।
আমরা কোন বিপক্ষ শক্তি নিয়ে ভাবিনা। ভাস্কর্য আমরা চাই, ভাস্কর্য হবে। যে কোন উপায়েই হবে।
শাবিপ্রবির হাজার হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র-শিক্ষকের এটা প্রাণের দাবী।
সকল ধর্ম, আদিবাসী সবার শহর এই সিলেট। মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি ধারণ করে সিলেটের সাধারণ মানুষ। আমরা সবাই চাই সিলেটেই থাকুক মুক্তিযুদ্ধের সবচাইতে সুন্দর ভাস্কর্যটি।
এজন্য দরকার সব মতামত, ভুলবোঝাবোঝি, রাজনৈতিক দন্দ্ব উপেক্ষা করে একই ময়দানে সর্বস্তরের মানুষ একে অপরের হাত ধরে একত্রিত হওয়া।
১৬ কোটি মানুষ অনেক ব্যাপারেই ভিন্নমত হতে পারে। কিন্তু একটা ব্যাপারেই তারা এক। সেটি হলো ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধ। আশা করি সেই যু্দ্ধের ইতিহাস আমরা ধারণ করে যাবো সবসময় এবং সবাই হাতে হাত রেখে এক হবো শাবিপ্রবির গোলচত্বরে। আমাদের প্রত্যেকের বুকে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশের জন্য ভালবাসা।
সবাই মিলে স্থাপন করবো এই ভাস্কর্য।
আজ থেকে অনেক বছর পর যখন ক্যাম্পাসে ঢুকবো তখন এই ভাস্কর্য আমাকে মনে করিয়ে দেবে, মুক্তিযুদ্ধের এই ভাস্কর্য স্থাপনে আমারো হাত আছে। বুক ভরে যাবে দেশের জন্য ভালবাসায়। মনে হবে আমরা আলাদা কোথায়? ধর্ম-বর্ণ-মতামত নির্বিশেষে আমরা বাংলাদেশীরা এক আছি সবসময়। এই ভাস্কর্যই হবে তার প্রমাণ।
তাই সবার প্রতি আমন্ত্রণ রইলো। আসুন আমাদের সাথে হাত মেলান। চলুন সবাই মিলে স্থাপন করি এই ভাস্কর্য।
এইখানেই স্থাপিত হবে সেই ভাস্কর্য।
আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে উঠলে গো মা রাত পোহাবে তবে।
আসুন জেগে উঠি। বাংলা মাকে বলি, “মা তোমার ছেলেরা তোমার সাথেই আছে”। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।