আজ ও আছো / আমার দীর্ঘশ্বাসের বিশুদ্ধ তরজমায়।
সমীকরণ
শুধু জোছনা দেখেছি, মৌনতা চিনেছি-
শুভ্র স্বপ্নের কথা তাই
তোমাকে বলা হলো না।
বোবা অশ্রু আমার, বোকা চেতনা-
বোঝাতে পারল না তোমায়
আমার কি যন্ত্রনা।
তুমি, যেই তুমি-সেই তুমি
সোনালু রোদে হেঁটে চলে গেলে
আর ফিরলে না।
আমি, যেই আমি-সেই আমি
একলা চলি-মরুভূমি
লু হাওয়া থামল না।
ইচ্ছে আমার
ইচ্ছে করে একটা রাত
হাতড়ে মরি তোমার বুকের পরে,
ইচ্ছে করে একটা রাতে
হারিয়ে যেতে অন্য অন্ধকারে;
ইচ্ছে করে ভাবতে আমার
বিশ্বাস আমার ভুল।
তবু ইচ্ছেরা সব হঠাৎ করে
হয়ে যায় ভন্ডুল-
যখন এসির হাওয়ায় উড়তে দেখি
তোমার রঙ্গিন চুল,
আর ঝরতে দেখি আমার টবের
সাধের গোলাপ ফুল।
তবু...
রমণীরা চলে যায়
নীল ছায়া ফেলে;
মন কাঁদে- একা চলে
পথ ভুলে ভুলে।
জীবন নীলে নীলে- ভীষণ নীলময়;
শাঁড়ীর আঁচল তবু খুঁজে ফেরে এ হৃদয়।
প্রেমিকের মন
এইসব দিনগুলি হারাবে যখন রাত্রির আঁধারে,
এইসব উঞ্চতা ঝিমুবে যখন জড়তার ভাঁড়ারে-
তখনও শীতের ভোরে হাত পেতে দেখো-
সূর্য তখনও অকৃপণ;
তোমার মত অকৃতজ্ঞ রমনীর পায়ে
তখনও কেঁদে যাবে আমার মত প্রেমিকের মন।
শুধু তুমি
শুভ্রতা দেখে চাঁদের কাছে যাই
কলঙ্ক দেখে পালাই;
সবুজ দেখে পাহাড়ের কাছে যাই
মৌনতায় ভয় পাই;
শুধু তোমার কাছে-মানে
তুমি ছাড়া আমার গতি নাই।
আমার স্বপ্নের আঙ্গিনা জুড়ে
সুখের সীমানা টানো তুমি;
পবিত্রতার নিশানা ধরে চোখে,
হাসিতে চাঁদ একে-
আমাকে পাগল করো তুমি;
শুধু তোমাকেই খুঁজে পাই
পূর্ণতার পরিপূর্ণ সংজ্ঞায়।
তুমি সুন্দর
তোমাকে যতবার দেখি
অবাক অভিভূত হয়ে যাই আমি
তোমার উপমা খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা না করে
তোমাকেই উপমা ভেবে বসি সকল সুন্দরের।
কি আর বলবো!
বৈশাখের সকালে যখন তোমাকে দেখি-
খোঁপায় হলুদ গাঁদার ফুল,
লাল পেড়ে হলুদ শাড়িতে
বুকের তন্ত্রী বলে তুমি সুন্দর।
চৈত্রের দুপুরে যখন তোমাকে দেখি
লোডশেডিং এর দূর্বিষহ নিস্পেশণে
ঘামে ভিজে পুড়ে একাকার-
চোখের রেটিনা বলে তুমি সুন্দর।
যখন বেরোও তুমি সদ্য গোসল সেড়ে
বিদেশী সুঘ্রাণ মেখে-
নাকের স্নায়ু বলে তুমি সুন্দর।
যখন ঘুম থেকে জেগে উঠে
ফোলাফালা চোখেমুখে-
দাঁড়াও সম্মুখে এসে
সকল স্বত্তা একসাথে বলে তুমি সুন্দর।
তুমি সুন্দর-
বিধাতা পাঠিয়েছেন তোমায়
শুধু আমাকে কাঁদাতে।
অবসরের পংক্তিমালা
পাখি ডাকা ভোরে সেই
হৃদয়ের জানালায়
কড়া নেড়ে চলে গেলে
দেখা নাহি দিলে হায়।
স্মৃতি শুধু রেখে গেলে
প্রেম নিয়ে এলে না,
ফাগুন আসে চলে যায়
মনে দাগ ফেলে না।
স্বপ্ন স্বদেশ
আজো বসে আছি
নিয়ে স্বপ্ন রাশি রাশি,
অমর কবির বাণী-
“আমি তোমায় ভালোবাসি”।
বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন তুমি,
বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি,
বাংলাদেশ, সেই স্বপ্নের মত
বাংলাদেশ-
কবে হবে তুমি?
ভাবি হয়নি যা- পঁচিশে
আজ এই ব্যর্থ চল্লিশে;
হবে কি তা- সূবর্ণ পঞ্চাশে!
বাংলাদেশ, সেই স্বপ্নের মত
বাংলাদেশ-
কবে হবে তুমি?
আজও মানুষ মরে- অনাহারে
আজও জীবন কাঁদে অন্ধকারে
সোনালী সুদিন আর কতদূরে!
বাংলাদেশ, সেই স্বপ্নের মত
বাংলাদেশ-
কবে হবে তুমি?
তোমাকে চাওয়া হয়নি
তোমাকে চাওয়া হয়নি তেমনি করে
কোন দীর্ঘ অবসরে,
শুধু কোন সুন্দরের উপমায়
অনুভব করেছি নিরবে।
সে কি প্রেম ছিল
তাও বোঝা হয়নি,
তারি আগে জীবন কেড়ে নিল সব
শুধু আমাকে নেয়নি।
চিরকুট
ছিলে একদিন
জীবনের পূর্ণ পরিধি জুড়ে
হৃদয়ের উদার আঙ্গিনায়;
আজ ও আছো
আমার দীর্ঘশ্বাসের বিশুদ্ধ তরজমায়।
অন্য আকাশ
সামলে উঠে প্রথম প্রেমের লালচে ক্ষত-
নীলাভ চোটের-
সত্যি বলছি- এখন আমার খুব প্রয়োজন
যুগল ঠোঁটের।
তুমি
তোমাকে পাওয়া মানে জোছনা ছোঁয়া;
দেখতে পারি
ভাবতে পারি
হাত বাড়ালে হাওয়া।
হীনমন্যতা আমার
কুয়াশাহীন সকাল তুমি-
মেঘহীন দুপুর,
ছায়াহীন বিকাল তুমি-
তারাভরা রাত।
রাতের মৌনতা তুমি-
জোছনার আলো,
তার কাছে আমার সবকিছু
হয়ে যায় ম্লান-কালো।
মনে হয় প্রদীপ শিখার নিচে আঁধার যেন আমি।
বিনীত বিদ্রোহ
বিধাতা দিয়েছে রূপ
আর জীবন দিয়েছে অহমিকা-
তোমাকে।
বিধাতার সৃষ্টি আমি
আর জীবনের পূজারী
এ নিয়ে পড়ে যাই
ভীষণ বিপাকে।
তাই জীবনকে পিঠ দেখিয়ে
অবশেষে এ সন্ন্যাসে।
প্রতিশোধ
এলবামে চোখ আর চোখ ভরা জল,
গাল বেয়ে জল পড়ে বুকে বেদনার ঢল।
যদিও আমিও ফের বেদনা পাবো তোমার অশ্রুতে;
তবু আলোর মানে যদি হয় আগুন-
পতঙ্গ কি ঝাপ দেয় না তাতে?
আমিও না হয় চিনিয়ে যাবো নিজেকে।
বায়োনিক হার্ট
ভালোবাসা মানে যদি হয় ভালোবাসা-
শুধু টাকা, বাড়ি, গাড়ি;
তবে, কোন্ দুঃখে আমি বলো পিছে পড়ে থাকি?
তাই নারীর বদলে এখন
বাড়ির রং, গাড়ির মডেল,
রঙ্গীন কাগজের ঘ্রানটাই
বেশি ভালোবাসি।
তুমি নেই বলে
দীর্ঘ পৌষরাত
কুয়াশার মাঝে আমি একা-
দেহ মনে অসাড়তা;
তুমি নেই বলেই-
আলোহীন ভূবন আমার
আশাহীন পথ চলা।
তুমি নেই বলেই
বেদনায় এত গভীরতা।
আনাড়ী তুমি
গোলাপ জানে
তোমাকে পাওয়ার জন্য-ছিল সে কি সাধনা,
তোমাকে হারিয়ে পেয়েছি কি বেদনা।
চাঁদ জানে
তোমাকে ভেবে আমার রাত জাগার ইতিহাস,
তোমাকে হারিয়ে আমার জলে ভাসা রাতের কথা।
আকাশ ও জানে
আমার আর্দ্রতা ও নীলাভতার পরিধি।
শুধু তুমি বুঝলে না
আমার একাকীত্বের সীমানা
তোমাকে ছাড়া।
স্বপ্নের বাইরে
তোমার স্মৃতি আজ ও আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায়;
জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
স্বপ্নের সাজানো ঘর।
কতটা চাওয়া ছিল-
একটা বাড়ি, একটা খামার?
অতটা নয়।
ছোট্ট কুঁড়েঘর- মাথা গোঁজার ঠাঁই
আর তোমার উঞ্চতা-
এইতো জীবন-আমার স্বপ্নের সীমানা।
তবু, তুমি দেখালে সাগর
চেনালে আকাশ;
-“মাইয়া মানুষ পুরুষের দাসী”
এই বিশ্বাসে
আজ শক্ত প্রাচীরের মজবুত ভিতে
হাসিখুশিময় তোমার বসবাস।
তবে কি
তবে কি জীবন এমনি করে
চলে যাবে কেঁদে কেঁদে,
মিছে আশায় বুক বেঁধে,
এইসব ভুলে ভুলে
আঁধারেতে পথ চলে।
তবে কি জীবন থেমে যাবে
এইখানে এই পথে-
একা চলা পৌষরাতে-
আলোহীন কুয়াশাতে-
এক বুক হতাশাতে?
তবে কি তুমি ভাববে আমায়
ভাববে আবার আগের মত
জড়িয়ে সুখের স্মৃতি যত;
রোদেলা দুপুর-সোনালী বিকাল
সমূদ্র সৈকত- পাহাড়ের ঢাল।
দুরাশা
ডি,সি হিলে কয়টা গাছ আছে-
এখন বলতে না পারলে ও তখন হয়ত পারতাম;
ফয়েজলেকের কোন জায়গাটা নির্জনতম
এখন না চিনলে ও তখন চিনতাম-
যখন তুমি ছিলে-স্বপ্ন ছিল
আশা ছিল-
আশা ছিল----
আশাইতো মানুষের ভরসা।
নইলে চরম দুঃখ দিয়ে চলে গেলে তুমি
তবু, ভুল ভাঙ্গবে তোমার-
ফিরে আসবে আবার-
রাত জেগে এ ও ভাবতে ভাল লাগে।
তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকে বলিনি কখনো-ভালোবাসি,
বলিনি, মধুর লাগে তোমার মুখের হাসি;
তবু তোমাকে ভালোবাসি।
ভালোবাসা মানে কি শুধু চারটে বর্ণ
কিংবা একটু তোষামোদী;
প্রেয়সী কি হবে শুধু আহ্লাদী, আমোদী?
কিন্তু তোমায় চাই যে আমি নিবিড় করে
আলোয় ভরা রঙ্গীন ভোরে,
তেমনি আবার অন্ধকারে।
তাই হয়নি বলা ভালোবাসি তেমন করে
ভয়টা শুধু মার খেতে পারি বাজার দরে;
তবু ভালোবাসি তোমায় আমি
ভেতরে ভেতরে।
রঙ্গীন শহর
আকাশ হেথায় অন্যরকম
বাতাস এলোমেলো,
দম বেঁধে যায় বুকের কাছে
যম বুঝি এলো এলো।
হৃদয় হেথায় খাঁচার পাখি
শখের পোষা ময়না,
চাওয়া পাওয়ার হিসেব ছাড়া
মোটেই কথা কয়না।
হেথায় চোখের পরে ঠুলি আঁটা
নানান রকম রঙে,
তাই আসল নকল যায় গুলিয়ে
সকলই এক সঙ্গে।
তবু রঙ্গীন শহর রঙ্গীন ভেবে
সবাই ছুটে আসে,
যেন এই শহরের নষ্ট হাওয়া
সবাই ভালোবাসে।
অবস্থান
বসে আছি বিষন্নতার চূড়ান্ত মোহনায়-
নিমজ্জনের অপেক্ষায়;
যদি চাও তবে তাই হবে।
নয়ত আবার আসবো ফিরে
ডি,সি হিল, ফয়েজলেক,
জি,ই,সি’র মোড়ে;
আবার বলবো-ধরে দেবো আকাশের চাঁদ,
গেঁথে দেবো তারার মালা;
যদি হাত বাড়াও
ভুলে গিয়ে হয়ে যাওয়া ভুল।
জেনো বদলাইনি আমি আজ ও একটু ও একচুল।
মৃত্যূ
একদিন থেমে যাবে সব
এই জীবনের যত কলরব,
হৃদয়ের যত হাসি গান,
চেপে রাখা মান অভিমান।
একদিন থেমে যাবে সব।
জোছনা ধরা দেবে চোখে হয়ে রংহীন
রইবে পড়ে সমুখে যত আঁধারের দিন।
একদিন থেমে যাবে সব।
এ নদী সেদিনও বইবে ধীরে ধীরে
গন্তব্য খুঁজে খুঁজে হারাবে সাগরে;
তবু এই মন থেমে যাবে হঠাৎই এসে
সব অভিমান অপমান ভুলে নিমেষে।
এ আকাশ সেদিনও রইবে সুনীল
নীড় খুঁজে উড়ে যাবে ধূসর গাঙ্গচিল;
তবু এই আমি রইবো না এই জনপদে
বেঁচে রবো স্মৃতির আঁধার জগতে।
একদিন থেমে যাবে সব।
অবসরের পংক্তিমালা
সোহেল মাহরুফ
ফেব্রুয়ারী ২০০৬
ত্রিরত্ন প্রকাশনী, চট্টগ্রাম
প্রচ্ছদ: আবুল হাসান আবু
অলংকরণ: আব্দুল মন্নান (নৈপূণ্য)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।