আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি প্রডাক্টিভ পাগ্লামি...বাইকে চড়ে বাংলাদেশ(১৫০০ কিলোমিটার)..২য় পর্ব

চলে যাবো বহুদুর..।
অজানার শুরু...ঢাকা থেকে সিলেট অজানা সবকিছুই অন্যরকম থ্রিল আনে আমাদের মনে। সে হোক বা লটারির ড্র, কিম্বা ক্রিকেট ম্যাচের রেজাল্ট অথবা পরীক্ষার ফলাফল। বাইকে আমার আর কাইয়ুম কে সারা দেশ ব্যাপী ১৫০০ কিলমিটার এর অভিযানেও এই থ্রিল এর মরীচিকাই নিয়ে গিয়েছিল অতদুরে। রাজশাহী থেকে ঢাকার পথ ছিল আমাদের চেনা।

তাই সামনে সিলেট এর পথ ছিল আমাদের জন্য পুরপুরি ভিন্ন এবং অজেয় চ্যালেঞ্জ। ঢাকা ছিল আমাদের বেশ কিছু জিনিসের কালেকশন পয়েন্ট। তাই হাসান দের বাসায় বেশি বিশ্রামের সময় হয়নি আমাদের। বিকালেই আমরা সেনানিবাসে আমার রুম থেকে কাইয়ুম এর জন্য হেলমেট, আমার আইডি কার্ড আর দোকান থেকে আমার জন্য একটা মোবাইল প্যান্ট কেনার জন্য বের হয়েছিলাম। রাতটা আমাদের অনুসন্ধান পর্বের জন্য ছিল।

হ্যাঁ, অনুসন্ধানই ঢাকা থেকে সিলেট এর পথের অনুসন্ধান। গুগল এ সার্চ দিয়ে দেখে ঘোড়াশাল গামী পথটিই বেছে নিয়েছিলাম। কিভাবে যেন এই রাতে ঘুম ভালই হয়েছিল। সকাল ৫। ৩০ এ ঘুম থেকে উঠে আমি আর কাইয়ুম সিগারেট ধরিয়ে শুরু করেছিলাম হাসানকে বিরক্ত করা।

এত মজা পেয়েছিলাম যে অভিজানের একটা শিক্ষনিয় পয়েন্টই করে দিয়েছিলাম যে “মানুষকে বিরক্ত করার মজাই আলাদা। কিছুটা আমাদের নিয়ে চিন্তা, কিছুটা হিংসা আর মুখে হাল্কা হাসি দিয়ে হাসান আমাদের বিদায় দিয়েছিল (যা সে কখনোই স্বীকার করবে না)। শুরু হল আমাদের অজানার পথ। ঢাকা ঘোড়াশাল পথ ছিল চওড়ায় ছোট। টঙ্গী থেকে তাই ডানের পথে ঢুকে আমরা মটামুটি হতাশই হয়েছিলাম প্রথমে।

কিন্তু একটু সামনে গিয়েই দুপাশে বড় বড় গাছের ছায়া ঘেরা পথ আবার খুব কম গাড়িঘোড়ার উপস্থিতি আমাদের মনে অন্যরকম আনন্দ এনে দিয়েছিল। তাই কখন ৫০ কিলো পার হয়ে ঘোড়াশাল গিয়ে পওছেছিলাম একরকম টেরই পাইনি। সেখানে একটা ব্রীজ পার হয়ে একটা ছোট্ট হোটেলে ঢুকেছিলাম সকালের নাস্তা করতে। ৭ টা বাজে, খুবই হাল্কা রোদ আর মৃদু বাতাস; একটি আদর্শ সকালের সব গুণই ছিল সেদিন। সেই সাথে একটি পুরনো হোটেল, হোটেলে ৫/৬ জন লোক বসে আড্ডা দিচ্ছে আর একটি সাদাকালো টিভিতে সত্তর দশকের হিন্দি গান আমাদের যেন সেকালের সরাইখানাতেই নিয়ে গিয়েছিল।

খাবারও সেই তেল ছাড়া পরটা আর ঘন ডাল সাথে যদি চান ডিমের অমলেট। আহ! চা সিগারেট দিয়ে শেষ করা সেই নাস্তাটা যা জমেছিলনা; কখনই ভোলার নয়। আবার যাত্রা শুরু। একই ধরনের অভিজ্ঞতার সাধ নিতে যে আমরা বের হইনি! সেই একই ধরনের পথে আর একবার এর মত বিরতি দিয়েই পওছেছিলাম ভৈরব। ভৈরব সেতুর মাঝখানে দাড়িয়ে দুজন আরও একবার বিষপানের বিরতি নিয়ে নিলাম।

নরসিংদী শহরে ঢুকেই আমার এক বন্ধু রকিবের কথা মনে পড়েছিল একবার, নরসিংদী তার বাড়ি। এবার রাস্তা ছিল বেশ বড়। কিন্তু গাড়িঘোড়ার ভিড়ের কারনে ৮০ এর বেশি স্পীড তোলা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। কাইয়ুম বলল এবার একটু দাড়াই। হাইওয়ের পাশে একটি হোটেল দেখে যখন বিরতি নিচ্ছি, আমদের গুগল হিসাবে তখনও ১৬৫ কিলো যাওয়া বাকি।

হোটেলে বসা দুটি মেয়ে আমাদের কিম্ভুতকিমাকার চেহারা দেখে কি মন্তব্য করছিল টা না জেনেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। সামনে পড়ল সরাইল মোড়, ব্রাম্ভনবারিয়া। সরাইল মোড়ে বসে স্থানীয়দের দুর্বোধ্য ভাষা শুনতে শুনতে যখন সামনের সুন্দর পথ দেখছিলাম তখন জানতামও না যে মোড়ের অন্য পথটি এত ভয়ংকর। অবশ্য সে আরও পরের কাহিনী। বি-বাড়িয়া থেকে সিলেট গামী পথটি বেশ সুন্দর।

দুপাশে পাকা ধান-গমের ছন শুকাতে দেয়া আর বাতাসে মিষ্টি গ্রাম্য গন্ধ। আকাবাকা পথ, দুপাশে যতদুর চোখ যায় শস্যখেত, এক অপূর্ব অনুভূতি। এই পথে বেশ একটা বাস ছিল না। বেশির ভাগই ছিল মাইক্রো আর প্রেমিও-করলা। হাইওয়ে ইন নামে একটা বিশাল রেস্তরায় থামার আগে রাস্তার ধারের স্পীড বোর্ডে লিখা ছিল “সিলেট ১১৯ কে এম”।

আমরা তখন বেশ রকমের ক্লান্ত। হাইওয়ে ইন এ বসে সেই ক্লান্ত শরীরেও ভাল লাগছিল। পুরো অভিযানে প্রথম বার এর মত ম্যাঙ্গ জুস খেলাম ঠান্ডা। বাইরে তখন অনেক রোদ। আমাদের সাথে একটা PREMIO ছিল বেশ কিছুদুর পর্যন্ত।

এবার একটা ALLION ও এসে যোগ হল। কেমন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলো, কে কার আগে যেতে পারে। আমি যেন নতুন করে প্রান খুজে পেলাম। মধুপুর এর ছোট টিলা গুল যখন পার হচ্ছিলাম তখন সেখানে চা বাগান দেখার সময় ছিল না। আমাকে যে ঐ ALLION_PREMIO এর আগে যেতে হবে।

পরবর্তী ১ ঘণ্টার জন্য সব ভুলে গিয়েছিলাম। ভুলেছিলাম প্রখর রোদ, ভুলেছিলাম ক্লান্তি, হয়ত ভুলে গিয়েছিলাম যে পিছনে কাইয়ুম বসে আছে। হটাত যখন কাইয়ুম বলেছিল “এবার থাম অনেক হইসে”, তখন গাড়ি দুটি আমাদের পার করে গেলো। একটা বাইপাস এর মত জায়গাতে তখন আমরা। প্রায় ১২ টা বাজে।

এক দোকানের চা টাও পানসে মনে হচ্ছিল। কিছুদুর যেতেই আর মাত্র ৫০ কিলো বাকি। যা আমাদের কাছে কোনমতেই মাত্র ছিলনা। ভিন্ন ধরনের কিছু ব্রীজ আমাদের ধারনা দিচ্ছিল যে, হ্যাঁ সাম্নেই সিলেট। যখন আর ৩০ কিলো বাকি একজায়গাতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি, আমার ভাই লাবিব কল দিয়েছিল AUSTRALIA থেকে।

তাকে বললাম নতুন পথের অভিজ্ঞতা। পওছালাম আবুল কালাম আজাদ চত্তর। “সেনানিবাস টা কোনদিকে মামা” জিজ্ঞেস করতেই এক বিচিত্র কন্ঠে কি যেন শুনলাম। লোকটাকে যে মামা বলেছিলাম সেটাই বুঝেছিল কিনা আমার সন্দেহ আছে। যাই হোক শেষে এক জন কে পেলাম যে সিলেটি নয় আর শুরু হল আমাদের ২য় পর্ব- সেনানিবাস খোঁজ পর্ব।

আলবৎ বলেছি; এটা ২য় পর্বই ছিল। কেননা যাকেই জিজ্ঞেস করি বলে সামনে যান। একজনকে জিজ্ঞেস করতেই বলল “আর ২ কিলো যান সেনানিবাস পেয়ে যাবেন”। কিন্তু সিলেট এর ২ কিলো যে আমার বাইকের মিটারে ১০ কিলো পার করে দেবে কে জানত! অবশেষে আমার মুখ ভরা দাড়ি দেখে সিলেট অফিসার মেসের নিচে দাঁড়ানো সৈনিকটা যখনও ঠিক করতে পারেনি যে আমাকে স্যালুট দিবে কিনা আমরা ঢুকে পড়েছি বন্ধু সামিনের রুমে। সামিনকে শুধু হ্যালো বলেই কিছুক্ষণ সিলেট-সিলেটি ভাষা-আর একরকম দুর্গম সেনানিবাসের কত গুস্টি উদ্ধার করেছিলাম ঠিক নেই।

কিন্তু মোবাইল এর ফেসবুকে সিলেট পওছানোর খবর আপডেট দিয়ে যখন নাচানাচি শুরু করেছিলাম, যখন সামিন বলছিল “তাইলে সিলেট পওছেই গেলি” তখন কাইয়ু্ম আর আমি ক্লান্ত শরীরে যে দুর্বল হাই ফাইভ টা দিয়েছিলাম তার গুরুত্ব, তার ভার যে ছিল অনেক। আমরা সিলেটে...এখনও বেঁচেই আছি...। । বহাল তবিয়তে............। ।

। প্রায় ৩০০ কিলো পাড়ি দিয়ে.........। । ( চলবে )
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.