আলো খুঁজছি আলো, পেয়ে যাই যদি ভালো। চাই সত্যের আলো, হোক তা যত কালো। আজকের প্রথম আলো পত্রিকায় খবর এসেছে, বাজারে প্রচলিত সাত ধরনের পানীয়তে (এনার্জি ড্রিংক) জনসাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। এসব উপাদান ভোক্তাদের আসক্তি বৃদ্ধি, যৌনশক্তি হ্রাস ও হৃদরোগের কারণ হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিগো-বি, ম্যান পাওয়ার (স্বচ্ছ তরল), ম্যান পাওয়ার (অস্বচ্ছ তরল), হর্স ফিলিংস, রয়েল টাইগার, ব্লাক হর্স ও স্পিড নামের সাতটি পানীয়তে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম চারটিতে ‘অপিয়াম উদ্ভূত অপিয়েট’, ও ‘সিলডেনাফিল সাইট্রেট’ নামের রাসায়নিক দ্রব্য এবং শেষের তিনটিতে উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন রয়েছে।
অপিয়াম হলো নেশা, আর সিনডেনাফিল সাইট্রেট হলো ভায়াগ্রার রাসায়নিক নাম। তার মানে এর মাধ্যমে ভোক্তাদেরকে প্রতিনিয়িত আফিম এবং ভায়াগ্রা খাওয়ানো হচ্ছে। অনেকটা ট্যাবলেট গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খাওয়ানোর মতো।
এবার মূল কথায় আসি।
আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং বিএসটিআই এর দৃঢ় ব্যবস্থাপনার অভাবে এসন পণ্য সহজেই বাজারে চলে আসে। বাজারে আসলেই তো আর পাবলিক এগুলো সাথে সাথে খায় না। পাবলিককে এগুলো আগে চিনাতে হয়, তারপরে খাওয়াতে হয়। প্রযুক্তির উতকর্ষতার এই যুগে পাবলিককে পণ্য চেনানোর একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়ায় প্রচারণা বা বিজ্ঞাপন। মিডিয়ায় প্রচারণার জন্য চাই যুতসই বিজ্ঞাপন।
আর জনগণকে আকর্ষণ করতে জনপ্রিয় তারকাদের বিজ্ঞাপনের বিকল্প নেই।
বিজ্ঞাপন মানেই টাকার বাহার। সেই টাকার টোপেই তারকারা দৌড়ে চলে আসেন বিজ্ঞাপনে। বানানো হয় বিজ্ঞাপন। সাধারণ মানুষ তারকাদের খুব ভালবাসে।
মন থেকেই ভালবাসে। তারকাদের আদর্শ ভাবে। তাদের অনুকরণ করতে চায়। তাইতো জ়েমস এবং আইয়ুব বাচ্চুর মতো তারকারা যখন ব্লাক হর্স ও টাইগার খাওয়ার আহবান করেন, মানুষ তখন হুমড়ি খেয়ে পরে ব্লাক হর্স, টাইগার ও স্পিড খাওয়ার জন্যে।
কিছুদিন আগে ক্ষতিকর ত্বক-ফর্সাকারী প্রসাধনীর ওপরও এইরকম প্রতিবেদন এসেছিল।
প্রতিবেদনে বোটানিক এ্যারোমাসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্রসাধনী পণ্যের ভয়াবহতার কথা উঠে এসেছিল। মানুষ বোটানিক এ্যারোমার নাম জানতো না, নিরব, সারিকা ও শাহেদের মতো তারকারা তাদেরকে এগুলোর নাম জানিয়েছে, চিনিয়েছে এবং ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এইসব পণ্য ব্যবহারকারীরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে কী বিজ্ঞাপণকারী তারকাদের কোনো দায় নেই?
বেশ ক’বছর আগে সিগারেটের একটি বিজ্ঞাপনে জাহিদ হাসানকে দেখা গিয়েছিল। সেই বিজ্ঞাপনটির পরে তোপের মুখে পড়েছিলেন জাহিদ হাসান, যে কেন তিনি সিগারেটের মতো জীবনঘাতি একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন করেছেন। সিগারেটের চেয়ে এইসব ড্রিংকস এবং ত্বক-ফর্সাকারী পণ্য কী কোনো অংশে কম ক্ষতিকর?
সাধারণ মানুষ যে জনপ্রিয় তারকাদের কতটুকু ভালবাসে তা জনপ্রিয় তারকারা ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই টের পান।
তারকাদের কাছে প্রশ্ন রাখছি, এদের ভালবাসার কী প্রতিদান দিচ্ছেন আপনারা তা কী কখনো ভেবে দেখেছেন? কখন, কোথায়, কী পণ্যের জন্য বিজ্ঞাপনে যাচ্ছেন, তা কী কখনো যাচাই-বাছাই করেছেন? আপনারা তো বিজ্ঞাপনকৃত পণ্য ব্যবহার করেন না, আপনারা বিজ্ঞাপনের শট দিয়েই খালাস। আপনাদের করা বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে পণ্য ব্যবহার করে অসুস্থ হচ্ছে লাখো মানুষ! সাধারণ মানুষের ভালবাসার এই কী আপনাদের প্রতিদান? আমি জানতাম জনপ্রিয়দের কাজ জনমানুষকে সচেতন করা, অচেতন করা নয়। আশা করছি সবাই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।