দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমাগত। নির্বাচন কমিশন যে কোনো মুহূর্তে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ৫ নভেম্বর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের লক্ষ্যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে (চলতি সপ্তাহে) বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করবেন। আর নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে বা চতুর্থ সপ্তাহের শুরুতে সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিরা সবাই পদত্যাগ করলে, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আগ পর্যন্ত দেশ কীভাবে চলবেÑ গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, পদত্যাগপত্র জমা দিলেও রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ না করা পর্যন্ত মন্ত্রিরা স্বপদে বহাল থাকবেন এবং তাঁরা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
ইতোমধ্যে মন্ত্রিরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে শুরু করেছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ৭ নভেম্বর বলেছেন, তিনি দু’এক দিনের মধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও অনুরূপ কথা বলেছেন। ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর শ্রীলঙ্কা সফরের আগে ৫২ সদস্যের পুরো মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রী বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, মন্ত্রিদের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় ছোট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করবেন। বিএনপি সর্বদলীয় সরকারে আসলে মন্ত্রিপরিষদের আকার হবে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট। আর বিএনপি না আসলে এই সরকারের আকার হবে ২০ সদস্যের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ থেকে প্রধানমন্ত্রী যাকে ইচ্ছা রেখে, যাকে ইচ্ছা বাদ দিয়ে ছোট মন্ত্রিপরিষদ গঠন করবেন।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেদিন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে, সেদিনই মন্ত্রিরা পদত্যাগ করবেন।
এর পরদিনই নতুন নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা হবে। ’
এসবের আলোকে বলা যায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা; বর্তমান মন্ত্রিসভার পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভোট গ্রহণ ও আনুষঙ্গিক কর্মকা-ের জন্য নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ৫৫ দিন সময় দরকার। জানুয়ারির ৫ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ ধরে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে।
এই হিসাব ঠিক থাকলে দেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে দুই মাসের মতো সময় আছে।
যদিও বর্তমানে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড় থেকে ইতোমধ্যে দুই দুইটি ৬০ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল পালন করেছে। তারপরও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, পুরো দেশেই নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। বিএনপি হরতালের মিছিলে যে ব্যানার ব্যবহার করছে, তাতেও সম্ভাব্য প্রার্থীর ছবি জুড়ে দিচ্ছে, যা এর আগের হরতালগুলোতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি একসঙ্গে দুই নীতি গ্রহণ করেছে। তারা হরতালও করছে, আবার নির্বাচনি প্রচারণাও চালাচ্ছে।
মোট কথা হলো নির্বাচনি আমেজ শুধু শাসকদলের মধ্যেই বিরাজ করছে না, বিরোধী দলের মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছে। বজ্রকঠিন হরতালের এমন ম্যাড়ম্যাড়ে রূপ দেখে বিষয়টি সহজেই অনুধাবন করা যায়। গত দুই সপ্তাহে মোট ১২০ ঘণ্টার হরতালে রাজধানীর রাজপথে বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতাকে দেখা যায়নি। এমনকি ঢাকা মহানগর বিএনপির কোনো নেতাকে রাজপথ দূরের কথা, অলিগলিতেও একটি মিছিল করতে দেখা যায়নি। সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাসরা যেন এক প্রকার হারিয়েই গেছেন।
অনেকে বলছেন, ঢাকার রাজপথ গরম করার মতো এই দুই নেতা মূলত আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত নেই; তারা ব্যস্ত নির্বাচনি হিসাব-নিকাশে। শুধু এই দুই নেতাই নন, ঢাকা মহানগরীর অনেক নেতাই বিএনপি নেত্রীর ডাকা আন্দোলন থেকে প্রাধান্য দিচ্ছেন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে। তাদের ধারণা নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হোক বা সর্বদলীয় সরকারের অধীনেই হোক; কিম্বা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায়ই হোক; একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৬টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় বিএনপির প্রার্থীরাই জয়ী হবে। আর সেজন্যই বিএনপির আন্দোলনের ডাক ক্রমেই হয়ে পড়ছে ম্রিয়মান আর পরোক্ষভাবে বিএনপি নেতৃবৃন্দের নির্বাচনি প্রস্তুতি গ্রহণ হয়ে পড়ছে দৃশ্যমান। সারাদেশে মহাজোটের পাশাপাশি ১৮ দলীয় জোটভুক্ত নেতারাও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতাদের আর্শীবাদ ও সমর্থন পাওয়ার জন্য ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীরাও স্ব-স্ব নির্বাচনি এলাকায় ভোটযুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মাঠপর্যায়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা বিশেষ করে জোট-মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটারদের সুখ-দুঃখের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, ভোটারদের পাশে তাদের মূল্যবান সময়ও ব্যয় করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্ব-স্ব নির্বাচনি এলাকায় ঘনঘন সফর করছেন।
এলাকার মানুষের কাছে দোয়া ও আর্শীবাদ কামনা করছেন। সকল জেলা, উপজেলার আনাচে-কানাচে প্রার্থীদের পক্ষে ইতোমধ্যে দেয়াল লিখন, তোরণ ও ডিজিটাল ব্যানার শোভা পাচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী সদস্য ও সম্ভাব্য এক প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনি চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশনা রয়েছে দলের শীর্ষমহল থেকেই । তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের সভা-সমাবেশ থেকে পরবর্তী নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে পারলে ভবিষ্যৎ সরকার পরিচালনার রূপরেখাও জনসম্মুখে তুলে ধরা হচ্ছে। এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনি প্রচারাভিযানেরই অংশ বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এ নেতা।
অপরদিকে ১০ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এ মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিটি মনোনয়নপত্রের দাম ধরা হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের অনেক মনোনয়নপ্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন। এক আসন থেকে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র কিনতেও দেখা গেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।