বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত। কৃষি ক্ষেত্রের সেন্টার অব এঙ্েিলন্স হিসেবে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ১৫ বছর ধরে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। দেশের কৃষি ক্ষেত্রে অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি মোট ১৮৭ একর (৭৬.৬৬ হেক্টর) জমির ওপর অবস্থিত। ২২ নভেম্বর, ১৯৯৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা। গত ২২ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্জ্বল ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিক উদযাপিত হয়।
আধুনিক কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তিকে অধিকতর এবং আধুনিক করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চলেছে।
এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে ১৯৭৯ সালে কৃষিতে উচ্চশিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সে মোতাবেক সরকার ১৯৮০ সালে Bangladesh College of Agricultural Sciences (BCAS) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৮৩ সালে এই কলেজটিকে Institute of Postgraduate Studies in Agriculture (IPSA)-এ রূপান্তর করে কৃষি বিজ্ঞানে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশ এবং জাপান সরকারদ্বয়ের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা মোতাবেক Japan International Cooperation Agency (JICA) -এর মাধ্যমে টেকনিক্যাল সহযোগিতা আরম্ভ করে।
বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পরবর্তীতে মার্কিন সরকার USAID এর মাধ্যমে ১৯৮৬ সাল থেকে ইপসাকে সহযোগিতা প্রদান আরম্ভ করে। গতানুগতিক কৃষি শিক্ষায় আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে USAID-এর বিশেষজ্ঞদের সহায়তায়, ইপসার শিক্ষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদনক্রমে আমেরিকান কোর্স ক্রেডিট শিক্ষা পদ্ধতি ইপসাতেও প্রবর্তন করা হয়। কৃষিতে উচ্চশিক্ষার প্রসার এবং কৃষির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আনুষঙ্গিক বিষয়ে উন্নত শিক্ষাদান, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরের উদ্দেশে ইপসাকে পুনর্গঠন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিধানকল্পে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ১৯৯৮-এর ১৩ জুলাই একটি আইন প্রণীত হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ওই আইনটি (১৯৯৮ সালের ১৬নং আইন) ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়, যা ২২ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। গত এক দশকের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে ছাত্র-শিক্ষকের নিরলস প্রচেষ্টা ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কৃষি ক্ষেত্রে সর্বশেষ উদ্ভাবিত জ্ঞান, প্রযুক্তি ও তথ্যভাণ্ডার ব্যাপকভাবে আত্তীকরণ, চর্চা ও প্রয়োগের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে চলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাহ্বুবর রহমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণার ম্যাটারিয়াল বিনিময় কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে অনেক চুক্তি করেছেন যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যকে সমুন্নত রেখে বিশ্বমানের সেশনজটবিহীন অত্যাধুনিকমানের শিক্ষাপদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল শক্তির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটিয়ে উচ্চতর লাগসই কৃষি প্রযুক্তি ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন 'সেন্টার অব এঙ্েিলন্স' হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দক্ষ কৃষিবিদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাচ্ছে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে। কৃষি শিক্ষাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করে তুলতে মৌলিক ও ফলিত গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যাপক অবদান রাখছে। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টি বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের মাধ্যমে একদিকে যেমন শিক্ষক ও ছাত্রদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান কৃষি উৎপাদন ও প্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ক সমস্যাবলি সম্পর্কে অবহিত করছে, অন্যদিকে তেমনি কৃষক ও সংশ্লিষ্ট সবার ব্যবহারের জন্য তথ্যভাণ্ডার এবং সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়কে উপদেষ্টার ভূমিকায় উন্নীত করছে।
কৃষক ও গবেষকের মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ কার্যক্রমটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবিত গবেষণা লব্ধ ফলাফল কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের মধ্যে গবেষণা কর্মশালা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে অবহিত করছে প্রতিনিয়ত।
দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মহান ব্রতকে সামনে রেখেই এ বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষ কৃষিবিদ তৈরির প্রয়াস চালাচ্ছে। এই দক্ষ কৃষিবিদদের চিন্তা-চেতনা, প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, আধুনিক প্রযুক্তিগত ধারণা ও প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা উপহার দিতে সক্ষম হবে একদিন।
আর বাংলাদেশের বিপ্লবে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি গর্বিত অংশীদার হিসেবে আন্তঃপ্রকাশ করবে_ এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
ৎ মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী
মো. মাইনউদ্দিন সোহাগ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।