আমি নাই।
যখন মিডিয়াগুলোতে “টেলিভিশন” ছবিটি বিশ্বের চলচ্ছিত্র জগতের কাছে সুখ্যাতি এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত হওয়ার সংবাদটি দেখি, তখন আমার মনে কৌতুহল জাগে যে, বাংলাদেশি একটি ছবি পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে। কোন কারণে তা দেখার জন্য এটি যেভাবে হোক সংগ্রহ করে তার আদ্যো...আন্ত দেখি। যার রচয়িতা আনিসুল হক ও মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং পরিচালনা করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। দেখুন টেলিভিশন ছবিটিতে কিভাবে ইসলামকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
“টেলিভিশন” সিনেমাটির শুরুতেই গ্রামীন এক ব্যক্তি যিনি প্রভাব এবং শক্তি দেখিয়ে এলাকায় টেলিভিশনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন, প্রথমেই এমন চরিত্রের ভূমিকায় একজন মুসলমান চেয়ারম্যান’র সাক্ষাতকার নেয়া হয়।
(জ্ঞাতার্থে বলা হচ্ছে যে, টেলিভিশনে আলোচিত বিষয়ের প্রতিটি ভুলের জবাব সাথে সাথে দেয়ার চেষ্টা করবে এ অধম-ইন্ শাআলাহ)
সাক্ষাতকারে মুসলমান চেয়ারম্যানকে সাংবাদিকের প্রশ্নbr />
টেলিভিশনে সাংবাদিক: “গ্রামে ছবি তোলা এবং টিভি দেখার অনুমতি দেন না কোনো?
টেলিভিশনে চেয়ারম্যান: ইসলামে প্রাণীর ছবি তোলা হারাম, তাই।
টেলিভিশনে সাংবাদিক: ইসলামে এরকম তো কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাছাড়া অনেক মাওলানারা তো এখন অনুষ্ঠান করে থাকে। এমতাবস্থায় আপনি কি মনে করেন না যে, গ্রামের লোকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুন্ন করছেন?
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: প্রথমত: রচয়িতাদ্বয়ের মস্তিস্ক প্রসূত এ ধরনের একটি ছবি মুসলমান হিসেবে কাম্য নয় আমাদের।
দ্বিতীয়ত: আপনারা জানেন না? প্রাণীর ছবি তোলা ইসলামে হারাম। এটা হাদিছের কথা। আপনাদের অজ্ঞতার কারণে অন্যকে মুর্খ ভাবছেন, অথচ, নিজেরাই অজ্ঞতার বেড়াজালে আটকা পড়ে আছেন।
আর টিভির কথা বলছেন? টিভির তো কোনো দোষ নেই। দোষ তো সব মানুষের।
কারণ, প্রাণহীন কোনো বস্তুর দোষ হতে পারে না। হলে আপনা-আমার। টিভি তো একটা বোবা বস্তু। আমি মানুষ তাকে যেভাবে ব্যবহার করব, সে সেভাবেই ব্যবহার হবে। এতে টিভির কোনো দোষ নেই।
দোষ হলো, আমরা মানুষের।
আর টিভি হারাম হওয়ার পেছনে তার নিজস্ব কোনো কারণ নেই। হারামের পেছনে কারণটা হল, আমরা মানুষের। ইসলামের দৃষ্টিতে বাস্তবে যা দেখা জায়েজ, তা টিভিতে দেখা জায়েজ, আর বাস্তবে যা দেখা জায়েজ নয়, তা টিভিতেও দেখা জায়েজ নয়। যেমনঃ- আমাদের ইসলামে কোনো নারীকে পর্দাবিহীন দেখা যাবে না।
ঠিক তেমনি, তাদের টিভিতেও দেখা যাবে না। পুরুষ সব সময় দেখা জায়েজ, টিভিতেও দেখা জায়েজ।
মাওলানার কথা বলছেন, তা যদি উপরোক্ত মাসআলা অনুযায়ি হয়, তাতে কোনো সমস্যা দেখছি না। আর কোনো নারী হলে, তা না জায়েজ বলে গন্য হবে।
টেলিভিশনে চেয়ারম্যান: আপনি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার কথা বলছেন? পশ্চিমা দেশগুলোতে বোরকা পরা নিষিদ্ধ করছে, সেখানে মুসলিমদের গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট হয় না? আপনি সেখানে যাননি কোনো?
টেলিভিশনে সাংবাদিক: দেখেন, তার দেশে সাংবাদিকদের দায়িত্ব হচ্ছে, অন্যায়-অসঙ্গতি তুলে ধরা।
আর আমার প্রথম কাজ হচেছ আমার দেশের অন্যায়-অসঙ্গতিকে তুলে ধরা। আমরা তো বলছি না যে, ইউরোপ-আমেরিকা যা করছে, তা সব ঠিক। তারা বেঠিক করছে বলে আপনিও বেঠিক করবেন, সে অধিকার আপনি কোথায় পেলেন?
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: আপনারা বলছেন, গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা। ইসলাম তার নিজস্ব গতিতে চলবে। তাকে কেউ রুখতে পারবে না।
গণতন্ত্র অন্য বিষয়। তাকে কেনো ইসলামের সাথে মিশাচ্ছেন। গণতন্ত্রকে তার জায়গায় রাখুন। আর আপনি-আমি মুসলমান হিসেবে ইসলামকে আকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করি। এখানে গণতন্ত্র ুক্ষুন্ন হচ্ছে না, বরং ইসলামকে ক্ষুন্ন করছেন আপনারা।
রচয়িতাদ্বয় আপনারা বলছেন, অন্যায়-অসঙ্গতির কথা, ভিনদেশের সাংবাদিকরা তাদের দেশের অন্যায়-অসঙ্গতি তুলে ধরছে, যে বোরকা পড়া অন্যায়। আর আপনারা করছেন কী? বাংলাদেশে টেলিভিশন না চলায় হচ্ছে অন্যায়। আপনি একজন মুসলমান হিসেবে কী, ঐ বিধর্মীদের সাথে বোরকা পরা অন্যায়ের সাথে সাথে টেলিভিশনে না জায়েজ বিষয়গুলো দেখানোর প্রতিবাদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় অন্যায় হয়ে যাচ্ছে বলছেন? এটা কোন ধরনের কথা। বিধর্মীরা আমাদের কালচারের বিরোধীতা করে। আমরা তো কারো বিরোধীতা করছি না।
আমরা আমাদের ইসলামের গন্ডিতে থেকে টেলিভিশনে না জায়েজ বিষয় না দেখার জন্য টেলিভিশন না জায়েজ বলছি। এখন যদি কেউ এর দ্বারা ভালো কাজ করে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কই আগরতরা আর কই উগারতলা।
টেলিভিশনে, এরপর সাংবাদিক আইনের কথা বলে বলেন যে, আপনি কোন্ আইনের বলে এলাকায় টিভি নিষিদ্ধ করেছেন। এখানে কি আপনার আইন চলে? নাকি বাংলাদেশের আইন চলে? আপনি কি বাংলাদেশের মধ্যে আরেকটা মিনি বাংলাদেশ বানিয়ে রাখতে চান?
এ প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান সাহেব পর্দার আড়াল থেকে উত্তর দিতে পারবে না বলে উঠে চলে যান।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: কোনো এলাকাতে টিভি নিষিদ্ধের কথা বললে তো আইন লঙ্ঘণ হচ্ছে না। কারণ, আমরা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট বিধায়, আমাদের মুসলিমপাড়ায় এটা হওয়া স্বাভাবিক। আর বাংলাদেশে তো কোনো মুসলিমের পক্ষ থেকে এরকম আচরণ আজ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায় নি। তাহলে শুধু শুধু মুসলমানকে দোষারোপ করছেন কেনো? টিভি দেখা না দেখা আপনার ইচ্ছা। মুসলমানকে দোষারুপের রহস্যটা কী?
(আর এখানে ঐ মুসলমান চেয়ারম্যান চরিত্রের লোকটি উত্তর দিতে অক্ষম হয়েছে, তা বুঝানো হয়েছে খুব সহজেই।
বুঝাতে চেয়েছে যে, যুক্তির কাছে ইসলামের হার হয়েছে। কস্মিনকালেও না। ইসলামের পদতলে যুক্তির কষ্টিপাথর)
টেলিভিশনে, পরে সাংবাদিক আধুনিকতার ছোঁয়ার বাইরে আছেন উল্লেখ করে বলেন যে, এত্থেকে আপনাদের কবে মুুুক্তি মিলবে বলে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এলাকাবাসির কাছে।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: এলাকায় টিভি নেই বলে এটা তো কারাবন্দি হয়ে যায়নি। তাহলে কেনো মুক্তির কথা বলছেন? টিভির অশ্লিলতা, বেহায়াপনা এবং বেলাল্লাপনা দেখলেই কি মানুষ আধুনিক হয়ে যায়? আপনাদের কি জানা নেই যে, মানুষ টিভি দেখলে প্রেম, চুরি-ডাকাতি এবং অসভ্যজাতি হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে আজকের দুনিয়ায়।
টেলিভিশনে , উত্তরে এলাকাবাসি: আমরা এতে ভীষণ খুশি। আমরা চাই যে, ইহুদি-খৃস্টানদের জিনিস সারা
বাংলাদেশ থেকে উঠে যাক”।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: রচয়িতাদ্বয়ের উক্ত কথাটাও সঠিক না। কারণ, টেলিভিশন কোনো ইহুদি-খৃস্টানের আবিস্কার নয়। হতে পারে তা পৃথিবীতে আসতে তাদের মগজ ব্যবহার করা হয়েছে স্রেফ।
আল্লাহ তা’য়ালা ক্বোরআনে বলেন যে, ভবিষ্যতে অনেক কিছু আবিস্কার হবে, যা তোমরা জান না। যেমন: মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি। এর মানে এগুলো কোনো কাফির-মুশরিকের আবিস্কার নয়। এটা মহান আল্লাহর বহুকাল পূর্ব ঘোষিত জিনিসের বহি:প্রকাশ, যা আজ আমরা আমাদের চোঁখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। তাহলে কেনো বলল যে, এগুলো ইহুদি-খৃস্টানদের? কখনোই না।
ক্বোরআন-হাদিছ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই আমরা আবিস্কৃত জিনিসগুলোতে ওদের বলছি।
পরে সিনেমাটির গল্প শুরু হয় ।
সিনেমাটির সম্পূর্ণটাই বাংলা ভাষার নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় রচিত। পূর্বে যে সাাতকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তাও ছিল নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায়। আমি আপনাদের সামনে বাংলার চলিত সহজ ভাষার দ্বারা উপস্থাপণ করলাম মাত্র।
সিনেমাটির স্পর্শকাতর জায়গাগুলো উল্লেখ করছি। যা স্বাভাবিকত: ইসলামের বিধানগুলোতে আপত্তিকর বক্তব্য এবং মুসলমানদের নিয়ে বিদ্রুপ করা এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার হয়েছে তাতে।
আমি শুধু মুল ভাষ্যটা তুলে ধরব সংক্ষিপ্তাকারেbr /> “ ছবিটিতে প্রথমে চেয়ারম্যানের ছেলে অভিনব কৌশলে মোবাইল কিনে প্রেম করে একটি মেয়ের সাথে। পরবতীতে প্রেমকে আরো গাঢ় করার নিমিত্তে প্রেমিকা কম্পিউটার কেনার পরামর্শ দেয় প্রেমিককে। সেই ধারায় প্রেমিকযুগল কম্পিউটার কিনে স্কাইপের ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রেম-কাহিনি চালিয়ে যায়।
পরে তাদের প্রেমাকাশে মেঘের ছাঁয়া নেমে আসে, হিন্দু বাড়িতে টিভি দেখার কারণে চেয়ারম্যান ঐ মেয়েটিকে কান ধরিয়েছে বিধায়। পরে প্রেমিকা টিভি নিয়ে এসে তাকে তার বাড়ি থেকে বিয়ে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এ কথা শুনে প্রেমিক তার বাবার অবাধ্য হয়ে গ্রামে টিভি আনবে বলে মিছিল দেয়। পরে ছেলে ভুল বুঝতে পেরে বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। চেয়ারম্যান বাবা তাকে ক্ষমা করে দেন।
এটা টেলিভিশনের প্রেমিকযুগলের কাহিনি”।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: এখানে সামাজিক জবাব দেয়াটাই শ্রেয়, আপনারা মোবাইলের মাধ্যমে প্রেম শেখালেন, এরপর কম্পিউটারের আনকমন একটি বিষয়ে মাথায় এনে স্কাইপের ভিডিও কলের মাধ্যমে ছবি দেখে প্রেম করা শেখালেন। ফলে প্রেমে পড়া ছেলে অবশেষে বাবার অবাধ্য হলো। এটাই কী আধুকিতার ছোঁয়া? যা মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এ পর্যন্ত তো আপনারাই এই টেলিভিশন, মোবাইল এবং কম্পিউটার অপব্যবহার করে আসছেন।
আপনারাই ছেলে- মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ধ্বংসের জন্য প্রথমে দায়ি।
এদিকে “এ গ্রামের টিভি নিষিদ্ধ স্বত্ত্বেও এক হিন্দুলোক টিভি কিনে আনে। পরে এব্যাপারে ইমাম সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য আসেন চেয়ারম্যান, বললেন, আমি পরীক্ষায় পড়ে গেলাম, আল্লাহ আপনি আমাকে পথ দেখান। ইহুদি-নাছারারা একের পর এক হারাম জিনিস আবিস্কার করে। আর এ ফান্দে পা দিয়ে দুনিয়ার মুসলমানেরা ইমান-আক্বিদা হারিয়ে ফেলছে।
ইমাম সাহেবরাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন হুজুররা টেলিভিশনে ওয়াজ করে- আস্তাগফিরুলাহ” বলে চেয়ারম্যান দু:খ প্রকাশ করে আর বলছে যদি আমি টিভিটা নদীতে ফেলে দেই, তাহলে বিধর্মীদের অধিকার ক্ষুন্ন হবে। আর যদি গ্রামে এর রায় দিয়ে দেই, তাহলে ধর্ম নষ্ট হয়ে যায়। আমি কি করতাম! আল্লাহ” বলে ব্যঙ্গ করতে দেখা যায় ।
এদিকে ইমাম সাহেব চেয়ারম্যানকে বলেন, আমি তো ক্বোরআন হাদিছে পাইনি টেলিভিশন হারাম।
চেয়ারম্যান: দুই কলম ক্বোরআন-হাদিছ পড়ে আপনি পন্ডিত হয়ে গেছেন।
ইসলাম ধর্ম যখন নাযিল হয়েছিল, তখন টেলিভিশন হয়েছিল?
ইমাম: না।
চেয়ারম্যান: টেলিভিশনে যে ছবি দেখায়, তার প্রাণ আছে না নাই?
ইমাম: নাই।
চেয়ারম্যান: তাহলে টেলিভিশন দেখা হারাম না হালাল।
এরপর হিন্দু ব্যক্তির টিভিটা পানিতে ফেলে দেন চেয়ারম্যান।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জাবাব: আপনারা বলছেন, ইহুদি-নাছারা হারাম জিনিসি আবিস্কার করছে। সৃষ্টিগতভাবে কোনো জিনিসিই হারাম নয়। বরং ইসলামে যে সমস্ত বস্তুকে হারাম ঘোষণা দেবে, সেটাই হারাম, হারাম ঘোষণার আগ পর্যন্ত সেটা তাৎক্ষিণক হারাম হয়ে যায় না। টেলিভিশন হারাম হওয়ার কারণ আগেই জেনেছেন। মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্যবহার হারাম নয়।
হারাম-হালাম ব্যবহারাকারিদের উপর নির্ভর করে। যদি মোবাইল-কম্পিউটার অবৈধভাবে ব্যবহার করি, সেটা হারাম, আর বৈধভাবে ব্যবহার করলে হালাল। যেমনঃ- মোবাইলে প্রয়োজনে যোগাযোগ করার সুযোগ রয়েছে বটে। তবে এটাকে বেগানা কোনো মেয়ের সাথে, অথবা সন্ত্রাস চালানোর যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, এগুলো হল অন্যায়-অসঙ্গতি।
ঠিক তেমিন কম্পিউটার।
এটা দ্বারা খারাপ কাজও করা সম্ভব। পক্ষান্তরে এর দ্বারা ইচ্ছে করলে, আপনি ব্যবসা করতে পারবেন, ইচ্ছে করলে লেখালেখি করতে পারবেন আর ইচ্ছে করলে ক্বোরআন-হাদিছও পড়তে পারবেন। এটা সম্পূর্ণ আপনার বিবেকের উপর নির্ভর করবে। কোনো হুজুরের জন্য না জায়েজ আর কোনো মডার্নের জন্য জায়েজ, এমন কোনো দুনিয়ার রীতিনীতি হতে পারে না। তবে শিক্ষিত মুর্খদের কাছে এর কোনো জবাব নেই।
আপনারা বলছেন, ইমাম সাহেবর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ইমাম সাহেবরা কি আপনাদের মতো অশ্লিলতা করে যে, তারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? তবে এক-দুইটা ঘটনার কথা অপ্রাসঙ্গিক।
আমি আগেই বলেছি, ওয়াজ করা তো খারাপ নয়, যার যেখানে ইচেছ হতে পারে। আপনারা এটাকে দোষের সাব্যস্ত করছেন যে, হুজুররাও টিভিতে ওয়াজ করে। খালি পাত্রে আপনি পাক বস্তুও রাখতে পারবেন আবার নাপাক বস্তুও রাখতে পারবেন, পাত্রটি পাক নাপাক হওয়ার ব্যাপারে নির্ভর করবে পাত্রে রাখা বস্তুটি দেখে। জানি না, আপনাদের মগজ পাক না নাপাক।
টিভি নদীতে ফেলে দিলে বিধর্মীদের অধিকর ক্ষুন্ন হবে। আপনি তো অন্যের সম্পদ ক্ষতি করতে পারেন না। এটা ইসলামে নেই। তাহলে কেনো উপরোক্ত বাণীটা এনে ইসলামকে কলুষিত করার অপচেষ্টা করছেন।
আর বলছেন যে, টিভির রায় দিলে ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে- নাউযুবিলাহ।
কোনো খারাপ কাজ করলে আপনি নষ্ট বা ধ্বংস হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ইসলাম ধর্ম কেনো নষ্ট হবে। এ ধরনের অভিনয় করে কী ইসলামকে দমিয়ে দেয়া যাবে? না, কস্মিনকালেও না।
“পরের দৃশ্যটা হল যে, ঐ চেয়ারম্যান সাহেব হজ্বে যাবেন”। এ শটটাই স্পর্শকাতর, খুবই দুঃখজনক এবং আমাদের মুসলমানের জন্য মারাত্মক লজ্জাস্কর।
টেলিভিশনে চেয়ারম্যান চরিত্রের ব্যক্তিটি গ্রামে টেলিভিশনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। কোনোভাবে এ এলাকায় টেলিভিশন চলবে না, রাখা পর্যন্ত যাবে না। এজন্য তার ছেলে পর্যন্ত বিদ্রোহ ঘোষণা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এবং চেয়ারম্যান সাহেবই তার মতের উপর অটল এবং অভিন্ন ছিল।
“চেয়ারম্যান সাহেব হজ্বে যাবে।
কিন্তু পাসপোর্ট নেই। তাই পাসর্পোট করতে পাসপোর্ট অফিসে যান। এসময় একজন বলে উঠলেন, পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে, নিয়ে আসেন। এ কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব, রাগান্বিত হয়ে বললেন, এ ফালতু নিয়ম বন্ধ করা যায় না? অবশেষে নানা কাহিনির পর তাকে হজ্বের জন্য ছবি তুলতেই হলো। সপ্তাহ খানেক বাদে এলাকার মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাত করে প্রাথমিক সফর লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জাবাব: হজ্বে যাবে চেয়ারম্যান সাহেব। কিন্তু ছবি তুলতে তিনি দ্বিধা করছেন। এটা আপনাদের অজ্ঞতা বৈ কি। আপনাদের জানা উচিৎ যে, ইসলামে প্রয়োজনবশত; ছবি তোলা জায়েজ আছে। তাহলে কেনো এটাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করছেন।
নিজেদের অজ্ঞতার কারণে ইসলামের বিধিগুলোতে আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। তাতে আপনাদের ধ্বংস অনিবার্য।
লঞ্চ থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ছবি দেখতে পান চেয়ারম্যান। তারপর গাড়িতে উঠেন এবং এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখেন যে, তরুণ-তরুণীদের বিভিন্ন স্টাইলে দেয়াল-ফেস্টুনে ছবি আটকানো, কোনোস্থানে অর্ধনগ্ন ছবিও দেখা যাচ্ছে। এ দেখে দেখে হজ্বপ্রত্যাশি চেয়ারম্যান চলে এলেন ট্রাভেলসে।
পরে জানা গেল যে, আগত হজ্বযাত্রীরা ট্রাভেলসের কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছে। এটা বুঝতে পেরে চেয়ারম্যান সাহেব মিডিয়ার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলে, মিডিয়াকর্মিরা সমবেদনা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।
পরিশেষে চেয়ারম্যান সাহেব একটি হোটেলে উঠেন। সেখানে না খেয়ে-দেয়ে মনমরা অলস শরীর নিয়ে ঘুমুচ্ছেন আর একটু পরপর হোটেলবয় এসে খাবার দিয়ে গেলেও তিনি কিন্তু খাবার খাচ্ছেন না। ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ শুনা যায়, আলাহুম্মা লাব্বায়কি........এর ধ্বনি।
তিনি তা শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখেন, কোন্ দিক থেকে আওয়াজ আসছে। রুম থেকে বের হয়ে দেখেন অন্যরুমের টিভিতে হজ্ব দেখাচ্ছে। অধির আগ্রহে দেখছেন চেয়ারম্যান সাহেব। পরে হোটেলবয়কে ডেকে বলে, আমার টিভিটা চালিয়ে দাও। চালিয়ে দিলে চেয়ারম্যান সাহেব, টিভিতে হজ্বের অনুষ্ঠান দেখে চোঁখের পানি ফেলে কেঁদে কেঁদে বললেন, আলাহুম্মা লাব্বায়িক..........আলাহুম্মা লাব্বায়িক।
আর বলছে, হে আল্লাহ আমি ঢাকা থাকি, মক্কা থাকি যেখানে থাকি, আমি তোমার কাছে পৌছে গেছি”। এভাবে কেঁদে কেঁদে ছবিটির সমাপ্ত ঘটায়।
অধমের দাঁতভাঙ্গা জবাব: অবশেষে টেলিভিশন ছবিটির রচয়িতাদ্বয় ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ৫ম স্তম্ভটিকে নিয়ে এতো বড় দুঃসাহসিক আচরণ দেখাতে আপনাদের মনে এতটুকু বাঁধল না যে, আমরা কি করছি? আপনারা যা করছেন, তাতে মুসলমান আছেন কিনা নিজেরাই বিচার করে নিয়েন। শেষ অভিনয়টিতে হজ্বযাত্রীদের একজন চেয়ারম্যান, হজ্ব পালনে অন্যদের সাথে প্রতারিত হয়ে অবশেষে একটি হোটেলে উঠে তিনি। আর এখানে সময় কাটাচ্ছেন ঘুমিয়ে, না খেয়ে।
হঠাৎ শুনা যায় যে, হজ্বের ধ্বনি। পরে তিনি তার টিভি চালিয়ে হজ্বের কর্মকান্ডে সাথে শামিল আছে বলে, বলতে থাকে যে, আল্লাহ আমি ঢাকায় থাকি, মক্কায় থাকি, যেখানে থাকি তোমার কাছে পৌছে গেছি।
রচয়িতাদ্বয়, আপনারা দর্শকদের বুঝাতে চেয়েছেন যে, টিভির কারণে ঐ চেয়ারম্যান আজ হজ্বে শরিক হয়ে হজ্ব পালন করতে পেরেছে। এমনকি আল্লাহর কাছে পৌছে গেছে।
অথচ, ঐ চেয়ারম্যান গ্রামের বাড়িতে টিভির বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার।
যার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল চেয়ারম্যান, আজ সেই টিভির কারণে তার হজ্ব করতে সুবিধা হয়েছে। নাউযুবিলাহি মিন যালিক।
অথচ, হজ্বের নিয়মানুসারে তাকে মক্কায় যেতে হবে। তাকে ইহরাম বাঁধতে হবে। মক্কায় গিয়ে হজ্বের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে হজ্ব পালন করতে হবে।
তারপর না তার হজ্ব আদায় হতো। তা না, টিভির মাধ্যমে হজ্ব পালন হয়ে গেল?
“টেলিভিশন” ছবিটিতে ইসলামকে নিয়ে উপহাস,ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হয়েছে। মুসলমানদের ইহুদি-নাছারাদের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমাদের জিনিস ইহুদি-নাছারাদের অভিনয়ের মাধ্যমে বলে দিয়ে, তাদের মন জয় করে সুখ্যাতি লাভ করে পুরস্কারের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের নাটক রচনাকারী আনিসুল হক এবং মোস্তফা সরযার ফারকী। ফলে অন্যদিকে তাদের ইমান-আক্বিদা চলে গিয়ে বিধর্মীদের বিশ্বাস তাদের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে।
আপনাদের পরিণাম খুবই ভয়াবহ হবে।
সর্বশেষ আমি টেলিভিশন ছবিটির যথাযথ জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি, আপনারাও এর সঠিক জবাব দিতে এগিয়ে আসতে পারেন।
(নকলে কুফর, কুফর না বাশদ, অর্থাৎ কুফুরের আলোচনা মানে কুফর করা নয়)
সমাপ্ত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।