আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নের বিশ্বকাপে সিদ্দিকুর

স্বপ্ন সংকল্প এবং মেধা-এই তিনের সমন্বয়ই মানুষকে পৌঁছে দেয় সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে।

ইচ্ছাকে ত্বরান্বিত করে জরাজীর্ণতার সিঁড়ি ভেঙে সফলতার দুয়ারে পৌঁছার পথটা দেখিয়ে দেয় স্বপ্ন। আর সংকল্প হচ্ছে সাধনা আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি। দুর্গম গিরি কান্তার মরু পাড়ি দিতে বন্ধুর মতো সব সময় পাশে থাকে সংকল্প। মেধা হচ্ছে আলোবর্তিকা তিমির অাঁধার পাড়ি দিতে অভিযাত্রীকে গুরুজনের মতো নির্দেশ দেয়! এই তিনের মিলন ঘটাতে পারলেই জীবন আলোকিত হয় যশ, খ্যাতি, সুনাম, অর্থ-প্রতিপত্তির অভাব থাকে না।

জীবনে স্বপ্ন, সংকল্প ও মেধার সমন্বয় ঘটাতে পেরেছিলেন বলেই সামান্য ট্যাঙ্ িড্রাইভারের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান আজ দেশের সেরা গলফার।

জীবিকার তাগিদেই মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া যে ছেলেটি ২২ বছর আগে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে বলবয়ের কাজ নিয়েছিলেন, সেই সিদ্দিকুর এখন গলফের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সিদ্দিকুরের পরিচয় এখন আর ট্যাঙ্ িড্রাইভারের ছেলে নয়, এখন তিনি দেশের ভবিষ্যৎ ষোল কোটি মানুষের স্বপ্নসারথি। সিদ্দিকুরই প্রথম বাংলাদেশি যিনি গলফ বিশ্বকাপে লাল সবুজ পতাকা ওড়াবেন। খেলবেন টাইগার উডসদের মতো মহা তারকাদের বিরুদ্ধে।

অস্ট্রেলিয়ার রয়্যাল মেলবোর্ন গলফ ক্লাবে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই গলফ বিশ্বকাপ। চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। বিশ্বের সেরা ৬০জন গলফার অংশগ্রহণ করবেন এই টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশের সিদ্দিকুর রহমানসহ এশিয়া থেকে সুযোগ পেয়েছেন ১৩ জন গলফার। ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম মর্যাদাকর তো বটেই, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবচেয়ে বড় প্রাইজমানির আসর এই গলফ বিশ্বকাপ।

এই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। তখন নাম ছিল কানাডিয়ান কাপ। আয়োজন করেছিলেন কানাডার শিল্পপতি জন জে হপকিন্স। এরপর বিশ্বে জনপ্রিয়তা অর্জন করায় ১৯৬৭ সালে কানাডিয়ান কাপের নাম হয় 'গলফ বিশ্বকাপ'। ২৪ টি আসরে চ্যাম্পিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গলফাররা।

বর্তমানেও মার্কিন গলফারদেরই আধিপত্য। এই টুর্নামেন্টে এবার শীর্ষে থেকেই অংশগ্রহণ করছেন এক নম্বর তারকা যুক্তরাষ্ট্রের টাইগার উডস। টুর্নামেন্টে মোট প্রাইজমানি ৮০ লাখ ডলার।

গলফের জগতে সিদ্দিকুরের আগমনটা যেন রূপকথার কাহিনীকেও হার মানায়। নিম্নবিত্ত পরিবারেই তার জন্ম।

মা গৃহিনী, বাবা আফজাল হোসেন কখনো অটোরিঙ্া কখনো ট্যাঙ্ িচালাতেন। সংসার ঠিকমতো চলতো না। বাবার উপার্জনে অনেক সময় দুবেলা ভাতও জুটতো না। তাই দুই পয়সা রোজগার করে সংসারকে সহযোগিতা করার জন্য বলবয়ের কাজ নেন ছোট্ট সিদ্দিকুর। এটা ১৯৯১ সালের ঘটনা।

তখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়তেন সিদ্দিকুর। স্কুল ছুটির পর চলে যেতেন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে। মনের ভেতর স্বপ্নটা উঁকি দেয় তখনই। ধীরে ধীরে দৃঢ় সংকল্প করে ফেলেন। তারপর ধীরে ধীরে বদলে গেল তার জীবন।

স্বীয় মেধাই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসেন আজকের অবস্থানে। ২০০৫ সালে সিদ্দিকুর রহমান পেশাদার গলফে নাম লেখান। ২০১০ সালে এশিয়ান ট্যুরে ব্রুনাই ওপেন জিতে বিশ্বে হই চই ফেলে দেন। তারপরেও সিদ্দিকুরের চলার পথ কিন্তু মসৃণ ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে তাকে।

সিদ্দিকুর এখন আর শুধুমাত্র বাংলাদেশের সেরা তারকা নন, কয়েক দিন আগে ভারতে দিলি্ল হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন শিরোপা জিতে এশিয়ান মেরিটে তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছেন। এবার সিদ্দিকুরের মিশন বিশ্বকাপ।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.