আগে চলেন ঝটপট আমরা জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১০০ নম্বর ধারাটি পড়ে ফেলি। কার্যপ্রণালী বিধি বা রুলস অফ প্রসিডিউর আপনি পাবেন জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে। স্ক্রল করে চলে যান ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায়। আমি নিচে স্ক্রিনশট দিয়ে দিচ্ছি।
তার মানে হল আপনি একজন সাধারণ নাগরিক হলেও আপনারও একটি উপায় আছে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাইলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আলোচনার জন্য নিয়ে যাওয়ার।
কাজটি একদম ছেলে খেলা না আবার হিমালয় তুলে নিয়ে আসার মত কঠিনও না। আপনাকে কিছু সমমনা মানুষ যোগাড় করতে হবে এবং একজন সংসদ সদস্যকে রাজী করাতে হবে। আমাদের সংসদ সদস্যদের সবাই দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মত না। বরং ইদানীং কালে একাধিক সংসদ সদস্য আপনার বয়সীদের সাথেই যোগাযোেগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে আসা শুরু করেছেন।
সারমর্ম হল পিটিশনের চেষ্টা করাই যায়।
নৈতিক দিক থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, মাত্র টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। অনেকের একটি অভিযোগ হল সরকার কেন এটি নিয়ে সংসদে আলাপ করেনি? খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। যারা এই অভিযোগ তুলে তাদেরকেও একটি যৌক্তিক প্রশ্ন করা যায় - কার্যপ্রণালী বিধির ১০০ ধারা অনুযায়ী এটি সংসদে আলোচনা হোক এই মর্মে পিটিশন করার নাগরিক দায়িত্বটিও কেন তারা পালন করেন নি? রাষ্ট্র একটি দুই চাকার শকট। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি একটি চাকা হয়, জনগণ আরেকটি চাকা।
যদি আমরা চাই শকটটি এগিয়ে যাক তাহলে দুটি চাকাই সমান ভাবে ঘুরতে হবে।
এবার দেখি এখন পর্যন্ত এই পিটিশন ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা কি? আমি এই তথ্যগুলো আপনাদের নিরুৎসাহিত করার জন্য দিচ্ছি না বরং তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজটি আরো নিখুঁতভাবে করার জন্য বলছি।
বাংলানিউজ২৪.কমে ২০১১ সালের ১১ই মার্চে প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ৫ম সংসদ থেকে (খবরটি অনুযায়ী এর আগে পিটিশনের বিধান ছিল না) এখন পর্যন্ত ১৪৯টি পিটিশন জমা পড়লেও গৃহীত হয়েছে মাত্র ২০টি। পঞ্চম সংসদে ১৭টি, সপ্তম সংসদে দুটি এবং অষ্টম সংসদে একটি। সর্বশেষ সংসদে ১২টি পিটিশন জমা পড়ে এবং কোনটিরই নিষ্পত্তির জন্য যে বৈঠকটি প্রয়োজন তা হয়নি।
এখনই উৎসাহ হারাবেন না। খবরে বিস্তারিত বলা হয়নি পিটিশনের পদ্ধতি ঠিক ছিল কিনা, কিসের ভিত্তিতে বাকিগুলি বাতিল হল। এগুলো জেনে নিতে হবে। তারপর হতাশ না হয়ে ফাঁকফোঁকরগুলো ঠিক করতে হবে।
একটু ভেবে দেখুন গত পাঁচবছরে কি মাত্র ১২টি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যেগুলো সংসদে আলোচিত হওয়ার দরকার ছিল? তাহলে পিটিশন এত কম হল কেন? নিশ্চয়ই আমি বা আপনি ফেসবুকে যেসব স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুকের সার্ভার কাঁপিয়ে ফেলেছি তার কিছু না কিছু পিটিশনের যোগ্য ছিল।
আমরা করলাম না কেন? অন্তত: চেষ্টা করলাম না কেন?
আমার কথাবার্তা পছন্দ না হলে এইবেলায় পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজটি করে ফেলুন। সেটি হল নিজে হতাশ হওয়া, সবার মাঝে সেই হতাশা ছড়িয়ে দেওয়া আর শুধু অভিযোগ করে যাওয়া কিন্তু দায়িত্বটি পালন না করা। কিভাবে করবেন? খুব সহজ: নিচের স্ট্যাটাস সহ এই লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করে দিন।
"খুবই বাস্তবতাবিবর্জিত লেখা। সবাই জানে দুই বড় দল নিজেদের মধ্যে আতাঁত করেই সব করে।
এই সব পিটিশন ফিটিশন করে কিছু হবে না। বিদেশের মাটিতে বসে অনলাইনে হোয়াইট হাউসের পিটিশন বাটনে ক্লিক করে যার কাজ হয়ে যায় দেশের পিটিশনকে সোজা মনে করে উপদেশ দেয়া তার জন্য খুবই স্বাভাবিক। যখন এই পিটিশনের জন্য শুধু এম.পি. 'র সই জোগাড় করতেই দুই বছর লেগে যাবে তখন বাছাধন বুঝবে কত স্বাক্ষরে কত পিটিশন। হা হা হা!"
আসলেই পিটিশন এর চেয়ে কঠিন। আপনাকে আগের পিটিশন গুলো কেন সফল হয়নি সেটি বুঝতে হবে।
আপনার সমমনা অন্য মানুষদের আপনার দাবী বুঝাতে হবে। তারপর একজন সমমনা এম.পি. খুঁজে বের করতে হবে। তারপর নিয়ম কানুন জানতে হবে। সেটির ফলোআপ করতে হবে। প্রয়োজনে সাংবাদিকদের জানাতে হবে যাতে তারা গণমাধ্যমে তাগাদা দিতে পারেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল অনেকেই এটি টের পাবেন না। কেন পাবেন না? কিছু লোক আছে যাদের প্রধান বিনোদন হল দেশের জন্য কাজ করে দিনাতিপাত করা, ঘরের খেয়ে বনের ডাইনোসর তাড়ানো। আর এটাও সত্য যে এটি সবচেয়ে কঠিন কাজ নয়। অন্তত: যারা জীবন দিয়ে এই দেশটিকে আপনার আমার হাতে তুলে দিয়ে গেছেন তাদের ত্যাগ স্বীকারের তুলনায় তো না-ই।
কিছু যখন নিয়মিত পিটিশন করা শুরু করবে তখন আস্তে আস্তে এর নিয়ম কানুনগুলো অন্যান্য মানুষের কাছেও পরিচিত হওয়া শুরু করবে।
যত বেশি পিটিশন হওয়া শুরু করবে আস্তে আস্তে সংসদ সচিবালয়ও এর প্রতি মনোযোগী হবে, জনবল বাড়াবে। প্রথম কয়েক বছরের ধাক্কাধাক্কিটা যদি একটু কষ্ট করে পার করে দেয়া যায় তাহলেই হবে। আমরা কিন্তু কিছু পরোক্ষ উপকারও পাব। পিটিশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে আমাদের সাথে সাংসদদের একটি অনানুষ্ঠানিক সংযোগের সংস্কৃতি শুরু হবে। এখন একটি প্রচলিত ধারণা হল সাংসদরা দলীয় প্রধানের কথায় উঠে আর বসে।
কিন্তু একজন ভাল ও দক্ষ সাংসদ যদি তার পায়ের নিচে জনসংযোগ ও সমর্থনের শক্ত মাটি পায় তাহলে সে নিজেও জোর গলায় দলীয়প্রধানের মুখোমুখি হয়ে ন্যায়সংগত দাবীগুলো তুলতে পারবে। তাত্ত্বিকভাবে আমাদের সাথে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহলের যোগাযোগ হওয়ার কথা যার যার সাংসদদের মাধ্যমে। আমরা যদি সেই হারিয়ে যাওয়া সংযোগ পিটিশনের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে পারি তাহলে মন্দ কি?
তো তাহলে পিটিশন করছেন? আগামী সংসদ যখন শুরু হবে টিকফা চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবী দিয়েই শুরু করুন না!
শেহাব,
বাল্টিমোর
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।