আজ একটি জাতীয় দৈনিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতারের সময়ের একটি ছবি ছাপা হয়। ছবিতে দেখা যায় বেচারা ইকবালের ঘাড়ে ও জামার কলার ধরে চূড়ান্ত অপমান অপদস্থ অবস্থায় ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপরের ঘটনা আরো কতদূর গড়িয়েছে তা ছবি দেখে জানা সম্ভব হয় নি। তবে স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা যায় যে এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে লাথি, কিল, ঘুষি এবং লেখার অযোগ্য ভাষা প্রয়োগও বাদ যাওয়ার কথা নয়। কারণ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা ঘরে বসে প্রায়ই দেখি এমন ঘটনাগুলোর সময় কি কি ঘটে থাকে।
এ ক্ষেত্রে ইকবাল হোসেনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়াটা খুবই মামুলি ব্যাপার। বিশেষ করে যখন ভোর রাতে প্রধান গেট বাদ দিয়ে পেছন পথ দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। আর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে তো ঘুম থেকে তুলে লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামান্য ছড়িটা পর্যন্ত সাথে করে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি যা ছাড়া বর্ষীয়ান এই নেতার হাঁটা চলা কঠিন হয়ে পড়ে। একইভাবে অনুরূপ ব্যবহার কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ও এই পুলিশ নামক ব্যক্তিদেরকে দিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী, নারী নেত্রী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের হেনস্থা, অপমান-অপদস্থ, মারপিট করা হয়েছে।
বর্তমানে সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে মাত্র।
এসব ঘটনা ঘটার সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, সংসদের হুইপ, স্পিকার, আইনজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী- বিশেষ করে যারা সাবেক হয়ে যান তারা কেউই বাদ যান না। অথচ এই মানুষগুলোই আমাদের সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। সাধারণত তাদেরকে অপমান করার কথা আমরা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু এরাই যখন গণতন্ত্রের বেঁধে দেওয়া নিময় অনুযায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামেন তখন তারা এইরূপ যেনতেন ব্যবহার পেয়ে থাকেন।
শ্রদ্ধার উপযুক্ত এই ব্যক্তিগণকে লাঠিপেটা, লাথি, কিল, ঘুষি, বুটের পায়ের পায়ের তলায় পিষাণো থেকে শুরু করে বিভিন্ন অশ্লীল গালাগালি করা হয়।
সম্মানিত ব্যক্তিদের প্রতি এই অযাচিত আচরণ কিন্তু এখন আর রাজপথে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এর প্রতিক্রিয়া রাজপথ ছাড়াও ঘরে-বাইরে, অফিস- আদালতে ও সমাজের অন্যান্য অঙ্গন ছেয়ে গেছে। ফলে ধীরে ধীরে সমাজের মানুষের মধ্য থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিনয়, লজ্জা-শরমবোধ ইত্যাদি স্বাভাবিক মানবীয় গুণগুলো উধাও হয়ে গেছে। তাই সমাজে ছাত্র শিক্ষকের সামনে বেয়াদবি করে, সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, স্ত্রী স্বামীকে মান্য করে না, বড়কর্তা অধীনস্ত কর্মচারীদেরকে মনে করে দাসানুদাস আর শ্রমিকের চোখে মালিক হচ্ছেন অমানুষ, মালিক শ্রমিকদেরকে সঠিক মজুরি হতে বঞ্চিত করেন আর শ্রমিকরাও সুযোগ পেলেই কাজে ফাঁকি দেয়, মালিকের ক্ষতি করে, এমন কি সা¤প্রতিক স্ট্যান্ডার্ড গ্র“পের ন্যায় আগুন দিয়ে কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা অহরহই ঘটে থাকে।
অন্যদিকে সরকারের চোখে জনতা বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ, বেঈমান আর জনতার কাছে সরকার শত্র“ -এই সম্পর্ক চলতে থাকে একে অপরের । কেউই কাউকে বিশ্বাস করে না।
আমাদের সমাজে আজকে এই যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এর জন্য দায়ী কে? এক কথায় এর উত্তর হবে যে ব্যবস্থা আমাদেরকে যার যা ইচ্ছা করার স্বাধীনতা দিয়েছে, যার যা বলার অধিকার দিয়েছে সে জীবনব্যবস্থা, অর্থাৎ গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্রের চর্চা মানবজীবনের দৈহিক ও আত্মার ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছে। এই গণতন্ত্র আমাদেরকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে অর্থ উপার্জন অতঃপর ভোগ।
সেই উপার্জন বৈধ পথে না অবৈধ পথে তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তাদের একটা অংশ অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করে বিশাল ধন-স¤পদের পাহাড় গড়ছে এবং এর ফলস্বরূপ বাকী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতা জীবন অতিবাহিত করছে বঞ্চিত, নিগৃহীত, নিষ্পেষিত ও নিঃস্ব হয়ে। তাদের শতকরা অনুপাতটা- ১: ৯৯. বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে থেকে কিছু মানুষ ফুঁসে উঠে বিক্ষোভ, অবরোধ, হরতাল, দাঙ্গা ইত্যাদি শুরু করে। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড নিবৃত্ত করতে আবার রাষ্ট্র কর্তৃক শক্তি প্রয়োগ শুরু হয়। এই অবস্থায় মানুষের ন্যূনতম মান-সম্মান, ইজ্জত, আব্র“ অবশিষ্ট থাকে না।
তখন এর আওতা থেকে কেউ রেহাই পায় না। কি নারী, কি পুরুষ, কি বয়োজেষ্ঠ-সবাই এই অসম্মানের মুখোমুখি হয়। কিন্তু তব্ওু এই গণতন্ত্রই যেন আমাদের ভালো করে পেয়ে বসেছে। এটাকে আমরা কিছুতেই ছাড়তে চাই না। এর সাথেই আষ্টে-পৃষ্ঠে আমরা ডুবতে চাই চূড়ান্তভাবে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।