ব্যস্ত রাস্তায় কখনো কখনো চোখ আটকে যায়। আপনার গাড়ি বা রিকশার পাশে একজন মেয়ে মোটরবাইকে। এতে চোখ আটকানোর কী আছে! সাধারণত মেয়েরা ছেলেদের পেছনে বসেন, মেয়েটি নিজেই যখন বাইক চালিয়ে যান, তখন একটু-আধটু চোখ আটকায় বৈকি। কেউ কেউ ভাবেন, ইশ্ আমিও যদি চালাতে পারতাম। শখ করে নয়, বরং প্রয়োজন থেকেই ঢাকা শহরের রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হন তাঁরা।
বাসের জন্য দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা যানজটে ঘড়ির কাঁটায় সময়ের অপচয়কে মেনে নিতে চান না যাঁরা, তাঁদের জন্য একটি চমৎকার সমাধান হলো এই মোটরবাইক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কারিশমা শানুর কথাই ধার যাক। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার রোজকার বাহন হলো সুপার সিরিজের ৫০ সিসি হোন্ডা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে প্রায়ই ক্লাসের দেরি হয়ে যেত। বাসাটাও এমন জায়গায় যে রিকশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তাঁর বাবাকে সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলার পর বাবা সময়ের কথা ভেবে একটা মোটরবাইক কিনে দেন। ব্যস, হয়ে গেল সমাধান। সেই থেকে পথে আর দেরি নয়। যদিও শুরুর দিকে বাইকচালক হিসেবে পথেঘাটে কম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়নি। তবে এখন বদলে গেছে সে চিত্র।
দু-একজন ছাড়া প্রায় সবাই মেয়েদের বাইক চালানো প্রশংসার চোখে দেখছেন। প্রয়োজনে কিংবা হঠাৎ বিপদে এমনকি পেট্রল পাম্পেও সহযোগিতার করেন সবাই। জানান কারিশমা শানু।
সম্প্রতি বাংলাদেশে মোটরবাইক নির্মাতা টিভিসির স্কুটি বাইকের স্পোকসপারসন হয়েছেন অভিনয়শিল্পী অপি করিম। অপি বলেন, মেয়েরা আজ আকাশপথে পাড়ি জমাচ্ছেন উড়োজাহাজ নিয়ে, চালক হিসেবে রেলপথেও দিয়েছেন দায়িত্বশীলতার পরিচয়।
আর সড়কপথে তাঁর চলার স্বাধীনতার সঙ্গী হলো বাইক। এটি যেমন সময় বাঁচায়, তেমনি গণপরিবহনের নানা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকেও একটি মেয়েকে রেহাই দিতে পারে। তবে পথে বাইক নিয়ে বের হওয়ার আগে অবশ্যই বাইক চালনায় দক্ষ হতে হবে।
আমাদের দেশের মেয়েদের মোটরবাইক চালানোর বিষয়কে অনেক পরিবার মেনে নিতে চায় না। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি মেয়েটিকেও বাইক চালনায় দক্ষ হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স অর্জন করতে হবে।
জানতে ও মানতে হবে ট্রাফিক আইন, রাস্তার বাইক চালানোর সঠিক নিয়ম। বাইক চালানোর জন্য পোশাক নিয়ে অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা রয়েছে। বাইক চালাতে যে পাশ্চাত্য পোশাকই পরতে হবে তা কিন্তু নয়। বরং সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি পরেও আপনি অনায়াসে বাইক চালাতে পারেন; যেখানে জিনিসপত্র ও ব্যাগ রাখারও সুবিধা রয়েছে।
যাঁরা মোটরবাইক কিনবেন বলে ভাবছেন, তাঁরা টিভিএসের স্কুটি কিনতে পারেন।
এ ছাড়া সুপার সনি ও টাইগার ব্র্যান্ডের বাইক বেছে নিতে পারেন। তবে মেয়েদের বাইকগুলো একটু কম ওজনের হলে ভালো হয়। বলেন কারিশমা শানু। বাইক চালনা শেখার ক্ষেত্রে ভারসাম্য রাখার সুবিধার্থে বাইকের পেছনের চাকার দুই পাশে বাড়তি (স্পেয়ার) চাকাসহ বাইক কিনতে পারেন। পরে এটি খুলে নিতে পারবেন।
বাইক চালানো ভালোভাবে না শিখে পথে বের হওয়া যাবে না। মনে রাখবেন, মোটরবাইক নিয়ে পথে বের হলে জানতে ও মানতে হবে রাস্তাঘাটের চলার নিয়মকানুুন। হেলমেট পরতে কখনোই ভুল করা যাবে না।
বাইক চালানোর সময় মাথা রাখতে হবে ঠান্ডা। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি তা হলো, আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।