নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি না করার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি সরকারের সব মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো অপর এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ওই মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। একই প্রতিষ্ঠানের কোনো গাড়ি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহার করা যাবে না।
এ ছাড়া গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপিদের নাম চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কেউ ঋণখেলাপি কি না, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা ওই তালিকা থেকে তা পরীক্ষা করে দেখবেন। এ ছাড়া কোনো ব্যাংক নিজ উদ্যোগেও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে ঋণখেলাপিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারবে।
দুই রকম রায় নিয়ে বিব্রত ইসি: আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের মেয়ররা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু পৌর মেয়ররা প্রার্থী হতে পারবেন। আবার উপজেলা চেয়ারম্যানরা পদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন কি না, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
একই ধরনের মামলায় দুই ধরনের রায়ের কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদ লাভজনক কি অলাভজনক, তা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত জেলা পরিষদের প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি পারবেন না—সে সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কোনো নির্দেশনা দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। গতকাল বিকেলে এ নিয়ে বৈঠক হলেও কমিশন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এ বিষয়ে কমিশন আজ বৃহস্পতিবার আবার বৈঠকে বসবে।
তবে গতকালের বৈঠকে সাংসদ ও পৌরসভার মেয়রদের পদকে অলাভজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে কারণে তাঁরা পদে থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। অন্যদিকে সিটি মেয়রদের পদকে লাভজনক বলা হয়েছে। অর্থাৎ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে তাঁদের পদ ছাড়তে হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, সংজ্ঞা অনুযায়ী কাদের পদ লাভজনক, আর কাদের পদ লাভজনক নয়, তা আজকের বৈঠকে নির্ধারিত হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন।
গতকালের বৈঠকে কমিশন সচিবালয় থেকে উপস্থাপিত নথিতে বলা হয়েছে, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকার দায়ের করা এক মামলার রায়ে হাইকোর্ট ২০০৯ সালে মেয়রদের পদকে লাভজনক বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাংসদ শফিকুল আজম খানের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর হাইকোর্টের এক রায়ে পৌর মেয়রদের পদকে অলাভজনক বলা হয়েছে। এই দুটি রায়ের ভিত্তিতে কমিশনের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, পৌর মেয়ররা পদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন। আর সিটি মেয়ররা পদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে একই ধরনের মামলায় হাইকোর্ট দুই ধরনের রায় দেওয়ায় কমিশনের বৈঠকে হতাশা প্রকাশ করা হয়।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা—দুটিই স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে দুই রকম রায় বিভ্রান্তিকর। আশা করি, আদালত বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই বিভ্রান্তি দূর করবেন। ’
কমিশনের বৈঠকে কোনো কার্যালয় ও নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় সাংসদদের পদকেও অলাভজনক বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের নির্বাহী ক্ষমতা বা কার্যালয় নেই।
রাষ্ট্রের কোনো নির্বাহী আদেশে তাঁদের সাংসদ পদ থেকে অপসারণও করা যায় না। তাই ওই পদটি লাভজনক নয়।
কমিশন সচিবালয়ের আইন শাখার ব্যাখ্যায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের প্রশাসক ও তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির চেয়ারম্যানের পদকে লাভজনক উল্লেখ করা হয়েছে। তাই তাঁরা পদে থেকে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে পদত্যাগ করে তাঁরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরগুনা-২ আসনের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী শওকত হাচানুর রহমান উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের এসব পদ সম্পর্কে কমিশনের আজকের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।
আজ আইনশৃঙ্খলা বৈঠক: দশম সংসদ নিবাচনের আইনশৃঙ্খলা বৈঠক আজ বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল অফিসার, বিজিবির মহাপরিচালকসহ সরকারের অন্যান্য বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানেরা উপস্থিত থাকবেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।