কি আর হবে অঙ্গে ধরে নকল রুপের বায়না.... ও রুপ দেখে চোখ ভোলে গো, মন ভোলানো যায় না
৪।
মনে পড়ে জসীম উদদীনের ‘পল্লীবর্ষা’ কবিতার শেষ দুই লাইন-
আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছল ছল জলধারে,
বেণূ-বনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।
বাহিরে বৃষ্টির জল অবিরাম সিক্ত করে চলেছে পৃথিবী। কিন্তু এ তো শুধু বৃষ্টির জল নয়। এ যে প্রিয় হারানোর নিগূঢ় বেদনা_ বৃষ্টিরুপে ঝরে ঝরে পড়ছে।
বাহিরের বৃষ্টির জল হৃদয়ের ক্রন্দনের সাথে একাত্ম হয়ে গেছে। এমন বেদনাময় বরষায় মন যেন প্রিয়জনের আশায় অধীর হয়ে ওঠে। বেদনাঘন হয়ে ওঠে। পুরনো স্মৃতিরা এসে ভীড় করে মনে। এমনি বর্ষায় এমনি শ্রাবণ রজনীতে মনের আকাশে ওঠে ঝড়; নয়নে ঝরে জল।
আর নজরুল তার প্রিয়তমকে উদ্দেশ্য করে লেখেন-
শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে
বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে। ।
ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ স্বপন সম
আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ পরে। ।
যদি এমনি শ্রাবণ রজনী আসে।
বাহিরে ঝড় বয়ে যায়। আর আমার স্মরণে তোমার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। চোখের কোণ যদি অশ্রুসজল হয়। তবে আমাকে আর মনে রেখো না। কষ্ট পেয়ো না।
বরং ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ স্বপন সম ।
রাতের স্বপ্ন যেমন প্রভাতে মিলিয়ে যায়। বিলীন হয়ে যায়। তেমনি করে আমার স্মৃতিগুলোকে স্বপ্নের মতো মুছে দিয়ো জীবন থেকে। আমাকে মনে করে যে মালা তুমি গেঁথেছ, তা ফেলে দিও পথের ওপর।
ভালো থেকো। ভালো থেকো।
গানের কথাগুলো যেন এক হৃদয়-অবশ-করা অনুভূতির সৃষ্টি করে। শ্রোতাকে যেন তলিয়ে নিয়ে যায় এক চিরবিচ্ছেদময় আনন্দের জগতে। মনে হয় এ যেন আমারই মনের কথা।
এ গান যেন আমাকে ভেবেই লেখা। এ বিরহ যেন একান্তই আমার নিজস্ব। কবি বলে চলেন-
ঝুরিবে পূবালী-বায় গহন দূর বনে
রহিবে চাহি’ তুমি একেলা বাতায়নে।
বিরহী কুহু কেকা গাহিবে নীপ শাখে
যমুনা-নদী পারে শুনিবে কে যেন ডাকে।
কিন্তু কবি জানেন, তার প্রিয়তমা তাকে ভুলে থাকতে পারবে না।
শ্রাবণের কান্না তার হৃদয়কে কাঁদিয়ে যাবেই। জানালার ধারে একলা দাঁড়িয়ে থেকে সে দেখবে পূবালী-হাওয়া তার বেদনায় কাঁদছে। বিরহী কুহু কেকা গাহিবে নীপ শাখে অর্থাৎ শুনতে পাবে কদমের ডালে বসে থাকা বিরহী কুহু কেকা’র মর্মস্পর্শী আহ্বান। তাদের মনেও যে জেগে উঠেছে বিরহ। তাদের হৃদয়েও যে অঙ্কিত আছে প্রিয় হারানোর দুঃখের এক অমোচনীয় দাগ।
যেন মনে হবে যমুনা-নদীর ওপার থেকে প্রিয়তম প্রিয়তম বলে কে যেন ডেকে ডেকে যাচ্ছে। মন অধীর হবে। প্রিয়জনকে কাছে পাবার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠবে। কিন্তু হায়! যে অনতিক্রম্য ব্যবধান রচিত হয়ে গেছে তা যে আর দূর হবার নয়। তাই তখন যদি সেই মেঘময় শ্রাবণের আঁধার অম্বরে বিদ্যুৎ শিখা জ্বলে ওঠে।
তবে জেনে রেখো-
বিজলী দীপ-শিখা খুঁজিবে তোমায় প্রিয়া
দু’হাতে ঢেকো আঁখি যদি গো জলে ভরে। ।
সে বিজলী আমার চোখের দ্যুতি হয়ে শুধু তোমাকেই খুঁজে ফিরবে। তোমাকে কাছে পাবার বাসনায় আমার হৃদয়েও বেদনার নীর ঝরে পড়বে শ্রাবণধারার মতো। তাই এমন মন উদাস করা বরষায়, এমন ঝড়ের রাতে যদি তোমার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
তোমার চোখের কোণ যদি অশ্রুপ্লাবিত হয়। তাহলে সে আঁখি দু’হাতে ঢেকে রেখো। দু’হাতে ঢেকো আঁখি যদি গো জলে ভরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।