আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোর ফেরিওয়ালা

আপনার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রাজশাহী, কলকাতা ও ঢাকায়। আপনার ছেলেবেলা সম্পর্কে জানতে চাই।

আমাদের গ্রামের বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুর। আমার শৈশবের প্রথম দিকটা কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল।

বাবা বদলি হয়ে গেলেন রাজশাহীতে। আমরা চলে গেলাম রাজশাহী। সেখানে আমাদের বেশ কয়েক বছর কাটে। ১৯৪৬ সালের শেষে বাবার বদলি হলো কলকাতায়। আমরা পরিবারসহ কলকাতায় গেলাম।

ওই বছর আমি সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উঠি। কিন্তু দেশভাগের কারণে ওই বছর জুলাই মাসে কলকাতা থেকে চলে আসি বিক্রমপুরে। ওখান থেকে ময়মনসিংহে গিয়ে ক্লাস এইটে পরীক্ষা দিয়ে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসি। তারপর সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে ভর্তি হয়ে নবম ও দশম শ্রেণী পড়ে ম্যাট্রিক পাস করি ১৯৫০ সালে। ওই সময় সেন্ট গ্রেগরি স্কুলটা কলেজ হয়ে গেল, আমি সেখানেই ভর্তি হলাম।

কলেজটা পরে নটর ডেম হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি।

ছেলেবেলার কোনো স্মৃতি মনে পড়ে।

ছেলেবেলায় আমি যেখানেই থেকেছি সেখানে নদী পেয়েছি। নদীর সঙ্গে আমার শৈশবের সম্পর্কটা মধুর।

আমরা যখন গ্রামের বাড়ি থাকতাম, আমাদের বাড়ি থেকে বেরোলেই ইছামতি নদী। রাজশাহী থাকতে আমাদের বাড়ির পাশে ছিল পদ্মা নদী। কলকাতায় আমরা খিদিরপুরে ডকের কাছে থাকতাম, পাশেই ছিল গঙ্গা নদী। ময়মনসিংহ থাকতে আমাদের বাড়ির পাশে ছিল পুরনো ব্রহ্মপুত্র। আবার যখন ঢাকায় এলাম তখন বুড়িগঙ্গা।

আমাদের স্কুল, কলেজ ছিল বুড়িগঙ্গার ধারে। শৈশব-কৈশোরে যেখানেই থেকেছি সেখানে একটি নদী পেয়েছি। এটা আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল। বাংলাদেশের যে বৈশিষ্ট্য সেটা নদীর বৈশিষ্ট্য। রাজশাহীর সময়টা বেশ ভালো কেটেছে।

সেখানে অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ওদের ছেড়ে কলকাতায় যেতে খুব খারাপ লেগেছিল। আমার বন্ধুদের অনেকই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি। কলকাতায় আমরা বেশ গুছিয়ে বসেছিলাম।

আব্বা নতুন বাসা ভাড়া করেছিলেন। আত্দীয়স্বজনও কিছু ছিল। '৪৬-এর দাঙ্গার পর সেখানে থাকা হলো না। মানুষ মনে করল দেশ স্বাধীন হচ্ছে। এক ধরনের উন্মাদনা ছিল।

দেশভাগের পর ঢাকায় এসে খুব অসুবিধার মধ্যে পড়লাম। কলকাতা ছিল বড় শহর। সেখানে বাস, ট্রাম, কলেজ স্ট্রিট, গড়ের মাঠ এগুলো আমরা দেখে এসেছি কিন্তু ঢাকায় এসে মফস্বল শহরে বাসা ভাড়া পাওয়া কঠিন ছিল। আমরা এক আত্দীয়ের বাড়িতে উঠি। ভাড়া আব্বা দিতেন।

বিদ্যুৎ খুব অল্প। কলের পানি নেই। যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত। আমরা বড় দুই ভাই সেন্ট গ্রেগরিতে ভর্তি হই। ওই সময় আজিমপুর কলোনি কেবল তৈরি হচ্ছে।

ওই কলোনির প্রথম বাসিন্দাদের মধ্যে আমরাও ছিলাম।

ভাষা আন্দোলনে তো আপনার সম্পৃক্ততা ছিল। ওই সময়ের কথা যদি বলেন।

১৯৫২ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন আমাদের কাছে খুব পরিচিত।

আমাদের বাসা ছিল বেগমবাজারে। আমরা রমনা দিয়েই যাতায়াত করতাম। একুশের আন্দোলন যে হবে তা আমরা টের পাচ্ছিলাম। উর্দু চলে আসছে সর্বত্র। টাকাতে, স্টামে, স্কুল-কলেজের পরীক্ষায়, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উর্দুর প্রাবাল্য।

আসলে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এরপর ধারাবাকিভাবে নানা কর্মসূচি, বিক্ষোভ হয়েছে। '৫২-তে এসে এটা প্রবল আকার ধারণ করে। একুশে ফেব্রুয়ারির আগে যে মিছিল হয়েছিল তাতে আমি অংশ নিয়েছিলাম। তখন আমি কলেজে পড়ি।

আমরা আজিমপুরে থাকি। আজিমপুরে বসবাস করা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। সেখানে প্রায় পাঁচশ পরিবার থাকে এবং সবাই সরকারি কর্মচারী। আমরা নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছি। ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরের সামনে আমতলায় যে জমায়েত হয়েছিল সেখানেও আমি গিয়েছি। পুলিশ ছাত্রদের ওপর কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ল, যে অভিজ্ঞতা আগে কখনো আমাদের ছিল না। পুকুরের পানিতে রুমাল ভিজিয়ে চোখ মুছে আমতলার পেছনের রেললাইন দিয়ে আমরা বাসায় চলে যাই। ওইদিন গুলিতে কয়েকজন ভাষাসংগ্রামী শহীদ হয়। আমরা বাড়ি থেকে মেডিকেলে আসি, কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেয়নি।

আমাদের এক দুঃসাহসী ভদ্রলোক বরকতের একটি ছবি তোলে। সেই ছবিটা আজিমপুর স্টুডিও থেকে প্রিন্ট করেছিল, যা পরদিন আমরা দেখেছিলাম। আজিমপুরে আমাদের কলোনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নূরউদ্দিন ভাই, মাহমুদ ভাই ছিলেন, তারা এমকম-এ পড়তেন। তাদের সঙ্গে ২২ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় কি ছাপা হয়েছে আমরা তা দেখতে যাই। ওই সময় আজাদ, সংবাদ, মর্নিং নিউজ, পাকিস্তান অবজারভারে ভাষা আন্দোলনের খবর পড়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি।

যদিও আজাদের সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন পরের দিন পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি পরের দিন প্রথম শহীদ মিনারের যে স্তম্ভ হয় সেটা উদ্বোধন করেছিলেন। আমরা পত্রিকাগুলো পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। আমরা মিছিল নিয়ে সদরঘাটে গিয়েছিলাম। দেখি সাধারণ মানুষ মর্নিং নিউজ অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে।

এটা অভূতপূর্ব ঘটনা। ঢাকা শহরে এ রকম কখনো ঘটেনি। একুশে ফেব্রুয়ারির আগে পুরান ঢাকার লোকেরা এ আন্দোলনে যোগ দেয়নি। একুশের আন্দোলনটাই ছিল রমনা ও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। কিন্তু পুলিশের গুলি চালাবার পরে পুরো আবহাওয়াটা বদলে গেল।

আমরা দেখলাম পুরান ঢাকার লোকেরাও এ আন্দোলনে আসছে। তারা নানাভাবে ছাত্রদের সাহায্য করছে। পুরান ঢাকার লোকেরা উর্দু মিশ্রিত বাংলা বলত। একুশের ঘটনায় নবাববাড়ি মুসলিম লীগের যে ঘাঁটি সেই ব্যবধানটা ভেঙে গেল। এটা মধ্যবিত্তেরই আন্দোলন।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করে আপনি জয়ী হয়েছিলেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি নতুন জীবন পেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটা ছিল একেবারে খোলামেলা। আমরা হেঁটে হেঁটে ক্লাস করতে যেতাম। এত সুন্দর গাছপালা। গাড়িঘোড়ার ভিড় নেই।

আমাদের জীবনটা খুব আনন্দের ছিল। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। আমরা আজিমপুর কলোনিতে ছাত্রসঙ্গ এবং একটি পাঠাগার গড়ে তুলি। মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষাটা ছিল একেবারে লেখাপড়াকেন্দ্রিক। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে নিয়মিত নির্বাচন হতো।

আমি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ওই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গেলাম। নিয়ম ছিল, ছাত্র সংসদের সদস্য হবে ফার্স্ট ইয়ার থেকে। হল সংসদ নির্বাচনে রাজনীতি চলে এলো। এর আগে হল নির্বাচন হতো পারস্পরিক চেনাজানা, জেলার আনুগত্যের ভিত্তিতে। একদিকে মুসলিম লীগের পক্ষের ছাত্র এবং তার বিরুদ্ধের ছাত্র।

ওই সময় সলিমুল্লাহ হলে গণতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট গড়ে ওঠে। ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন তখন গঠিত হয়েছে মাত্র। আমরা বলে থাকি, যুক্তফ্রন্টের ধারণাটা এখান থেকে তৈরি হয়। আমি এই ধারার সঙ্গে ছিলাম। অন্যদিকে নির্বাচনে আমরা বিপুলভোটে জিতলাম।

সভাপতি হয়েছিলেন শামছুল হক [বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভায় পাটমন্ত্রী]। ওই সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ মানে মাইক্রোফোনে চেঁচামেচি, লিফলেট ছাপানো, সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে পরিচিত হওয়া ইত্যাদি। মেয়েদের সংখ্যা কম ছিল, তাদের কোনো হল ছিল না। মেয়েরা বর্তমান প্রেসক্লাবের পাশে অবস্থিত চামারি হাউসে থাকত। তারা বিভিন্ন হলের সঙ্গে অনাবাসিক শিক্ষার্থী ছিল।

তখন একটা রাজনৈতিক মেরুকরণ হলো। আন্দোলন এগিয়ে যাচ্ছে। আবার '৫৪-এর নির্বাচন হবে এ রকম সম্ভাবনা। সলিমুল্লাহ হলে আমরা চমৎকার একটি সাংস্কৃৃতিক জীবন পেয়েছিলাম। হলে তখন বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হতো সেখানে অংশগ্রহণ করতাম।

হলে বার্ষিকী বের হতো সেখানে লিখতাম। একবার বার্ষিক পত্রিকার আমি যৌথভাবে সম্পাদনা করি। রেডিও অফিস ছিল নাজিমউদ্দিন রোডে। সেটি ছিল আমাদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। আমি একবার ভয়েস পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছিলাম।

তবে এককভাবে কোনো অনুষ্ঠানে আমার অংশ নেওয়া হয়নি। ছাত্রদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। সকালবেলা ক্লাস করে বাসায় চলে যেতাম। দুপুরে খেয়ে বিকালে চলে আসতাম লাইব্রেরিতে। এটা আমার জন্য ছিল সৌভাগ্যের ব্যাপার।

এখানে অনেক পুরনো পত্রিকা ছিল সেগুলো পড়তাম। বিভিন্ন বই পড়ে, মধুর দোকানে চা খেয়ে রাত ৯টায় বাসায় ফিরতাম। সারা দিনটা বিশ্ববিদ্যালয়েই কাটত।

আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন কখন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর দ্রুত অনার্স পাস করলাম, এমএ পাস করলাম। চাকরি তখন খুব খোলা।

বিশেষ করে শিক্ষকতায়। ১৯৫৬ সালে আমি এমএ পরীক্ষা দিয়েই মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে চাকরি পেয়ে গেলাম। সপ্তাহে ছয় দিন সেখানে থাকতাম। সপ্তাহ শেষে চলে আসতাম বাসায়। ওখানে খুব ভালোই কাটত।

তারপর কিছুদিন জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা করি। আমাদের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন ছিল। চাকরির পদের সংখ্যা খুব সীমিত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক যদি পদত্যাগ করতেন, অবসর নিতেন কিংবা কোনো কারণে পরলোক গমন করতেন তখন আমরা সুযোগ পেতাম। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলাম ১৯৫৭ সালে।

তখন শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই কিছুদিন চাকরি করে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে চলে যেত। এর ফলে বিভাগে পদশূন্য হতো। সিভিল সার্ভিস অনেক আকর্ষণীয় ছিল। ইংরেজি বিভাগে প্রথমে ছিলেন প্রভাষক মুজিবুল হক। তিনি চলে গেলেন সিভিল সার্ভিসে।

তারপর এলেন কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তিনি আমাদের দুই বছরের সিনিয়র। তিনি মুজিবুল হকের জায়গায় লেকচারার হলেন। কয়েক মাস পর তিনিও সিভিল সার্ভিসে চলে যান। তখন তার জায়গায় আমি ঢুকতে পারলাম।

শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিলেন কেন?

দুটো কারণে এই চাকরিটা আমি পছন্দ করেছিলাম। আমার বাবা সব বাবার মতো চাইতেন, আমি সিভিল সার্ভিসে যাব। আমাদের সময় ওটাই নিয়ম ছিল। আমার শিক্ষকতার মূল কারণ ছিল এ চাকরির কোনো বদলি নেই। দ্বিতীয় আকর্ষণ ছিল গ্রন্থাগারটা।

তখন ঢাকার সব পাড়ায় পাড়ায় গ্রন্থাগার ছিল। আর ছেলেবেলা থেকে পড়াশোনা আমার ভালো লাগে। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেই শিক্ষকতা জীবন খুব উপভোগ করছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও সবাই ছিল চেনাজানা। আমার প্রথম বড় বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয় যখন ১৯৫৯ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি পেয়ে আমি ইংল্যান্ড গেলাম।

দশ মাসের বৃত্তি নিয়ে গেলাম ইংল্যান্ডের লিডস শহরে। এই প্রথম বাড়ি থেকে প্রকৃত অর্থে বিচ্ছিন্ন হলাম। ওখানে একটা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করে দেশে ফিরে আসি। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার বিচ্ছিন্নতা তৈরি হলো ১৯৬৫ সালে। কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে গেলাম ইংল্যান্ডের লেস্টারে।

সেবার দুই বছর আট মাস ছিলাম। ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি জীবন শুরু করে ২০০২ সালে অবসর নিলাম। এই দীর্ঘ সময় আমি ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। এ সময়টা খুব উপভোগ্য ছিল আমার জন্য। অবসরের পর মঞ্জুরি কমিশন অধ্যাপকসিপ তৈরি হলো সেটাতে আমি চার বছর থাকলাম।

তারপর কিছুদিন অনাররি অধ্যাপক থাকলাম। ২০০৮ সাল থেকে এমিরিটাস অধ্যাপক হয়েছি। সুতরাং আমার কর্ম ও শিক্ষাজীবনে একটা ধারাবাহিকতা ছিল। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা কম ছিল, শিক্ষকও কম ছিল। আমরা শিক্ষকরা অন্য বিভাগের শিক্ষকদের সম্পর্কেও জানতাম।

হল জীবনটা বেশ প্রাণবন্ত ছিল। হলে নাটক হতো, ডিবেট হতো সেখানে শিক্ষকরা যেতেন। বা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিচারক হয়ে যেতেন। ফলে শিক্ষকদের সঙ্গে আদান-প্রদানটা কেবল ক্লাসেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য সভা, আলোচনা অনুষ্ঠান হতো।

শিক্ষকদের জন্য আজকের মতো এত সুযোগ ছিল না। কনসালটেন্সি, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, বিদেশ যাওয়া তখন খুব কম ছিল। শিক্ষকরা পুরো সময়টা ক্যাম্পাসে থাকতেন। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগটা খুব প্রত্যক্ষ ছিল। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ভালো ছিল।

ছাত্ররা শিক্ষকদের সঙ্গে মিশত। আবার ছাত্র-শিক্ষদের শ্রদ্ধাও করত। তাদের জ্ঞানানুশীলন ছিল। তখন সিগারেট খাওয়াটা একটা সাধারণ অভ্যাস ছিল। দুরন্ত ছেলেদেরও দেখেছি, তারা শিক্ষকদের দেখলে সিগারেট লুকিয়ে ফেলত এবং সংকোচবোধ করত।

বলা যেতে পারে একটা সামন্ততান্ত্রিক ছিল। সবার মধ্যে বেশ অন্তরঙ্গতা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমাগত বড় হতে থাকল এবং এসব নৈর্বত্তিক হতে থাকল। একটি জিনিস মনে পড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা সামাজিক সাম্য ছিল। ধরা যাক, স্কুলে যখন পড়ি, তখন পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের ছেলে আনোয়ারুল আমিন আমাদের সঙ্গে পড়ত।

সেও পাবলিক বাসে যাতায়াত করত। গাড়ি নিয়ে স্কুলে যাবে এ ধারণাই ছিল না। অনেক ছাত্রছাত্রীদের হয়তো গাড়ি ছিল, তারপরও তারা গাড়ি বাইরে রেখে নেমে হেঁটে আসত। শিক্ষকদের মধ্যে মজহারুল হক সাহেবের পুরনো একটি ফোর্ড গাড়ি ছিল। আর কারও কোনো গাড়ি ছিল না।

আইয়ুব খান আসার পর আমাদের সামাজিক ছবিটা বদলে গেল। নানা রকম অর্থ উপার্জনের সুযোগ আইয়ুব খান তৈরি করে দিল। ওই সময় শিক্ষকরা যারা বিদেশ যেতেন তারা সঙ্গে করে একটি গাড়ি নিয়ে আসতেন। গাড়ি আনতে কোনো ট্যাঙ্ দিতে হতো না। শিক্ষকরা গাড়ি নিয়ে আসতেন ঠিকই, কিন্তু তারা কিছুদিন ব্যবহার করে বেশি দামে গাড়ি বিক্রি করে দিতেন।

আমাদের দেশে পুঁজিবাদের বিকাশটা কখন হলো?

পিএইচডি শেষে ১৯৬৮ সালে দেশে ফিরে দেখি একটা বিকৃত পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, বিলাসিতা বাড়ছে। মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বেড়ে গেছে। মোনায়েম খানের অত্যন্ত অকল্পনীয় বর্বরতার কাহিনী শুনলাম। তারপর ধীরে ধীরে ঘটনাগুলো ১৯৬৯ এর অভ্যুত্থানের দিকে গেল।

অভ্যত্থানের পর পুরো সমাজের চেহারা বদলে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারা বদলে গেল। মোনায়েম খানের গুণ্ডা বাহিনীর কেউ খুন হলো, কেউ গুম হলো, কেউ উধাও হয়ে গেল। তার সময় কার্জন হলের সামনে দিয়ে মেয়েরা যেতে পারত না। বিশ্ববিদ্যালয়টা তারা অনিরাপদ করে তুলল।

আমরা দেখলাম যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া একেবারে বদলে গেছে। ঊনসত্তরের পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল সবচেয়ে নিরাপদ। কিন্তু ২৫ মার্চ রাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় সবচেয়ে অনিরাপদ হয়ে গেল। ওই সময় ভয়ঙ্কর রকম একটা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এলাকায় পরিণত হলো ক্যাম্পাস।

মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বড় বিপদের সময়।

২৩ মার্চ বাংলা একাডেমিতে ভবিষ্যতের বাংলা সম্পর্কে সভা করি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে সভা করি, মিছিলে যাই ইত্যাদি। আমাদের একটা সংগঠন ছিল সংগ্রামী লেখক শিবির। এর পক্ষ থেকে আমরা সভা-সমিতি করতাম। ২৫ মার্চ রাত ৮টার দিকে ইকবাল হলের ছেলেরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এসে বলল, পাকিস্তান আর্মি চলে এসেছে, মনে হয় ভয়ঙ্কর কোনো ঘটনা ঘটবে। আমরা তখন বাসায় ফিরলাম।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না। আমি তখন জগন্নাথ হলের উল্টো দিকে কোয়ার্টারে থাকি। রাতে জগন্নাথ হলের ছাত্রদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, সলিমুল্লাহ হলের ছাত্রদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে এসব কাহিনী আসতে থাকল। ছেলেরা কেউ কেউ আমাদের বাসায় এসে আশ্রয় নিল।

২৬ মার্চ সকালে কারফিউ দিল। পরে ২৭ তারিখ কারফিউ ভাঙলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমরা নানা জায়গায় থেকেছি। এ জন্য বেঁচে গেছি। আমি পুরান ঢাকার আমাদের একটি বাসার ঠিকানা দিয়েছিলাম।

সেখানে কেউ গেলে আমি খবর পাব। আর্মিরা আমার ঠিকানা জানত না। আর্মিদের হত্যার তালিকায় আমারও নাম ছিল। আমার এক আত্দীয় ছিলেন পুলিশের স্পেশাল বেঞ্চে। তিনি আমাকে সতর্ক করেছিলেন।

টিক্কা খান যাওয়ার আগে আমাদের ছয়জন শিক্ষকের নামে চিঠি দিয়ে গেলেন। সেখানেও আমাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। তখন বুঝতে পারি, দেশ স্বাধীন না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আসা হবে না। ৭ ডিসেম্বর ওয়ারিতে এসে আমাদের এক আত্দীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

১৪ ডিসেম্বর এখানে কি কাণ্ড ঘটেছে সেটা আমি জানিই না।

কিন্তু ওইদিন এ জাতির বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে আলবদররা ধরে নিয়ে হত্যা করে। ওই সময় কয়েকদিন চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছিল। তারপর ১৬ ডিসেম্বর সারেন্ডার হলো। আমরা বিকালে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় গেলাম।

১৭ তারিখ আমার এক সহকর্মী বললেন, আপনি বেঁচে আছেন এখনো! স্বাধীনতা যখন পেলাম তখন একটা মিশ্র অভিজ্ঞতা হলো। আমার অনেক পরিচিত চেনাজানা মানুষ মারা গেছেন। বিজয়ের পর মনে হলো অনেকটা যেন রোগমুক্তি। যেন বিরাট অসুখ থেকে আমরা সেরে উঠলাম।

স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে বা সমাজে কোন কোন ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন এসেছে বলে আপনি মনে করেন।

স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলল। সদ্য স্বাধীন দেশ। আমাদের অনেক আকাঙ্ক্ষা। আমাদের বিভাগের কথা যদি ধরি, ড. খান সারওয়ার মুর্শিদ ছিলেন, তিনি চলে গেলেন রাজশাহীতে ভিসি হয়ে। আমি রিডার থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান হয়ে গেলাম।

যেটা আমার ধারণার মধ্যে ছিল না। এ জাগতিক উন্নতিটা আমাদের হলো। আমাদের পদ খুলে যাচ্ছে, আমরা প্রফেসর হচ্ছি, আমাদের বাসাগুলো বড় হচ্ছে। শহীদ মিনারের উল্টো দিকে যে বাসা আমি পেলাম তা কখনো আমার পাওয়ার কথা নয়। এগুলো ছিল সবচেয়ে বড় বাসা, যা তৈরি হয়েছিল বিদেশি শিক্ষকদের জন্য।

কাজেই ওই বাসা একটা পেয়ে গেলাম। এগুলো আমাদের প্রাপ্তি। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা বের করলাম। চারদিকে বিশৃঙ্খলা। নানাজন দখল করে নিচ্ছে।

রাজনৈতিক জীবনে একদলীয় শাসনের দিকে চলে যাচ্ছিল। যারা বিরোধী দল হিসেবে কাজ করবে যেমন- ন্যাপ মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী দল ছিল বিরাট সংগঠন। তারা সবাই মিলে একটি বামপন্থি মোর্চা করতে পারত। তারা যে দাঁড়াল না সেটা হতাশার ব্যাপার হলো। এ কারণে আমাদের চোখের সামনে বিকল্প শক্তি হিসেবে মুজিব বাহিনীর ছেলেরা জাসদ গঠন করছে এবং তারাই প্রধান বিরোধী দল হলো।

ছাত্রলীগের ছেলেরা যারা কখনো সমাজতন্ত্রের পক্ষে ছিল না, তারাই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট করছে। আমরা একদিকে খুব বিস্মিত হচ্ছি, অন্যদিকে দেখছি এরাই বিরোধী দল। জাসদ বিপুল সংখ্যায় দাঁড়িয়ে গেল। ১৯৭২ সালে ডাকসুর নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন জিতল।

'৭৩-এ যে নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ মিলে একটা যুক্তফ্রন্ট করল, তার বিরুদ্ধে দাঁড়াল ওই যে যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বলছে তারা এবং তারাই নির্বাচনে জিতছে। ওই সময় ডাকসুর ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়ে গেল। এটা কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত বড় একটি ঘটনা। আমরা কখনোই ভাবিনি হলের নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাই হবে। এ পরিবর্তনগুলো হচ্ছে।

রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটতে থাকল। বামপন্থি আন্দোলনটা স্তিমিত হয়ে গেল। যারা বামপন্থি মেধাবী ছেলেরা বিদেশ চলে যাচ্ছে, তারা শিক্ষক হয়ে এক-দুই বছরের মধ্যে পড়ালেখার জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছে। কাজেই মেধা অনেকটা বাইরে চলে গেল। ফলে মেধাবীরা রাজনীতিতে রইল না।

মূল বামপন্থিরা তো সরকারের সঙ্গেই ছিল। তারপর হতাশা দেখা দিল সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। এসব কারণে ছাত্র আন্দোলন স্থিমিত হয়ে গেল। যখন সামরিক শাসন এলো, বিশেষ করে জিয়াউর রহমানের আমলেও কিন্তু ছাত্ররা জাসদ ছাত্রলীগের পক্ষে ভোট দিয়েছে। স্বাধীনতার পর আমাদের একমাত্র স্বপ্ন ছিল একটা সমষ্টিগত মুক্তি।

একাত্তরে আমরা এটা উপলব্ধি করছিলাম সব শ্রেণীর মানুষ একসঙ্গে হয়েছে, কিন্তু একাত্তরের পর থেকে মধ্যবিত্ত আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সফল হয়। কিন্তু তাদের অবদানটা স্বীকৃতি পেল না। মধ্যবিত্তের একটা অংশ পিছিয়ে গেল, অন্যরা টাকা-পয়সা করল, চাকরি-বাকরিতে সুবিধা করল এবং রাতারাতি উচ্চবিত্তে পরিণত হয়ে গেল। এখন সমষ্টিগত মুক্তির কথা কেউ ভাবছে না।

একাত্তর সালে আমাদের একটা শিক্ষাবর্ষ নষ্ট হয়ে গেল। এরপর পরীক্ষায় নকল চলে এলো। মেডিকেল কলেজের ডিগ্রি অবমূল্যায়ন হলো। সন্ত্রাস এলো। একের পর রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, সামরিক শাসন আসছে।

সবকিছুই যেন একটা ধারাবাহিকতা। একটা পশ্চাৎপদ পুঁজিবাদী দেশের যে বিকাশ সেটাই হচ্ছে। ফলে দেশপ্রেম কমছে। ব্যক্তি নিজেকে বড় মনে করছে। তার ভোগ, তার ক্ষমতা, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা, মেধার দাম থাকছে না।

মানুষের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। এত বৈষম্য কখনো এদেশে ছিল না। আমরা চেয়েছিলাম সবার মুক্তি এবং ব্যবস্থার বদল। কিন্তু এতদিনে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা বদলায়নি। রাষ্ট্র আগের মতো রয়ে গেছে।

বরং রাষ্ট্র আগের চেয়ে কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে গেছে। শহর এবং গ্রাম একদিক থেকে একাকার হয়ে গেছে। শহরের কারণে গ্রাম নিঃস্ব হচ্ছে, সব লোক ঢাকায় চলে আসছে অথচ গ্রামে কোনো কর্মসংস্থান বাড়ছে না। আমাদের নদীর দিকে লক্ষ্য করলাম না। আমরা যখন ১৯৪১-এ ঢাকায় এলাম।

তখন বুড়িগঙ্গা অত্যন্ত জীবন্ত। মানুষ বিকালে সেখানে হাঁটতে যেত। সেই বুড়িগঙ্গা আস্তে আস্তে দূষিত হতে হতে পচে গেল। বুড়িগঙ্গার যে পচন, সেটা আমাদের সমাজেরই পচনের একটা প্রতীক। যারা উৎপাদন করে তাদের যে শক্তি সেটা নিঃশ্বেসিত হচ্ছে।

গ্রামে নিরাপত্তার অভাব ঘটছে। একটু অবস্থাপন্ন হলে তারা গ্রামে থাকছে না। মুক্তিযুদ্ধে আমরা পাকিস্তানিদের আমরা তাড়িয়েছি কিন্তু ব্যবস্থাটাকে বদলাতে পারিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কর্তৃক দুইবার উপাচার্য হওয়ার জন্য মনোনীত হয়ে আপনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কেন?

১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি অধ্যাদেশ পেলাম। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা স্বায়ত্তশাসন চলে এলো।

নির্বাচন চলে এলো। আমার অবস্থানটা বরাবরই ছিল প্রতিষ্ঠানবিরোধী। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আমার আনুগত্য ছিল না। আমাদের মনে হতো, যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন। কিন্তু অধ্যাদেশ যখন হয়, তখন থেকে সরকার সমর্থক ও সরকারবিরোধী একটা বিভাজন তৈরি হয়।

আমি ক্ষমতার বাইরের ধারায় ছিলাম। আমি কখনো চিন্তাই করিনি উপাচার্য হব। আমরা সিনেট, সিন্ডিকেট ইলেকশনে দাঁড়িয়েছি। সিনেট তিনজনের ভিসি প্যানেল দেয়, আমার নামও আসছে। আমি নির্বাচিত হয়েছি।

তিনজনের প্যানেলের মধ্যে আমি সর্বোচ্চ ভোট পাই। তখন প্রশ্ন এলো আমি সত্যি সত্যি উপাচার্য হতে চাই এবং এরশাদের শাসনামলে আমি কি পারব, সেটা কি শোভন হবে? আমার স্ত্রী তখন জীবিত। তার ধারণা ছিল, এই পদটা আমার না। পরে আরও একটি সুযোগ আসে। কিন্তু আমি লেখাপড়া করতে চেয়েছিলাম, প্রশাসনিক কাজ করতে চাইনি।

নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে আপনি যুক্ত আছেন, এ আন্দোলনের অর্জন কতটুকু।

ওসমানী উদ্যানে গাছ কেটে ফেলছিল। পুরান ঢাকার মানুষেরা সেখানে হাঁটে। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও বাম সংগঠনের কিছু ছাত্র এর প্রতিবাদ করি। ওই প্রতিবাদ বেশ সরব হয়ে ওঠে এবং মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিজয় হয়।

আমরা এটাকে মানুষের অধিকারের প্রতীক হিসেবে ধরি। লালনের আখড়া রক্ষার জন্যও আমরা চেষ্টা করেছিলাম, সফল হয়নি।

আপনার পরিবারের কথা জানতে চাই।

আমার স্ত্রী নাজমা জেসমিন চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৮৯ সালে ক্যান্সারে প্রয়াত হন।

আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে গৃহিণী। ছোট মেয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.