বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোতে নিরাপদ কর্মসংস্থান আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আমেরিকান ও ইউরোপীয় ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে গঠিত দুটি জোট গতকাল সোমবার কলহে লিপ্ত হয়েছে। ইউরোপীয় কমিটির এক কর্মকর্তা গতকাল অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের কয়েক শ কারখানার কর্মপরিবেশ শ্রমিকবান্ধব করতে আমেরিকান জোটটি কোনো ধরনের অর্থ খরচ না করে ইউরোপীয়দের কাঁধে ভর করে পার পেয়ে যেতে চাইছে। ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ বলছে, কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্যের সূত্র ধরে কলহ বেধেছে।
রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৪ জন শ্রমিক নিহত ও কয়েক হাজার শ্রমিক চিরতরে প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়ার ঘটনার পর আমেরিকা ও ইউরোপের ব্র্যান্ডগুলো কারখানা পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য দুটি জোট গঠন করে। অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ নামের ইউরোপীয় জোটে আছে এইচ অ্যান্ড এম, কেয়ারফোরসহ কয়েক শত ব্র্যান্ড ও বিশালাকৃতির খুচরা বিক্রেতা।
অন্যদিকে ওয়ালমার্ট স্টোর্স, টার্গেট ও গ্যাপের মতো ২৬টি বিশালাকৃতির খুচরা ব্র্যান্ড আছে আমেরিকান জোটে। উত্তর আমেরিকার কয়েকটি দেশের ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে গঠিত এ জোটের নাম অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি।
শর্তানুযায়ী, কর্মপরিবেশ উন্নত করতে কারখানাগুলোকে অর্থ সহায়তা দিতে বাধ্য থাকবে ইউরোপীয় গ্রুপটি। এ জোটের অন্তর্ভুক্ত খুচরা বিক্রেতারা বাংলাদেশের যেসব কারখানায় কাজ করায়, তার অন্তত এক হাজার ৬০০টিতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নেই।
আমেরিকান জোটটি কারখানাগুলোকে কোনো অর্থ সহায়তা দেবে না, তবে কারখানাগুলোর খুব দরকার হলে সেগুলোকে শর্তসাপেক্ষে ঋণ দেবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা ওয়ার্কার রাইটস কনসোর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক ও ইউরোপীয় জোটের কমিটির সদস্য স্কট নোভা বলেন, বিনা খরচায় সুবিধা লুটতে চাওয়াদের ব্যাপারে তাঁর জোট হুঁশিয়ার আছে।
অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটির সভাপতি জেফ ক্রিল্লা বলেন, অমন সমালোচনায় তিনি বিস্মিত হয়েছেন। কারণ তাঁর জোট বাংলাদেশের কারখানা মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে ইতিমধ্যে ১০ কোটি ডলারের (প্রায় ৭৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার) তহবিল গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হয়েছে।
‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ বলছে, গবেষণা সংস্থা বোস্টন গ্লোবাল ফোরামের আয়োজিত এক টেলিফোন মতবিনিময়ে জেফ ক্রিল্লা বলেন, কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে অর্থ সহায়তা দিতে তাঁর জোট বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, তাঁর জোটের সদস্যরা আসছে পাঁচ বছরের প্রতি বছরে মোট ৫০ মিলিয়ন ডলার করে তহবিলে জমা দেবে।
টেলিফোন মতবিনিময়ে আমেরিকান জোটকে উদ্দেশ করে স্কট নোভা বলেন, কারখানার কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের কর্মকাণ্ডে শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তাঁর জোটের সদস্যরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ইউরোপীয় জোটটিতে ইন্ডাস্ট্রি অল ও ইউনি গ্লোবালের মতো দুটি বৃহত্ শ্রমিক সংগঠন যুক্ত আছে। কিন্তু আমেরিকান জোটের কাজে কোনো শ্রমিক অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় নোভা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু ক্রিল্লা বলছেন, তাঁর জোট বাংলাদেশের ইউনিয়নগুলোকে নিয়ে কাজ করবে। যদিও এ দেশের হাতে গোনা দু-একটি বাদে হাজার হাজার কারখানায় ইউনিয়ন করা কার্যত নিষিদ্ধ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।