আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষা, সম্পদ ও কিছু কথা- সাউথ সুদান

কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্‌ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ

বর্তমানে সাউথ সুদানে প্রাইমারী শিক্ষা ফ্রি এবং বাধ্যতা মুলক করা হয়েছে। কেউ যদি তার বাচ্চাকে স্কুলে না পাঠায় তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।

এদেশের সংবিধান অনুযায়ী ইংরেজির পাশাপাশি দিঙ্কা, নুয়ের এবং শিল্লুক ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসেবে গ্রহন করা হয়েছে। আগে এদেশে গোত্রের সাথে নিজেদের ভাষায় আর ভিন্ন গোত্রের মানুষের সাথে আরবি ভাষায় সবাই কথা বলত। তখন অফিশিয়াল ভাষা ছিল আরবি। সুদান থেকে আলাদা হয়ে এখন এদেশের সরকারী ভাষা হল ইংরেজি। এত তাড়াতাড়ি নতুন একটা ভাষা সেখা সহজ না।

তবে তারা দ্রুত এই নতুন ভাষা শিখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পুরনো দিনের মানুষজন নিজেদের মধ্যে এখনো আরবিতে কথা বলে, এছাড়া তাদের যে আর কোন ভাষা নেই গোত্রের ভাষা ছাড়া। দশকের পর দশক এরা যুদ্ধ করেছে, ভাল যুদ্ধ করতে পারে এরা, তবে ব্যবসা যেহেতু করে নি তাই আগের সেই সুদানি ব্যবসায়ীরাই রয়ে গেছে। আগে যেভাবে ব্যবসা হত সেই একই ভাবে আরবিতে পাশের দেশগুলোর ব্যবসায়িদের সাথে এখনো লেনদেন চলছে। এই দেশের আপার নাইল প্রদেশ সুদানের সাথে, একসময় এখানকার ভাষা ছিল আরবি।

এখন নতুন প্রশাসন আরবি লিখা বন্ধ করার জন্য ঘোষণা করেছে যে তারা সব আরবি লিখা কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলবে। যারা ইংরেজি পারে না তারা দরকার হলে আরবিতে কথা বা লিখা বাদ দিয়ে নিজেদের গোত্রের ভাষায় কাজ চালিয়ে নিবে। এখনো এদেশে মানুষ তাদের কথাবার্তা আরবিতেই চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছুতে এরা এখনো পিছিয়ে থাকলেও দুর্নীতিতে এদের সামনের সারির লোকজন বেশ এগিয়ে আছে। ২০১৩ সালে এপ্রিল থেকে ছয় মাসে সাউথ সুদান তেল বিক্রি বাবদ এক বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

এর হিসাব পরে দিচ্ছি। এদেশে মানুষ চাষাবাদ, ব্যবসা কিংবা কোন শিল্প খাতে কাজ করার কোন সুযোগ পায়নি , এখনো এধরনের কিছু দেখা যাচ্ছে না। অল্প কাজে যদি টাকা পাওয়া যায় তাহলে কেইবা কাজ করতে চায়। বড় দলপতিরা এখন ভাল ভাল পদে আছে। তারা তাদের সহযোদ্ধার সংখার উপর সরকার থেকে টাকা নিয়ে পরে তা সদস্যদের মধ্যে বিতরন করে।

এই ব্যবস্থায় শুভঙ্করের ফাঁকি আছে , সরকার এটা পরীক্ষা করে প্রায় এগারো হাজার নাম সর্বস্ব মানুষ পেয়েছে। এতে নেতাদের টাকা কমে গেছে, তাই তারা খুশি না সরকারের প্রতি। এই ভৌতিক টাকা দিয়ে বড় নেতারা অনেক স্ত্রী রাখে ও তাদের ভরণপোষণ দেয় বা দিত, এখন তারা সমস্যায় পড়ে গেছে। প্রত্যেকটা প্রদেশে আলাদা আলাদা স্থানীয় সরকার রয়েছে, তারা সেই প্রদেশের দেখভাল করে। প্রদেশের ভিতর অনেক পায়াম আছে, পায়াম নেতা পায়ামের সম্পদ ও জমি পায়ামের সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেয়।

সরকার চাইলেই জমি নিতে বা সেখানে কিছু করতে পারে না। এতে উন্নয়ন ধীর গতিতে হচ্ছে। তেলের এই টাকার চার ভাগের এক ভাগ সুদান পায় তার উপর দিয়ে পাইপ লাইনের ভাড়া বাবদ। এই লাইন দিয়ে তেল পোর্ট সুদানে যায় রপ্তানির জন্য। এখন সাউথ সুদান কেনিয়ার লিমু বন্দরের সাথে, এবং ইথিওপিয়া হয়ে জিবুতি বন্দরের সাথে নতুন পাইপ লাইন বসানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এটা বেশ ব্যয় বহুল প্রকল্প, তেলের পর্যাপ্ত টাকা না পেলে এটা বানানো বেশ কষ্টকর। একশ তেল কুপ আছে, যেখান থেকে তেল তোলা হত। সুদানের সাথে সীমান্ত নিয়ে গোলমালের কারনে অনেক তেল কুপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটা নষ্ট হয়েছে সুদানের বিমাল আক্রমনের ফলে। আস্তে আস্তে সেগুলো আবার ঠিক হচ্ছে।

সাউথ সুদান এখন ১৯০,০০০ ব্যারেল তেল তুলেছে, আগে এই সময়ে ৩৫০,০০০ ব্যারেল তেল তোলা হত। এর মধ্যে ১৭০,০০০ ব্যারেল তেল উঠেছে আপার নাইল প্রদেশের তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে, বাকী ২০,০০০ ব্যারেল উঠেছে ইউনিটি প্রদেশের তেল ক্ষেত্র থেকে। জংলে প্রদেশে তেল ক্ষেত্র আছে, সেখানে ফ্রেঞ্চ কোম্পানি টোটাল তাদের কাজ চালাতে পারছে না গণ্ডগোলের কারনে। এছাড়া আরও নতুন নতুন ব্লক ও তেল কুপ আবিস্কারের জন্য আমেরিকার এক্সন ও কুয়েতের কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে। দেশের উন্নতি চাইলে দুর্নীতি দূর করতে হবে, শিক্ষার হার বাড়াতে হবে এবং অন্য আরও খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।

কৃষি খাতে এদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, এদেশের মাটি উর্বর, হোয়াইট নীল নদের পানি ও বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে এখানে যে কোন ফসল উৎপন্ন হতে পারে। ইসরায়েলের কৃষি বিশেষজ্ঞরা এদেশে এসে এখানকার চাষিদেরকে উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে চাষাবাদের পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছে। এই দেশে সঠিক ভাবে ফসল হলে সারা আফ্রিকা সেই খাবার খেতে পারবে। সাউথ সুদানের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাশের দেশ উগান্ডা থেকে আসে। জুবা থেকে উগান্ডার সীমান্ত নিমুলে পর্যন্ত সুন্দর পাকা রাস্তা আছে।

উগান্ডার ভিতর রাস্তা বেশ খারাম। তারা এটা ঠিকও করে না। এটা প্রয়োজন সাউথ সুদানের, তাই উগান্ডার গরজ নাই। মাঝে মাঝে নদীতে বন্যা কিংবা বৃষ্টি হয়ে এই রাস্তা তলিয়ে যায়। তখন পণ্য আস্তে পারে না সাউথ সুদানে, জিনিসপত্রের দান দুই তিন গুন বেড়ে যায়।

যুদ্ধ শেষে এই দেশ স্বাধীন হলেও অশান্তি এখনো রয়ে গেছে। যুদ্ধে অনেক মানুষ দেশছাড়া হয়ছিল। তারা ফিরে এসে দেশের নানা প্রদেশে নতুন করে জীবন শুরু করছে, তাদের সাথে তাদের পশুর পাল ও আছে। স্থানীয়রা এটাকে তাদের জমিগ্রাস হতে পারে এ ভয়ে চিন্তিত। নিমুলে পায়ামের চীফ কে তারই লোকজন গুলি করে মেরে ফেলেছে।

প্রথমে তাকে বেশ কয়েকবার মারার চেষ্টা করা হয়েছিল, সে খুব শক্তিশালী বলে তারা সুবিধা করতে পারে নাই। পড়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়, তাদের ধরা হয়েছে, বিচার হচ্ছে, তবে এধরনের ঘটনা কারো জন্য সুখকর না। এইসব ঘটনা দুর্ঘটনা নিয়ে নতুন স্বাধীন এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.