ঘাটের এই পারে বসে আছি ঐ পারে যাওয়ার অপেক্ষা।
প্রচন্ড বৃষ্টি মুখরিত এক রাত। শোঁ শোঁ করে উন্মাত্তাল ঝড় বইছে। আমাকে দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে। মনে পড়লো এরকম একটি ভয়ঙকর ঝড়ো রাতের কথা।
সে রাতে আমি ছোট একটা খেয়া নৌকায় ছিলাম। হঠাৎ মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে গেলো। সাঁতার জানিনা। কিন্তু ভাগ্য সহায় । রাখে আল্লাহ মারে কে? আমার বন্ধু সাঁতরে আমাকে নিয়ে নদী পার করে আমার জীবন বাঁচালো।
বললাম, দোস্ত তুই সাঁতার না জানলে যে কি বিপদ হতো। বন্ধু বলে-জীবনে সবকিছুই শিখে রাখতে হয়রে। আর সাঁতার জানা নৌকার মাঝি মারা গেলো। মারে আল্লাহ রাখে কে? আমার জীবন বেঁচে গেলো। অবশ্য এক বৃদ্ধা ছিলেন নৌকায়।
শুনেছি তিনিও বেঁচে ছিলেন।
বৃদ্ধার কথা মনে হতেই মনে হলো বৃদ্ধা ডরোথির কথা। বেচারীকে ফোন করা দরকার। পুরো নগরে বুঝি ব্ল্যাক আউট হয়ে গেলো। কিন্তু হঠাৎ খেয়াল করলাম ফোনটি ভুলে হসপিটালে রেখে এসেছি।
ফোন কীভাবে করি ভাবছি। মনে পড়লো, ফোন নিয়ে জীবনের এক দারুন রোমান্টিক ঘটনা। এয়ারপোর্টের ডিপারচার লাউন্জে খুব অল্প সময়ের জন্য এক অনিন্দ্য সুন্দরী রুপবতি মেয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। অনেকক্ষণ চোখের ভাষায় কথা হয়। তারপর যখন আমি আমার গেইটের দিকে এগিয়ে যাই-তখন হাতের পাশে কোনো কাগজ না পেয়ে শেষের কবিতার পৃষ্টা ছিঁড়ে ছোট একটা কাগজে আমার নাম্বারটি দেই।
মেয়েটি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে কাগজটি নেয়। আর বলে-শেষের কবিতা আমারও পছন্দের। আমি বিস্ময়াবিভূত হয়ে যাই। আরে,ফ্রান্স এয়ারপোর্টে দেখি এক রাবিন্দ্রিক মেয়ে। - সে মনপাগল করা হাসি স্মরণ করেই এক জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।
কিন্তু আজ ১ শত ১৯দিন। মেয়েটি ফোন করেনি। আমার বোধোদয় হলো। আমি এতো বেশী নার্ভাস হয়েছিলাম সেসময় ১০ ডিজিটের নাম্বারের মাঝখানের একটি নাম্বার ভুল লিখেছিলাম। ভালোবাসলে নাকি ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পাওয়া যায়।
আমি তার ফিরার আজো অপেক্ষায় আছি।
টেলিফোনের ভুল নাম্বারের কথা মনে হতেই অন্যরকমের একটি ভুলের কথা মনে হলো। যা আজ সকালে করেছি। বৃদ্ধা ডরোথিকে রাতের যে খাবারের মেনু দিয়েছি তা মারাত্মক ভুল। এখাবার খেলেই বেচারীর প্রচন্ড ফুড পয়জনিং হতে পারে ।
কোনো সন্দেহ নেই। ঝড়ো হাওয়ার জন্যই হয়তোবা লাইন ডিসকানেক্টেড । সন্ধ্যার পর থেকেই ডরোথীকে ফোন করে পাইনি। যে ভাবেই হোক দ্রুত ওর বাসায় পৌঁছাতে হবে।
শোঁ শোঁ বাতাসের জন্য গাড়ী ভালো করে চালাতেও পারছিনা।
দেখি সামনের রাস্তার এক পাশে হেড লাইট জ্বালিয়ে লাইনের বাস গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঘাত টায়ার পাঙচার।
আমি বেশ কিছুদূর চলে এসেছি। বৃষ্টির বেগ প্রচন্ড বেড়েছে। সামনে ছোট একটা বাস স্টপ।
চিন্তা করছি এখানে একটু দাঁড়াবো কিনা। গাড়ীর স্পীড স্লো করলাম। দেখি এ এক মহা অলৌকিক ব্যাপার। বাস স্টপে দাঁড়ানো- খেয়া নৌকায় আমার জীবন বাঁচানো সেই বন্ধু। আমি আরো হতবাক-বাস স্টপের ভিতর বৃদ্ধা ডরোথি যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমুচ্ছে।
যেকোনো সময় ঢলে পড়তে পারে। বুঝতে দেরী নেই-ডরোথির ফুড পয়জনিং শুরু হয়ে গেছে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার-এই ঝড়ো রাতে ফ্রান্স এয়ারপোর্টের সেই রাবিন্দ্রিক মেয়েও এখানে দাঁড়িয়ে। ঘড়ি দেখলাম রাত বারোটা বাজে। মানে আজ ১ শত ২০ দিন।
সবচেয়ে ভয়ঙকর ব্যাপার হলো -এই নগরের সবচেয়ে জঘন্যতম সেক্স প্রিডেটরও সেখানে দাঁড়িয়ে । মেয়েটিকে একা পেলেই যে কোনো বিপদ ঘটে যেতে পারে।
এবার আসল খেলা শুরু হলো। গল্পের নাম দিয়েছি একটি বু্দ্ধি মুখরিত রাত। গল্পের খাতিরেই মনে করুন-যে বন্ধু আমার জীবন বাঁচিয়েছে তাকে এই মুহুর্তে সাহায্য করা সবচেয়ে বেশী দরকার।
আবার অন্যদিকে বৃদ্ধা ডরোথিরও জীবন বিপন্ন। যেকোনো সময় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অনেকদিন পর খুঁজে পাওয়া মেয়েটিকেও আর পাওয়া যাবেনা, যদি আবার হারিয়ে যায়। তাছাড়া পাশেই সেক্স প্রিডেটর । একা রেখেও কোথায় যাওয়া যাবেনা।
আমি গাড়ী নিয়ে এক নিকষ কালো অন্ধকার ঝড়ো রাতে নিথর হয়ে বসে আছি আর ভাবছি। কী করা যায়! কী করা যায়!!
এখানে কোনো ভুল উত্তর নেই। কিন্তু আপনার করণীয় থেকে আপনার বু্দ্ধির ধরণ বুঝা যাবে। তবে হ্যাঁ,একটা জবাব আছে যা সবচেয়ে বেশী যৌক্তিক। জানতে চাচ্ছি-এরকম এক সংকটময় মুহুর্তে ঠিক এ অবস্থায় আপনি হলে কী করতেন?
(খেলাটি উপভোগ্য করার জন্য আপনার মন্তব্য যদি যৌক্তিক হয় ,তবে মন্তব্য রিভিও করবো) গুডলাক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।