সফরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপানের সঙ্গে আঞ্চলিক শক্তি চীনের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনায় ভারসাম্য আনার চেষ্টা করবেন।
নিজেদের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকে অতি মনোযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়াকে অবহেলা করছে, এমন একটি অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় মিত্রদের মধ্যে দানা বাঁধছে।
এই সমালোচনার বিপরীতে নিজেদের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানোর একটি পরিকল্পনা দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছে হোয়াইট হাউস।
পূর্ব চীন সাগরের দুটি ছোট দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে এই দেশগুলোর মধ্যে বছর খানেক ধরে উত্তেজনা চলছে। এই দুটি দ্বীপ চীন ঘোষিত আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে পড়েছে।
জাপানে সেনকাকু ও চীনে দিয়াইয়ু নামে পরিচিত মানববসতিহীন এই দ্বীপগুলো ঐতিহাসিকভাবে চীনা মালিকানাধীন দ্বীপ হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানি মালিকানায় চলে যায়।
সম্ভাব্য তেল ও গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ এসব দ্বীপের মালিকানা সম্প্রতি দাবি করেছে চীন।
চীনের নতুন ঘোষিত আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলের মধ্যেও দ্বীপগুলোর আকাশসীমা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই নিয়ে জাপানের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
সম্প্রতি ঘোষিত আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশকারী বিদেশি বিমানকে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে, গন্তব্যে যেতে আকাশ পথ ব্যবহারের পরিকল্পনা পেশ করতে ও সার্বক্ষণিক দ্বীপাক্ষিক যোগাযোগ রক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছে চীনা সেনাবাহিনী।
এ নির্দেশ না মানলে ওই প্রতিরক্ষা আকাশসীমায় প্রবেশকারী বিমানকে (তা সামরিক বা বেসামরিক যাই হোক না কেন) চীনের ‘জরুবি প্রতিরক্ষা বিবেচনার’ মোকাবিলা করতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এ ঘোষণার পরপরই এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাপান। পরে দক্ষিণ কোরিয়াও জাপানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের অপর পাড় থেকে জাপান ও কোরিয়ার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও চীনা ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে এর সমালোচনা করেছে।
চীনা ঘোষণার পর নিজেদের মালিকানাধীন দ্বীপ এলাকার আকাশসীমায় যুদ্ধ বিমান পাঠিয়ে টহল দিয়েছে জাপান।
পরে দক্ষিণ কোরিয়াও জাপানকে অনুসরণ করেছে। কারণ চীনের ঘোষিত এলাকা দিয়ে দুটি দেশের বাণিজ্যিক বিমানেরই যাতায়াতের পথ রয়েছে।
জাপান ও দ কোরিয়ার পর বিরোধপূর্ণ ওই দ্বীপপুঞ্জের আকাশসীমায় দুটি বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়াম দ্বীপ থেকে উড়ে যাওয়া বিমানদুটিতে কোনো অস্ত্র ছিল না বলে পরে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে স্পষ্টতই চীনের সঙ্গে বিরোধে মিত্র জাপানকে সমর্থন দিতেই সেখানে বোমারু বিমান পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র।
ঘোষণা দিলেও এসব বিমানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি চীন। কিন্তু এর পরবর্তীতে ঘোষিত এলাকায় চীনা জঙ্গি বিমানগুলো ব্যাপক টহল জোরদার করে। এসব নিয়ে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক এলাকা পূর্ব চীন সাগর ঘিরে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ইতোমধ্যেই নিজেদের বাণিজ্যিক বিমানগুলোকে চীনা নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও মুখে বলেছে, এ পরামর্শের মানে চীনের দাবি মেনে নেয়া নয়।
কিন্তু পর্যবেক্ষকদের ধারণা বিশ্বের ২০টিরও বেশি দেশের ক্ষেত্রে প্রচলিত ‘আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল’ বিশ্বের উঠতি পরাশক্তি চীনের ক্ষেত্রেও মেনে নেয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এ পরিস্থিতিতেই মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আশ্বস্ত করতে ও চীনকে বোঝাতে এবং চীনের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরতে দেশগুলো সফরে আসছেন বাইডেন।
মঙ্গলবার জাপানের রাজধানী টোকিও যাওয়ার পর বুধবার তিনি চীনের রাজধানী বেইজিং পৌঁছাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।