বেপরোয়া দুর্নীতি অভিযোগের কারণেই কপাল পুড়েছে স্কুল শিক্ষিকা থেকে কোটিপতি বনে যাওয়া সিরাজগঞ্জের জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর। এ কারণেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এমপি প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি দলীয় কোন কর্মসূচিতেই অংশগ্রহণ করছেন না। এমনকি তার পক্ষের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী রুমানা মাহমুদের কাছে অল্প ভোটে হেরে যান হেনরী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপারিশে তিনি সোনালী ব্যাংকের অন্যতম পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। সেই থেকে তার উত্থান শুরু। সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার পর ঋণপ্রদান, চাকুরী বাণিজ্য, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বদলি, ঋণপ্রদান ও মওকুফ করা এবং বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য করে সাড়ে তিন বছরে হেনরী প্রায় শত কোটি টাকার মালিক হন। এছাড়াও ক্ষমতার দাপটে স্কুলে শিক্ষকতা না করেই নিয়মিত তোলেন বেতন ভাতা। হেনরীর আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাওয়ার কথা নিজ দলের নেতাকর্মীসহ সিরাজগঞ্জে সবার মুখে মুখে সরব হয়ে ওঠে।
এরপর হলমার্ক কেলেঙ্কারি ঘটনা ফাঁস হলে তিনি সারাদেশে আরো আলোচিত হয়ে ওঠেন। এ সকল বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় একাধিক তথ্যনির্ভর রিপোর্ট ছাপা হলেও তিনি ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসেও তা মোটেও আমলে নেননি। কিছুদিন চলাফেরার পরিবর্তন করলেও ক্ষমতা ব্যবহারে ডেমকেয়ার ভাব ছিল তার মধ্যে। যত অভিযোগই উত্থাপিত হোক না কেন আওয়ামী লীগের কতিপয় প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্য থাকায় সিরাজগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন এমন প্রবণতা তার মধ্যে সবসময় কাজ করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ তাকে সহায়তা করেনি।
দলীয় সূত্র আরো জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-২ আসনে তিনি মনোনয়ন উত্তোলনের পর টিকিট পেতে জোরতদবিরও চালিয়েছিলেন। পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, আলোচনা সভা, মতবিনিময়সহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সকলে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় কোন ফল হয়নি। গত দুই বছর যাবত বিভিন্ন দুর্নীতির খবর এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারির বিষয়টি জোরালোভাবে সিরাজগঞ্জে চাউর হওয়ায় তার পিছন থেকে জেলা আওয়ামী লীগ, সদর থানা আওয়ামী লীগ ও শহর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারা মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে।
এক পর্যায়ে সিরাজগঞ্জ-২ (সিরাজগঞ্জ-কামারখন্দ) আসনের সকল ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার পক্ষ অবলম্বন করেন।
এরপরও হেনরী চেষ্টা-তদবিরে কমতি রাখেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের গোপনীয় অনুসন্ধানে তিনি ধরা খান। ছিটকে পড়েন মনোনয়ন থেকে। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না মনোনয়ন চূড়ান্তের পর তিনি মূলতঃ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রয়েছেন। দলীয় কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন না।
কখনও সিরাজগঞ্জ আবার কখনও ঢাকা অবস্থান করছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
আজ সোমবার দুপুরে মোবাইলে জান্নাত আরা তালুকদার হেনরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। কোন বিষয়ে কথা বলতে পারব না। এরপর তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।