দোষ দেওয়ার আর কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। দেশবাসী আজ আর্তনাদ করছে। কিন্তু যাদের জন্য এ আর্তনাদ সেই রাজনীতিবিদরা কি তা শুনতে পাচ্ছেন? দেশটা আজ টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মানুষ রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের প্রতি কতখানি বীতশ্রদ্ধ হয়ে যাবে তারা কি এটা ভাবছেন? মানুষ কি তবে নিজের হাতে আইন নিয়ে নেবে? আমরা কি সেই জায়গায় যাচ্ছি? শুক্রবার সময় টেলিভিশনের টকশো 'সম্পাদকীয়'-তে বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুর্শিদ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে একের পর এক এসব প্রশ্ন তোলেন। তুষার আবদুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও সমাজতত্ত্ববিদ খন্দকার সাখাওয়াত আলী।
শারমীন মুর্শিদ বলেন, আজকের ঘটনাগুলো দেখে আমার মনে হচ্ছে ডিসপ্যাশনেট একাডেমিক বিশ্লেষণ করার মুহূর্ত এটা আর নয়। সেটা করার জন্য আমরা আরও অনেক সময় পাব যখন এই ঘটনাগুলোকে পেছন থেকে দেখব। এ মুহূর্তে মনে হচ্ছে, দুই দলের যুদ্ধ বন্ধ করতে দ্রুত কিছু একটা করা উচিত। বর্তমানে আমাদের একটা নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার আছে। এই সময়ে দেশের পরিস্থিতি শান্ত রাখার দায়িত্বটা কার? অন্তর্বর্তী সরকারের, নাকি নির্বাচন কমিশনের? আমি বলব নির্বাচন কমিশনের এ মুহূর্তে সব দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া উচিত।
দুই রাজনৈতিক দলের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তাদের এ বড় দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, আজ রাজনীতির নামে যে অ্যাকশনগুলো নেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই। আমরা যখন বলছি সংঘর্ষ বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের হাতে। তখন সরকার বলছে সব দায়দায়িত্ব আমার ওপর দেওয়া একপেশে বিচার।
বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে শারমীন মুর্শিদ বলেন, হরতাল-অবরোধে একের পর এক মানুষ মরছে। তোমাদের ক্যাডাররা যখন এই নির্মম কাজগুলো করছে, তোমরা নিন্দাও করছ না। একবারও তাদের বলছ না আন্দোলন কর কিন্তু একটি মানুষও যেন মারা না যায়। কয়েক মাস আগে জরিপগুলোয় দেখা গেছে বিরোধী দলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আজকে ছোট ছোট জরিপ করে দেখছি সেখানেও পরিবর্তন ঘটছে।
তিনি বলেন, এ মুহূর্তে আর যাই হোক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নেই তা একটা ছোট্ট শিশুও বলতে পারবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ শুধু নির্বাচন নয়, কোনো কিছুর জন্যই এ মুহূর্তে নেই। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র কী তা জানেই না। গণতন্ত্রের নিয়ম-কানুন তারা তৈরিও করতে পারে না, মেনেও চলতে পারে না। গণতন্ত্রকে তারা শুধু নির্বাচনে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে।
'৯১ সালের নির্বাচন দেশবাসী সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছিল। বিরোধী দল সেটাকে উড়িয়ে দিল। বলল, গ্রহণ করি না এই নির্বাচন। '৯৬ সালের নির্বাচনের আগে ছোট্ট একটা নির্বাচন হয়ে গেল। যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা আরেকটু থাকতে চাইলেন।
মানুষ বুঝিয়ে দিল এটা চলবে না। '৯৬ সালে আবার নির্বাচন হলো। জনগণ গ্রহণ করল, বিরোধী দল বলল মানি না। একই অবস্থা হলো ২০০১ সালের নির্বাচনেও। ২০০৮ সালে ভীষণ নিখুঁত একটা নির্বাচন হলো, বিরোধী দল বলল মানি না।
এখান থেকে আমরা একটা উপসংহারেই আসতে পারি- গণতন্ত্রের ফ্রেমওয়ার্ক এ দেশে তৈরি হয়নি। আমাদের রাজনীতিবিদরা কথায়, আচার-আচরণে এখনো গণতান্ত্রিক হয়ে উঠতে পারেননি। যখনই উনারা ক্ষমতায় আসছেন তখন গণতন্ত্রকে কেটে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছেন। আর প্রতিবারই আমরা যখন কোনো কিছু মানছি না তখন মাঠে গিয়ে সংঘর্ষ হচ্ছে।
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক প্রশ্ন তুলে বলেন, দুটি দলের কর্ণধাররা কি জনগণের জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছেন তাদের কারণে দেশটা কীভাবে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল একটা লাঠি যার ওপর ভর করে এত দিন চলেছি।
এখন সেই লাঠিটি নেই। এ মুহূর্তে দেশবাসী এবং আমাদের চাওয়া দুই রাজনৈতিক দলের কাছে- আপনারা এখনই একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হোন যাতে আগামীকাল থেকে আর একটা লাশও না পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আপনি শেষবারের মতো আরেকটা উদ্যোগ নিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।