এক সময় বই ছিল আমার নিত্য সঙ্গী , অনেক রাত জেগে বালিশ নিয়ে উপুর হয়ে বই পড়তে পড়তে বুক ব্যাথা হয়ে যেত । পড়া শেষ হতো না । আজো বইয়ের কথা মনে হলে আমার বুকে ব্যাথা হয়, তাদের মলাটে ধুলোর আস্তর জমেছে বলে । বইয়ের পোকা থেকে এখন আমি ইন্টারনেটের পোকা ।
সকলের শরীর দিয়ে ঘাম গড়িয়ে নামছে,জোঁকের কামড়ে রক্ত ঝড়ছে অনেকের পা থেকে।
শরীর ভেঙ্গে যেতে চাইছে, কিন্তু মুখগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন প্রত্যেকেরই মুখে অমলিন হাসি আর অবয়বে তৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। আর এই তৃপ্তির ও যথেষ্ট কারণ আছে আমাদের ১২ জনের টিমের কেউই আগে বাংলাদেশের ছাদে উঠিনি।
মানে আমি বলতে চাচ্ছি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়া সাকা হাফং বা ত্লাংময়ের কথা। ওখানে পৌছে আমাদের আনন্দের যেন আর সীমা রইলো না।
আমি ভালো লেখক নই, মূলত ছবি দিয়েই পোষ্ট শেষ করতে আমি ভালোবাসি।
কিন্তু এতো কঠিন পথ পাড়ি দেওয়ার সময় ছবি তোলার সুযোগ থাকে খুবই কম। যাদের পাহাড় ট্র্যাক করার অভিজ্ঞতা আছে তারা ভালোই জানেন, একপাশটা আকাশ ছোয়া পাহাড়ের দেয়াল আর অন্য পাশটা হাজার ফুট নেমে যাওয়া মৃত্যুখাদ, সেই সাথে পাহাড় পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠা ঝুরঝুরে কিংবা পিচ্ছিল মাটিতে যেখানে পা রেখে চলাই দায় সেখানে ক্যামেরা হাতে নেওয়ার সুযোগ কোথায় ? তবু যেটুকু ছবি তুলেছি তা দিয়েই আজকের পোষ্ট সাজানোর চেষ্টা করবো।
(২) আগে কাইক্ষাং ঝিরি থেকে রুমা বাজার পর্যন্ত সাঙ্গু নদীর উজানে ট্রলারে যাইতে হতো, কিছুদিন আগে নতুন ব্রীজ উদ্বোধন হওয়াতে রুমা বাজারে হইতে তিন কিলোমিটার দুর পর্যন্ত চান্দের গাড়িতেই যাওয়া যায়। ছবিতে দেখা যাচ্ছে পাহাড়িরা জুমের জমি তৈরী করছে।
(৩) পাহাড়িদের ছাগলগুলো যেভাবে সাঙ্গু পারি দেয়
(৪) আগের দিন বগালেকে রাত যাপন করে ২য় দিন খুব ভোরে শুরু হলো আমাদের সাকা হাফং যাত্রা, পথের পাশে ফুটে থাকা শিশির ভেলা লাল ফুলগুলো যেন আমাদেরকে শুভ কামনা জানাচ্ছিল।
(৫) এমন বিশাল মাকড়শাগুলো পাহাড় ছাড়া অন্য কোথাও আমি দেখিনি।
(৬) পথের ক্লান্তি দূর করার জন্য ঝিরি থেকে বাঁসের গ্লাস দিয়ে পানি খাওয়ার সময় আপনি সত্যিই রোমাঞ্চিত হবেন।
(৭/৮) যাওয়ার পথেই পড়ে কেওকারাডাং চুড়া, ওখানে ওঠে কিছু ক্লিকবাজী না করলে কি হয় ? তবে এবারের কেওকারাডাং চুড়া ছিলো অন্য রকম সাজে, কারণ কয়েকদিন আগে মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওখানে গিয়েছিলেন।
(৯) কেওকারাডাং পার হয়ে পনের মিনিট আগালেই পরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গ্রাম পাসিং পাড়া, পাসিং পাড়া পার হয়ে আমরা আমরা জাদিপাই পাড়ার পাশ কেটে এগিয়ে চললাম বাকলাই পাড়ার দিকে।
(১০) ক্লান্ত পথিক এমন রূপ দেখে থমকে দাড়াবে, এ আর অস্বাভাবিক কি ?
(১১) কোন কোন সময় খুবই পানি সংকট দেখা দেয়, তখন কার্নিস বেয়ে এমন ফোটা ফোটা পানিও হয়ে উঠে ট্র্যাকারদের জন্য আশির্বাদ স্বরুপ।
(১২) সাকা হাফং এর পথে আমাদেরকে স্বাগতম জনাচ্ছিল পাহাড়ি ফুল আর নীল আকাশ।
(১৩/১৪) একসময় আমরা পৌছে যাই সাকাহাফং এর পায়ের কাছের গ্রাম নেফিউ পাড়াতে, এটা একটা মুরং পাড়া। পাড়াটা দেখতে নোংরা হলেও আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে।
(১৫) মুরং পাড়ার শিশুরা।
(১৬) টপলেছ এক মুরং মহিলা কাঁচা বাঁশের ভেতর কিছু একটা রান্না করছে।
(১৭) মুরং পাড়ায় একটি রাত কাটিয়েছিলাম এই ঘরে, এই ঘরের দরজায় সব সময় দাড়িয়ে থাকতো একটা ভয়াল দর্শন গয়াল, কিন্তু খুবই নিরিহ।
(১৮) সাধের লাউ, লাউয়ের খোসা দিয়ে তৈরী পাহাড়িদের পানি রাখার পাত্র, একটু পান করে দেখলাম, এটার পানিতে অন্য রকম একটা স্বাদ আছে।
(১৯) খাবার খাওয়া রত মুরং পরিবার।
(২০) আমাদের জিপিএস রিডিং বলছে এই চুড়ার উচ্চতা ১০৫৩ মিটার বা ৩৪৫৪ ফিট । পরদিনই খুব ভোরেই আমরা নেফিউ পারা থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চুড়ায় চলে আসি।
(২১) মায়ানমারের আকাশে মেঘের নদী। সাকা হাফং এর পরই মায়ানমার শুরু, যদিও ওখানে কোন সিমান্ত রেখা আমরা দেখতে পাইনি বা দেখিনি বাংলাদেশ বা মায়ানমারের কোন সিমান্ত বাহিনী।
(২২) বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্থানে পৌছার পরও বুঝি আমাদের মন ভড়েনি, তাই তো সকল বন্ধুরা মিলে আকাশ ছোয়ার প্রচেষ্টা.........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।