আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বার্ন ইউনিটে বেঁচে থাকার সংগ্রাম

সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো ঢাকা কলেজের স্নাতকের ছাত্র ওয়াহিদুর রহমান বাবু পড়ে আছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণ (আইসিইউ) কক্ষে।

একই পরিণতি জাহাঙ্গীর, নুরুন্নবীরও। চিকিৎসকরা কিছুক্ষণ পর পর এসে দেখে যাচ্ছেন। রোগীর এমন অবস্থার কারণে নার্সদের চেহারায় হতাশা। চিকিৎসক মোহাম্মদ হেদায়েত আলী খান জানালেন, তাদের অবস্থা তেমন ভালো নয়।

তাই নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আইসিইউর বাইরের ফটকে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি বাবুর দুলাভাই সোহায়েব হোসেন বাবলু। তিনি জানালেন, বাবুর বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার অভিরামপুর গ্রামে। তার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। পোড়া অংশগুলো পচে ফুলে গেছে।

সোহায়েব জানান, 'একসময় রাজধানীর পুলিশ হেড কোয়ার্টারের পেছনে বাবুদের একটি ভবন ছিল। পুরান ঢাকার একটি চক্র সেটি দখল করে তার বাবাকে গুম করে ফেলে। বাবাকে ফিরে পেতে তিনমাস ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাত দুপুরে ছুটে বেড়াতো বাবু। তাই অনেক সাংবাদিকের কাছেও পরিচিত সে। তার সঙ্গে একমাস ধরে ঢাকায় পড়ে ছিলেন সোহায়েবও।

কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস। বাবু আজ মৃত্যুশয্যায়। ' এদিকে বার্ন ইউনিট থেকে চিকিৎসা নিয়ে প্রায় সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন একুশে টেলিভিশনের শিশু সাংবাদিক সুস্মিতা সেন। তবে বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তার মা গীতা সেন। রূপালী ব্যাংকের শ্যামবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মাসুমা আক্তার।

পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে রয়েছেন রাজহু, তালহা ও মাহবুব। তারপরও শঙ্কামুক্ত নন বলে জানালেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিহঙ্গ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস পুরান ঢাকার সদরঘাট থেকে মিরপুরে যাচ্ছিল। সন্ধ্যায় বাসটি শাহবাগ শিশুপাকের সামনে পেঁৗছলে বাইরে থেকে পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। এতে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।

আগুনে দগ্ধ হয় ১৯ যাত্রী। দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় রুবিন ও নাহিদ নামে দুই মামাতো-ফুফাতো ভাই মারা যান। এ ছাড়া ঘটনার দিন রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন একজন। চিকিৎসাধীন বাকি ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনেরই মাথা, মুখ, গলাসহ শরীরের ওপরের অংশ পুড়ে গেছে।

তাদের মধ্যে চারজন নারী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুজন ছাড়া সবারই শ্বাসনালি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া খুবই শঙ্কার বিষয়।

অগি্নদগ্ধদের জন্য মেডিকেল বোর্ড : রাজধানীর শাহবাগে বাসের আগুনে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ১১ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ঢাকা মেডিকেলের অধ্যক্ষ ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রধান করে গতকাল ১১ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়।

ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান সকালে বোর্ডটি গঠন করেন। বোর্ডের অপর সদস্যরা হলেন- মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসান আসকরী নাজমুল আহসান, রেসপিরেটরি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ এনামুল হক, এনেসথেসিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবদুর রহমান, বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন, বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ মাকসুদুল ইসলাম, নাক-কান-গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এএফ মহিউদ্দিন, রক্ত পরিসঞ্চালন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. হুসনে আরা বেগম, বার্নের আইসিইউ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবীর ও বার্ন ইউনিটের অধ্যাপক সাজ্জাদ খন্দকার।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.