আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দয়ার সাগর এক রাজার সম্পদে ভরপুর রাজ্যের অভাগা জনগনের গল্প



এক রাজ্যে এক বিশাল সম্পদশালী রাজা । তিনি একদিকে যেমন ছিলেন অফুরন্ত ধন-সম্পদের মালিক, তেমনি ছিলেন জনদরদী এবং দয়ালু । কিন্ত তার এলাকার জনগনের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না । ঐ রাজা সবসময়ই তার অফুরন্ত ধনসম্পদ দিয়ে জনগনের অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করতেন । কিন্ত কিছুতেই এলাকার জনগনের ভাগ্যের তেমন কোন উন্নতি করতে পারছিলেন না ।

রাজা তার উজির,নাজির, পাইক,পেয়াদাদেরকে এইজন্য সবসময় ভৎসর্না করতেন যে, এতোসম্পদ জনগনের কল্যানের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে কিন্ত জনগনের অবস্থার কেন কোন পরিবর্তন ঘটছে না ? তারপর একদিন রাজা এলাকার সকল জনগনকে ডেকে এনে বললেন যে, আমি তোমাদের জন্য এতো ধন-সম্পদ ব্যয় করছি কিন্ত তোমাদের অবস্থার তো কোন উন্নতি হচ্ছে না । তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এখন থেকে তোমরাই তোমাদের মধ্য থেকে লোক ঠিক করে দিবে, যারা আমার দেওয়া ধন-সম্পত্তি তোমাদের কল্যানে ব্যয় করে, তোমাদের অবস্থার উন্নতি ঘটাবে । এলাকার জনগন তো মহা খুশী এইভেবে যে, এইবার যেহেতু আমাদের নিজেদের পছন্দের লোকের মাধ্যমেই রাজা তার ধন-সম্পদ জনগনের মধ্যে বিলি-বন্টনের ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন ,সুতরাং এইবার আর আমাদের উন্নতি ঠেকায় কে ? তারপর জনগনের মধ্য থেকে যারা সমাজে বেশ গ্রহনযোগ্য, তাদেরকে মনোনিত করা হলো রাজার দেওয়া সম্পদের সুষ্ঠু বিলিবন্টনের জন্য । কিন্ত বিধিবাম, জনগনের উন্নতির লক্ষন এইবারও পরিলক্ষিত হলো না । ফলে জনগনের অবস্থা, সেই আগের মতোই রয়ে গেল ।

রাজা এইবার বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন । রাজা ভাবতে লাগলেন যে, আগে না হয় উজির-নাজির আর পাইক-পেয়াদারা জনগনকে কম কম দিয়ে নিজেরা তা ভোগ করত কিন্ত এবার তো জনগনের মধ্য থেকেই লোক এনে, তারপর জনগনের মধ্যে সম্পদ বিলি বন্টনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, তবে কেন সেই আগের মতোই জনগনের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে ? রাজা খুবই মর্মাহত এবং একই সাথে রাগান্বিত হলেন । তারপর তিনি তার এলাকার জনগনকে আবার ডেকে এনে ঘোষনা করলেন যে , তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে আবার এমন লোকদেরকে সম্পদ বন্টনের জন্য নির্বাচিত করবে, যারা তোমাদের জন্য বরাদ্দকৃত সম্পদ থেকে একবিন্দু পরিমান সম্পদও নিজেদের কল্যানে ব্যয় করবে না । আর যদি জনগনের সম্পদ থেকে একবিন্দু পরিমান সম্পদও তারা নিজেদের কল্যানে ব্যয় করে, তবে আমি তাদের জন্য বর দিচ্ছি যে, যেই মুহূর্তে তারা জনগনের সম্পদ থেকে একবিন্দু পরিমান সম্পদও তাদের নিজেদের জন্য ব্যয় করবে, সেইমুহূর্তেই তারা বিশালদেহী বিদেশী কুকুরের ন্যায় আকৃতি ধারন করবে ,যাতে তোমরা সহজেই তাদেরকে জনগনের সম্পদ ভক্ষনকারী হিসাবে চিনতে পারো । তারপর জনগন আবার তাদের মধ্য থেকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে রাজার কাছে নূতন লোকদের তালিকা প্রদান করল এবং রাজা আবার জনগনের পছন্দের লোকদেরকেই জনগনের সম্পদের বিলিবন্টনের দায়িত্ব নিয়োজিত করল ।

এইবার রাজা আগের তুলনায় অনেক বেশী সম্পদ জনগনের জন্য বরাদ্দ দিল । কিন্ত কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল যে, রাজার দেওয়া বর অনুযায়ী জনগনের বাছাই করা লোকগুলি বিশাল আকৃতির বিদেশী কুকুরের ন্যায় আকার ধারন করল অর্থ্যাৎ জনগনের পক্ষ থেকে দেওয়া লোকগুলি আবারও জনগনের সম্পদ ভক্ষন করল । রাজা তখন শাস্তিস্বরুপ এই কুকুরগুলিকেই রাজদরবার পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত করল । এতে রাজদরবারে নূতন বিপত্তি দেখা দিল । এতোদিন তো এলাকার জনগন রাজদরবারে এসে রাজার কাছে তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাতে পারতো, কিন্ত বর্তমানে বিশালদেহী কুকুরগুলির ঘেউ ঘেউ এর কারনে রাজদরবারের কাছেও কেউ আসার সাহস করতে পারছে না ।

ফলে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল । রাজা আবার জনগনকে রাজদরবারে ডেকে আনলেন এবং জনগনের উদ্দেশ্যে বললেন, আমি তোমাদের জন্য আর কি করতে পারি ? তখন জনগনের পক্ষ থেকে দাবী করা হলো যে, রাজা যেন তার বর ফিরিয়ে নেয় । কিন্ত রাজা কিছুতেই বর ফিরিয়ে নিতে রাজি হলো না । কারন, বর ফিরিয়ে নিলে তো আর জনগনের কল্যানের জন্য রাখা সম্পদ রক্ষা করা যাবে না । তখন জনগনের পক্ষ থেকে রাজাকে তার বরের শর্ত কিছুটা নমনীয় করার জন্য দাবী তোলা হলো ।

রাজা এতে রাজি হলো এবং নূতন করে সিদ্ধান্ত হলো যে, আবার যদি কেহ জনগনের সম্পদ নিজেদের কল্যানে ব্যয় করে, তবে সে দেশী কুকুরের ন্যায় ছোট আকৃতি ধারন করবে । ফলে, দেশী কুকুরের ভয়ে জনগনের আর রাজদরবারে আসতে অসুবিধা হবে না । জনগন আবার নূতন উদ্দীপনায় তাদের কল্যানে রাজার দেওয়া সম্পদের সুষ্ঠু বিলি বন্টনের জন্য লোক খুজে বের করে, তাদের তালিকা রাজদরবারে পেশ করল । রাজা আবার জনগনের বাছাই করা লোকদেরকেই জনগনের কল্যানে রাজভান্ডার থেকে সম্পদ বিলিবন্টনের জন্য নিয়োজিত করল । কিন্ত এবারও জনগনের পক্ষ থেকে দেওয়া লোকগুলি জনগনের সম্পদের উপর থেকে তাদের লোভ সংবরন করতে পারলো না এবং লোভের বশবর্তি হয়ে রাজার দেওয়া বর বেমালুম ভুলে গিয়ে জনগনের সম্পদ থেকে নিজেদের জন্য ব্যয় করা শুরু করল ।

ফলে আবারও জনগনের ভাগ্যোন্নয়নের আশা তিরোহিত হয়ে গেল এবং রাজার দেওয়া বর অনুযায়ী লোভকাতুরে ঐলোকগুলি দেশী কুকুরের ন্যায় আকার ধারন করল । ফলে রাজার এতো চেষ্টা ও আন্তরিকতা এবং রাজভান্ডারে ধনসম্পদে পরিপূর্ন থাকা সত্ত্বেও, শুধু জনগনের কল্যানে সুষ্ঠুভাবে বিলিবন্টনের জন্য উপযুক্ত লোক খুজে না পাওয়ার কারনে, ঐ রাজ্যের জনগনের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারল না । তারপর, রাজা আবার একদিন রাজ্যের সকল জনগনকে তার রাজদরবারে ডেকে এনে, জনগনের উদ্দেশ্যেই আবার নূতন বর দিল যে, যতদিন না তোমরা রাজাভান্ডার থেকে দেওয়া সম্পদ, যেগুলির প্রকৃত মালিক তোমরা জনগনই,তোমাদের কল্যানে ব্যয় করার জন্য সৎ, ন্যায়পরায়ন ও নি:স্বার্থবান লোক নির্বাচিত করে এনে আমাকে দিতে পারবে, ততদিন পর্যন্ত তোমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন করতে পারবে না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.