সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ লোকমান (৪৫)। অভাবের সংসার। পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন গাজীপুরের ইটাভাটা এলাকায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট ট্রাকে করে সবজি কিনে এনে গাজীপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করেন। সেই আয় দিয়ে চলে তার সংসার।
গত বুধবার ট্রাক নিয়ে সবজি আনতে গিয়েছিলেন মানিকগঞ্জে। সবজি বোঝাই ট্রাক নিয়ে ফেরার পথে তাদের লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা ছোড়ে অবরোধকারীরা। পুড়ে যায় তার শরীরের ১১ শতাংশ। মারাত্দক দগ্ধ হয় হাত, মুখ এবং চোখ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি অ্যান্ড বার্ন ইউনিটে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
বাবার যন্ত্রণা দেখে কান্না থামছে না সন্তানদের। গতকাল বার্ন ইউনিটে বাবার পাশে থাকা মেয়ে লাইজু আক্তার জানান, সারারাত যন্ত্রণায় বাবা ঘুমাতে পারছেন না। বাইরে চিকিৎসা করানোর টাকা আমাদের নাই। আমার মা টাকা ধার আনতে গেছেন। সব কিনতে হয়।
একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অচল হয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
দগ্ধ স্বজনদের অভিযোগ, ঠিক সময়ে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ডিউটিতে থাকা চিকিৎসকরাও আসতে দেখি না। চোখের সামনে রোগী মরে যায়। বার্ন ইউনিটে দায়িত্বরত সেবিকারা কথায় কথায় খারাপ ব্যবহার করেন।
ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর (৪০)। তিনিও সবজির ব্যবসা করেন। দগ্ধ লোকমান আর আলমগীর একই গাড়িতে ছিলেন। আলমগীর জানান, পেট্রলবোমা প্রথমে লোকমানের গায়ে পড়ে। তার পরে আলমগীরের গায়ে আসে।
তিনি হাত দিয়ে বোমাটি সরানোর চেষ্টা করেন। তার হাত এবং মুখের কিছু অংশ ঝলসে গেছে। আলমগীরের স্ত্রী সালেহা বেগমের অভিযোগ, দুই দিন হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরালেও এখনো পোড়া অংশ ড্রেসিং করানো হয়নি তাদের। এমন জানলে তিনি তার স্বামীকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করাতেন না।
সিএনজি চালক রিপন।
থাকেন ফেনী। তিনি ৩ বছর বয়সী এক কন্যা সন্তানের বাবা। গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পেট্রলবোমায় মারাত্দকভাবে দগ্ধ হন তিনি। ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে এক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ক্ষত শুকাচ্ছে না।
অভাবের সংসারের চাকা থেমে গেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অচল হওয়ায় ধারদেনা দিতে চায় না কেউ। গত সপ্তাহে চিকিৎসার জন্য ধার করে আনা তের হাজার টাকা হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ব্যাগসহ খোয়া গেছে। রিপনের স্ত্রী লুবনা আক্তার ফেন্সি জানান, আমরা খুব গরিব। আপনারা আমাদের সাহায্য করেন।
আর চিকিৎসার খরচ টানতে পারছি না। টাকার অভাবে আমার স্বামীরে একটু ফল পর্যন্ত খাওয়াতে পারছি না। লুবনা এই সহিংস রাজনীতির প্রতি ঘৃণা জানিয়ে বলেন, যারা এই পেট্রলবোমা মারছে তারা অসুস্থ কসাই। তারা রাজনীতি করে না। মানুষ মারাই তাদের নেশা।
কুমিল্লায় পেট্রলবোমায় পুড়ে যাওয়া সিএনজি চালক রুবেল মিয়ার স্ত্রী বলেন, 'আমার স্বামী সুস্থ নাই। বার বার ড্রেসিং আর মলম ছাড়া আর কিছুই নাই হাসপাতালে। আজকে দুই মাসের মতো হইলো। আমার স্বামীর পোড়া ঘা শুকাইতেছে না। আমাদের টাকা নাই।
নইলে বাইরে চিকিৎসা করাইতাম। এই কষ্ট আমার আর সহ্য অইতেছে না'।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আবাসিক সার্জন চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের বার্ন ইউনিটে প্রতিদিন আগুনে পোড়া মানুষ আসছে। ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছে।
তবে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় আধা ঘণ্টা এক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে। কিন্তু কেউ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, একজন রোগী যন্ত্রণায় থাকলে সমস্ত ক্ষোভ চিকিৎসকের উপরেই আসে। আমরা সার্বক্ষণিক দগ্ধ মানুষের সেবা করছি। কোনো অবহেলা নাই।
উপর থেকে এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া আছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।