ক্রীড়াঙ্গনে কখনো কোনো তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কমিটি গঠন হলেও বের করা যায়নি ব্যর্থতার কারণগুলো। তবে এবারে সেই দুর্নাম ঘুচিয়েছে হকি ফেডারেশন। এশিয়া কাপে ভরাডুবির কারণ চিহ্নিত করতে গঠন হয়েছিল তদন্ত কমিটি। অনেকে আবার একে লোক দেখানো বলেই মন্তব্য করেছিলেন।
কিন্তু অবিশ্বাস্য হলে সত্যি যে তিন সদস্যের কমিটি দু'সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে সুপারিশসহ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট ফেডারেশনের কাছে জমা দেয়। ফেডারেশনও খুব একটা দেরি করেনি, নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডেকে সুপারিশ অনুসরণ করে চার খেলোয়াড়কে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে শাস্তির মেয়াদ বাস্তবায়িত হবে কিনা। কারণ ক্রীড়াঙ্গনের রেকর্ডে কাউকে পুরো সময় ধরে শাস্তি ভোগ করতে হয়নি। যাক এমন প্রশ্নতো উঠবেই।
কিন্তু হকি ফেডারেশন এক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফুটবলে অন্য সময় তদন্ত নিয়ে বিতর্ক হলেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতা নিয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল তারাও তাদের কাজ দ্রুতভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। কোনো কিছু লুকোচুরির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। তদন্তের স্বার্থে যাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তা মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেছে। সত্যি বলতে কি, পুরোপুরি স্বচ্ছভাবে তদন্ত কমিটি তাদের কাজ সম্পন্ন করেছে।
এত গোছানো তদন্তের পরও এ নিয়ে বিতর্ক কাটছে না। কারণ তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট বাফুফে জমা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এ নিয়ে নির্বাহী কমিটির বৈঠকও হয়নি। সুপারিশে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ফুটবলার জাহিদকে শাস্তি দেওয়ার। কোচ লোডডিক ক্রুইফকে তার দায়িত্ব পালনে সতর্ক করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ফিজিও ইয়ামালি ও শেষের দিকে আসা গোলরক্ষক কোচকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দু'জনা না হয় চলে গেছেন। কিন্তু ফুটবলার জাহিদের কি হবে। তিনিতো এবার মোহামেডানের হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এখন যদি বাফুফে বৈঠক করে জাহিদকে শাস্তি দেয়, তা নিয়ে নতুন করে ঝামেলা তৈরি হবে।
কারণ দুই দল থেকে পেমেন্ট নেওয়াতে তিনি কোথায় খেলবেন এ নিয়ে রাসেল ও মোহামেডানের তর্কের শেষ ছিল না। শেষ পর্যন্ত লিগ কমিটির পরামর্শক্রমে দুই দলের সমঝোতা হলে জাহিদের জায়গা হয় মোহামেডানে। এখন যদি তাকে সাফ চ্যাম্পিয়শিপে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে কি মোহামেডান মেনে নেবে। না মানাটাই স্বাভাবিক, কারণ তারা বলার সুযোগ পাবে আগে কেন শাস্তির সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো না। অন্যদিকে ক্রুইফতো বহাল তবিয়তে আছেন তাকে নিয়েও তদন্ত কমিটি যে অভিযোগ তুলেছে তা ভুলেও তার সামনে উচ্চারণ করেনি।
তাহলে অযথা তদন্তের নাটক করে লাভ হলো কি। কথা হচ্ছে হকি যদি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পার তাহলে ফুটবল পারবে না কেন? সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনতো দৃঢ়ভাবেই বলেছিলেন, কোনো বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এখনতো তিনি পুরোপুরি নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে ফুটবলের যে কত বড় ক্ষতি হবে তা কি তিনি ভেবে দেখেছেন।
কারণ তদন্ত কমিটি সুপারিশ করার পরও কারোর শাস্তিতো দূরের কথা শোকজই দেওয়া হয়নি। তাহলে সামনে কেউ যদি চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ করে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে কি? বরং বাফুফের নীরবতা তাদের এ কাজ করার উৎসাহ জোগাবে। ব্যাপারটি নিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ হলেও তারা কিছুই বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, আমরা সময়মতো কাজ শেষ করেছি। এখন বাকি দায়িত্বটা বাফুফের।
আসলে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট মিডিয়াতে প্রকাশের পরও তা কেন আলোর মুখ দেখছে না এ নিয়ে রহস্যও সৃষ্টি হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।