Consistency is the last refuge of the unimaginative. –Oscar Wilde (ইহা হইল আমার কনসিসটিন্সি না থাকিবার একটি গ্রহণযোগ্য অজুহাত)
মন্তব্য সম্পর্কে লিখতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত উপহার হিসেবে পেলাম সহব্লগারদের গভীর অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন কিছু মন্তব্য। বৈচিত্রে এবং অন্তর্দৃষ্টিতে সেগুলো অসাধারণ। মন্তব্যগুলো আলাদাভাবে উপস্থাপন না করলে তাদের বিচক্ষণতার প্রতি অবিচার করা হয়। সহব্লগারদের মতামত থেকে নিজের বিশ্বাসে আরও দৃঢ়তা পেলাম। একজন ব্লগ লেখককে দু’টি সত্ত্বা ধারণ করতে হয়, যা পুস্তক লেখককে করতে হয় না।
ব্লগ লেখকের দু’টি সত্ত্বা হলো: ব্লগ লেখক এবং মন্তব্য লেখক। ব্লগ এবং মন্তব্য দু’টি কাজই ব্লগারের নিজস্ব, কারণ দু’টি ক্ষেত্রেই তার নিজের নামটি জড়িয়ে আছে। আমার দৃষ্টিতে দ্বিতীয় সত্ত্বাটি, অর্থাৎ মন্তব্য লেখকের কাজটি অন্য সহব্লগারের কাছে বেশি আবেদন সৃষ্টি করে। আমার লেখাটি হয়তো অপঠিত থেকে যেতে পারে, কিন্তু আমার মন্তব্যটি যার লেখায় করা হয়েছে, তিনি অধীর আগ্রহে সেটা পড়েন এবং হৃদয়ঙ্গম করা চেষ্টা করেন।
বাংলা ব্লগের অগ্রগতির সাক্ষী হবার প্রচেষ্টায় ‘অন্যের ব্লগে মন্তব্য’ দেওয়া নিয়ে একাধিক পোস্ট লেখেছি।
তার কয়েকটি সামু’তে প্রকাশিত হয়েছে। “অন্যের পোস্টে সৃজনশীল মন্তব্য” পোস্টটিতে সুহৃদ সহব্লগাররা যে মন্তব্য দিয়েছেন, ব্লগে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করার জন্য সেগুলো সকলেরই জানা উচিত বলে আমি মনে করি।
উক্ত পোস্টে ‘মন্তব্য দেবো, নাকি দেবো না?’ এ প্রসঙ্গে মূল্যবান অভিমত দিয়েছেন বিচক্ষণ সহব্লগাররা।
কাল্পনিক ভালোবাসা: http://www.somewhereinblog.net/blog/mozaddid
১) আমি যখন দেখব আনাড়ি ব্যক্তি নিয়মিত কিছু লিখছেন তখন সেখানে গিয়ে তাকে সত্যিকার ভালো মন্দ জানানোটা জরুরি। নতুন হিসেবে তার যদি শেখার মনোভাব থাকে তাহলে সেখানেও তাকে পরামর্শ দেয়া যায়।
তবে অনেকেই পরামর্শ ভালো ভাবে নিতে চান না। তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। [কাল্পনিক ভালোবাসা]
মামুন রশিদ: http://www.somewhereinblog.net/blog/mamun653
২) আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, শুধু লিখলে বা পড়লেই ব্লগার হওয়া যায়না । ব্লগিংয়ের মুল কনসেপ্টই হল কমিউনিটির সাথে ইন্টারেকশন, আর এই ইন্টারেকশন হয় মুলত মন্তব্যের মাধ্যমে। [মামুন রশিদ]
৩) যেসব ব্লগার অনবরত পোস্ট প্রজনন করেই চলে, আগের পোস্টের মন্তব্যের জবাব না দিয়েই আরেকটি পোস্ট করে - তাদের লেখায় মন্তব্য না দেওয়াই উচিত।
এতে দুটো কাজ হতে পারে, তিনি মন্তব্যের জবাবের প্রতি যে দায়বদ্ধ তা বুঝতে পারবেন, ফ্লাডিংটাও কমার সুযোগ থাকে। [স্বাধিকার]
৪) একটা পোস্ট দেয়ার মতই মন্তব্যের অনেক দায় দায়িত্ব থাকে, সেদিকে সবার নজর দেয়া উচিৎ। [ডাইরেক্ট টু দ্য হার্ট]
৫) হ্যাঁ, "মন্তব্য"-ই ব্যক্তি, ব্যক্তিত্ব। মন্তব্যের মাধ্যমেই পোষ্টদাতার জ্ঞান, চরিত্র, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, রসবোধ, পরিমিতিবোধ, মাত্রাবোধ ইত্যাদি আচঁ করা যায়। [আশরাফ মাহমুদ মুন্না]
৬) শিরোনাম দেখে 'বাকিটুকু পড়ুন' ক্লিক করতে যখন দেখি অনেক লম্বা পোস্ট, তখন পড়ার আগ্রহ কমে যায়।
বাধ্য হয়েই এড়িয়ে যাই। তাছাড়া, আমার নেটে থাকারও সময় কম। … অনেক লিখার কঠিন শব্দ-বাক্য বুঝিনা বিধায়- লিখার উদ্দেশ্য বুঝতে পারিনা!(আরো অনেক বিষয় আছে)
[শ্যামলী জাহির]
৭) মনোযোগী পাঠকের মন্তব্য সৃজনশীল হতে বাধ্য, যদি সে অকপটে নিজেকে প্রকাশ করে, আর যদি সেইটা লেখার সময় ও ভাব তার থেকে থাকে! … ব্লগের অন্যতম প্রধান শক্তি হচ্ছে এখানে সরাসরি লেখক পাঠকের মিথস্ক্রিয়ার সুযোগ, আর তার প্রধান বাহন হচ্ছে মন্তব্য। [ৎঁৎঁৎঁ]
৮) অনেক সময় সৃজনশীল মন্তব্য দেওয়ার সময়টা মিলেনা । যারা ব্যাক্তি জীবনে যারা খুব ব্যস্ত থাকে তাদের পক্ষে সৃজনশীল মন্তব্য করা খুব টাফ হয়ে যায়।
[তাসনুভা সাখাওয়াত বিথি]
৯) সত্যিকার অর্থেই শুধু পোস্ট নয়, মন্তব্য একজনের সম্পর্কে আমাদের অনেক ধারণা দেয়। তার ব্যক্তিত্ব, তার ইমেজ সব কিছুই। তাই মন্তব্য হেলাফেলায় করা উচিত নয়। মন্তব্য ছোট হতে পারে। তবুও তা সুন্দর হওয়া উচিত।
সমালোচনা করলেও গঠনমূলক হওয়া উচিত। [মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব]
১০) আমি খুব কম সংখ্যক পোস্টে কমেন্ট করে থাকি। কারণ, যে লেখা আমার ভালো লাগে তার দৈর্ঘ্য আমার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে পারে না; অর্থাৎ, ছোটো অথবা বড়, আমি সাধারণত পুরো লেখাটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করি। [সোনাবীজ; অথবা ধূলোবালিছাই]
১১) পোস্ট পড়লে আমি মন্তব্য করার চেষ্টা করি, কেননা মনে হয় এটা পোস্টদাতার হক/ অধিকার। [মহামহোপাধ্যায়]
১২) মন্তব্যের উত্তর না পেলে নিজেকে খুব অপমানিত মনে হয়।
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে আপনার বাসায় এসে আমি একটা কথা বলে গেলাম আর আপনি তার উত্তর দিলেন না। হুম পোস্টদাতার উত্তর দিতে দেরী হতেই পারে, কিন্তু একেবারেই না দেয়া বা নতুন পোস্টে মনোযোগী হওয়া ব্যাপারটা কষ্টের। আবার অনেকেই আছেন যারা তাদের পুরনো পোস্টের নতুন কমেন্টের উত্তর দেন না। হোক পুরনো কিন্তু সেটা তো আপনারই পোস্ট। [মহামহোপাধ্যায়]
১৩) মন্তব্য ব্লগীয় কালচারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ! [স্বপ্নবাজ অভি]
১৪) আমি কোন পোস্টে মন্তব্য করলে পড়েই করি ।
পুরোটা পড়তে না পারলে সেটাও পোস্টদাতাকে জানানোর চেষ্টা করি। কখনো সময়ের অভাব হলে, পড়া শুরু করে মন্তব্য দিয়ে অফ লাইনে যেয়ে শেষ করি সেটা । … কোন অসুবিধা বা কেচাল বা ভেজাল মনে করলে মন্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। [আরজুপনি]
১৫) অনেক সময় কিছু পোস্ট পরে খুব ভালো লাগে, কিন্তু কি কমেন্ট করবো ভেবে পাইনা। তাই শুধু লাইক বাটন চেপে চলে আসি, তার মানে এই না যে আমি পোস্টটি পড়িনি।
[ড. জেকিল]
১৬) আমি সাধারণত কোনো পোস্ট পড়তে গিয়ে যদি দেখি অনেক ভুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তাহলে ঐ পোস্ট আর কষ্ট করে পড়তে যাই না। লেখক/লেখিকা সম্পর্কে আমার একটি খারাপ ধারণা চলে আসে। অনেকেই বলেন, লেখার মানটাই আসল। বানান ভুলটুল কোনো ব্যাপার না। আমিও মনে করি লেখার মানটাই আসল।
এবং এও মনে করি, নির্ভুল বানান এবং নির্ভুল বাক্যবিন্যাস মানসম্মত লেখার একটি অন্যতম উপাদান। … সকল পোস্টেই মন্তব্য করতে হবে এরকম ভাবাটা বোকামি। এটা কোনো প্রতিযোগিতা নয় যে আপনি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন। [অলওয়েজ ড্রিম]
কেমন মন্তব্য দেবো? ছোট নাকি বড়? পজিটিভ নাকি নেগেটিভ? কোনটি গুরুত্বপূর্ণ? এখানে কিছু মজাদার মন্তব্য রয়েছে। অনেকের চিন্তার খোরাক যোগাবে, আমি নিশ্চিত!
১৭) মন্তব্য ছোট বা বড় এটা কোন উল্লেখযোগ্য ব্যাপার নয় ।
মন্তব্য হতে হবে পোস্ট প্রাসঙ্গিক । অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য তা যত সুন্দরই হোক, তা কাম্য নয়। মন্তব্য হিসাবে আমার সবচেয়ে পছন্দ বুদ্ধিদীপ্ত 'ওয়ান লাইনার' বা পান্চ লাইন । [মামুন রশিদ]
১৮) অনেকে তার লেখা সম্পর্কে কিছু বললে তা ইতিবাচক দৃষ্টিতে না-দেখতে-পারার হীনতায় ভোগেন। আবার কেউ আছেন পোস্ট দিয়ে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকেন অন্যের কমেন্টের প্রত্যাশায় অথচ নিজে যাবেন না অন্যের পোস্টে।
অবশ্য আমার মন্তব্যের জবাবে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কোনো কথা থাকলে তার পোস্টকে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। [জুলিয়ান সিদ্দিকী]
১৯) খুবই ম্যাচিউর্ড্ লেখকের জন্য সংক্ষিপ্ত মন্তব্য হলে চলে। … আমি পোষ্টের সংখ্যা, ভিজিটর নয়, মন্তব্যের নিরিখেই ব্লগারের মান বিচার করি। [আশরাফ মাহমুদ মুন্না]
১৯) অনেকে আছেন যারা তাদের লেখায় ‘ভাল লাগে নাই টাইপ’ কমেন্ট দেখতে লাইক করেন না! সমমনা অনেকের সাথে কিন্তু পজেটিভ নেগেটিভ কমেন্ট চালাচালি করতে বেশ ভালা যায়, অনেক কিছু শিখা যায়, জানা যায়। [মাসুম আহমদ]
২০) হাতে সময় থাকলে এবং লেখার টপিকসটা পছন্দনীয় হলে এবং সেই সম্পর্কে কিছু জানাশোনা থাকলেই শুধু মাত্র বিস্তারিত মন্তব্য করা যায়! [রেজোওয়ানা]
২১) ভুল গুলো ধরিয়ে দিন।
যারা জানেন, তাদের নিকট এইটুকু আমরা আশা করতেই পারি। এই ব্লগে যারা লিখেন তারা কেউ পেশাদারীত্ব নিয়ে লিখেন না। … কে জানে আজকের এখানের লুকিয়ে থাকা ব্লগারটিই হয়তো হাক পাকিয়ে একসময় দুনিয়া কাঁপাবে। [মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব]
২২) কোনো একটা পোস্ট কেউ পুরোটা পড়েছেন কিনা তা তাঁর কমেন্ট থেকেই বিচক্ষণ লেখক ও পাঠকগণ বুঝে ফেলতে পারেন। ‘আগে প্লাস দিলাম, এখন পড়ে আসি‘ ধরনের কমেন্ট পরিহার করা উচিত।
[সোনাবীজ; অথবা ধূলোবালিছাই]
২৩) ভালোকে ভালো বলি নির্দ্বিধায়, মন্দকে মন্দ বলতেও দ্বিধা করি না, তা অবশ্য সহনযোগ্য ভাষায়। এ থেকে কেউ মনক্ষুণ্ণ যে হোন না, তা না। তবে পোস্টদাতার রিপ্লাই মনঃপূত না হলে তাঁর ত্রিসীমানায় পা মাড়াই না, যদি না তিনি ভুল বুঝতে পেরে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলেন। [সোনাবীজ; অথবা ধূলোবালিছাই]
২৪) ভালো লেখাকে ভালো বলা খুব সহজ কিন্তু খারাপ লেখাকে খারাপ বলতে গেলে বুকের পাটা লাগে। কেইবা নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক শুনতে চায়? [রেজোয়ানা আলী তনিমা]
২৫) ভালো লাগলে বলি।
মন্দ লাগলে, ঠিক যে জায়গাটা খারাপ লেগেছে সেটা তাকে ব্যক্তিগত ভাবে জানানোর চেষ্টা করি। সমালোচনা অনেকেই খুব স্বাভাবিকভাবে নিতে চান না। তাই ব্যক্তিত্ববান ব্লগার না হলে এধরনের কিছু বলা বিপদজনক। [মহামহোপাধ্যায়]
২৬) গতানুগতিক মন্তব্য না করে মন্তব্যের মধ্যেও স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তুলতে পারলে নিজেকে আলাদা করে চেনানো যায়। [অলওয়েজ ড্রিম]
২৭) পড়ার সময় মনোযোগী হলেও, অনেক সময়ই কমেন্ট করতে গিয়ে আমি শব্দ-সংকটে পড়ে যাই।
তাই কমেন্টগুলো বেশিরভাগ সময়েই হয়তো গতানুগতিক হয়ে যায় খুব। [শাহেদ খান]
প্রতিটি মন্তব্য থেকেই আলাদা একটি দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে ওঠেছে এবং প্রত্যেকটিতে রয়েছে মন্তব্য সম্পর্কে একটি স্বকীয় নির্দেশনা। বলা বাহুল্য, উপরোক্ত লেখায় সকলের মন্তব্যই এই পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক মনে করি নি। পরিশিষ্টে কারণ বলেছি। তবে প্রকাশিত-অপ্রকাশিত সকল মন্তব্যকারীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
যারা আমার লেখায় মাত্র একটি ক্লিক করেন তারাও আমাকে আনন্দ দেন। এ পোস্টের মাধ্যমে সকলকেই জানাচ্ছি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আশা করছি, মন্তব্য সংকলনটি আরও চিন্তার খোরাক যোগাবে। (সমাপ্ত)
পরিশিষ্ট:
ক. সঙ্গত কারণেই যারা আমার লেখার প্রসংশা করেছেন অথবা নিজেদের ব্লগীয় আচরণ নিয়ে আত্মসমালোচনা করেছেন, তাদের মন্তব্যগুলো এখানে দেই নি। কিন্তু তাদের মন্তব্যে ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক উৎসাহ পেয়েছি।
খ. যারা একই মন্তব্যে একাধিক বিষয়ের অবতারণা করেছেন, তাদের মতামতগুলো এখানে একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে।
গ. লেখার আকার ছোট রাখার লক্ষ্যে শুধুমাত্র চুম্বক অংশটুকু উদ্ধৃত করা হয়েছে।
=============================================
ব্লগ ও নেটিকেট নিয়ে পূর্বতন পোস্টগুলো
১ অন্যের পোস্টে সৃজনশীল মন্তব্য
২ আধুনিক ব্লগারদের ১০টি প্রিয় ভুল
৩ ভারচুয়াল পারসোনালিটি
৪ আমরা কি নেটকোহলিক হয়ে যাচ্ছি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।