আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোল্লা হলো তীর্থস্থান, অশেষ উপকারী

গত উইকএন্ডে খুব ঘুরে বেড়িয়েছি, তার আগের সপ্তাহে বেশ কিছু কাজ জমিয়ে রেখেছিলাম। ফলে সোমবারে এসে দশ ঘণ্টা খেটে মরতে হলো। এই তিনদিন সংবাদপত্র দেখা হয় নি একেবারেই। আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে আধো জাগরণে ফেসবুকে ঢুকেই একটা ধাক্কা খেলাম। খবরে প্রকাশ, শাহজালাল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল পদত্যাগ করেছেন।


খবরের বিস্তারিত পড়তে গিয়ে নিজের অজান্তেই হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে, খুব বেশিদিন হয় নি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ওপর স্যারের লেখা একটা চমৎকার আর্টিকেল পড়ছিলাম, ভেবেছিলাম দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা মৌলিক পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। অচিরেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবার পর ছাত্র ছাত্রীদেরকে আর জায়গায় জায়গায় দৌড়াতে হবে না। মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হলেও খুব দ্রুত এটার জনপ্রিয়তা বাড়বে, তথাকথিত ‘এলিট’ প্রতিষ্ঠানগুলোও এক কাতারে এসে সামিল হয়ে যাবে শিগগির। অসংখ্যবার পড়া দীপু নাম্বার টু এর একটি দৃশ্যও চকিতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। পিটি স্যারকে শিক্ষা দেবার জন্য ক্লাসের সবকটি ছেলে মিলিয়ে মিশিয়ে পা ফেলে দৌড়ুচ্ছে, দুষ্টু তারিক এগিয়ে থাকলেও অল্প পরেই নিজের ডানে বামে তাকিয়ে সাবধানে এসে দলের সাথে মিশে যায়।


সেই বিপুল সম্ভাবনা শুরুতেই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে কে ভাবতে পেরেছিলো? নিজের আকাশস্পর্শী ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে স্বদেশে একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে শূন্য থেকে গড়ে তোলার ভালোই পুরষ্কার পেলেন বলতে হবে। জাতি হিসেবে আমরা নির্বোধ, এটা প্রমাণ করা মনে হয় খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো কিছু মানুষের।
যারা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধিতা করেছেন, তাদের যুক্তি (যদি সে জিনিসের আদৌ অস্তিত্ব থাকে) শুনতে পেলাম না। আমার সন্দেহবাদী মন কিছু কিছু অনুমান করতে চাইছে
১। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা চালু হলে ফর্ম বিক্রির সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যার অনুপাতে কমে যাবে।


২। ঘুষ নিয়ে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অযোগ্য শিক্ষার্থীকে ধুনফুন কোটায় বা বিনা কোটায় অধ্যয়নের সুযোগ করে দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে
৩। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ওপরে তাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ হারাবেন
৪। পরীক্ষার উছিলায় প্রতিবছর জমজমাট হোটেল বা পর্যটন ব্যবসায় বিপর্যয় ঘটবে। এতে আখেরে দলীয় চাঁদা সংগ্রহে টান পড়তে পারে
৫।

জাফর ইকবালকে একটা শিক্ষা দেয়া যাবে। বুঝিয়ে দেয়া যাবে, কাদের কথায় দেশ চলে।
মুশকিল হচ্ছে, একটি সম্ভাবনাও প্রকাশ্যে বলার যোগ্য নয়, পাবলিক নয়তো সাংবাদিকেরা আগাপাছতলা ধুয়ে দেবে। কাজেই আন্দোলন নামের উদ্ভট এক আচ্ছাদনের তলায় সুশীল কুশীল নির্বিশেষে জড়ো হলো, মূল অভিপ্রায় যাতে প্রকাশ না হয়ে যায় সেজন্য ৫০ শতাংশ সিলেটী কোটার দাবী ঢুকিয়ে দেয়া হলো বলে আমার ধারণা।
আমাদের স্বনামধন্য অর্থমন্ত্রীর ব্যাপারটা বুঝি, কিন্তু মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কেমন করে এর মধ্যে যুক্ত হলেন জানি না।

বেশি জানার চেষ্টা করাও ঠিক না, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে। আবারও অনুমান করি, বৃহত্তর জামাতের দুই শাখা বিম্পি জামাত এবং উপশাখা ছাত্রশিবির ডঃ ইকবালকে আওয়ামী দালাল বলে অপপ্রচার চালালেও তিনি যে আসলে কারো অন্ধ অনুগত নন, সেটা ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষনেতাদের খুব ভালো জানা থাকার কথা। সুযোগ পেয়ে তাই তারা দুই এক হাত নিলে অবাক হবার কিছু নেই। তবে বিম্পি, আম্লীগ, জামাত, তেঁতুলদল, বাম, চিনাবামের এই বিরল ঐক্য মনে কেবল বিস্ময়ই জাগায় না, ভীতিরও উদ্রেক করে।
খারাপ মানুষদের একটা ব্যাপার খুব লক্ষণীয়।

তাদের নিজেদের কোন নৈতিকতা বা মেরুদণ্ড না থাকলেও একজন শিক্ষিত, স্বাধীনচেতা মানুষ কিসে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, এটা তারা খুব ভালো বোঝে। ভাংচুর, হত্যা, গুম ইত্যাদি হুমকিতে কোনভাবেই জাফর ইকবালকে অতীতে টলানো যায় নি, কিন্তু তাঁর কাজে বাধা দিলে তিনি একরোখা হয়ে উঠবেন এটা খুব সহজেই তারা অনুমান করেছে। অপমানিত হয়ে পদত্যাগ করতে পারেন, এই সম্ভাবনাও নিশ্চয়ই তাদের মাথায় ছিলো।
যা হোক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ জনগণের কথায় চলে, এটা অন্ততঃ একটা সুখবর। সিলেট অঞ্চলের জনগণ যা চেয়েছিলেন, তা তারা পেয়েছেন।

উল্টো গাধায় চড়ে পেছন দিকে যেতে মজা পাবার লোক দুনিয়ার সবজায়গাতেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু আমার সোনার দেশে সে সংখ্যাটা এতো বেশি কেন, সেই প্রশ্নটা ইদানীং আমাকে জ্বালায় না।
প্রিয় স্যার, অফুরন্ত প্রাণশক্তি নিয়েও আপনি পারলেন না, কাদা এতোই বেশি, তার মধ্যে আবার আছে চোরা কাদা, আপনি যে এতোদূর এসেছেন এটাই এক বিস্ময়। এত কিছুর পরও আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখেন, ম্যাডাম কাজ করতে চান এই দেশেরই নির্যাতিত নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে। আপনারা কি ধাতুতে গড়া?

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.