আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাযহাব সংক্রান্ত লিখাটি পড়ে ভাল লাগলো তাই শেয়ার করলাম।

অন্যায়, দূর্নীতি এবং অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলে যাব, ফলাফল শূন্যই হোক।

আজকাল অনেক ভাইকে দেখা যায় মাযহাব শব্দটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগে থাকেন। আবার অনেকে জেনে শুনে মাঝহাব নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন। তাদের জন্য এই পোষ্ট নয়। কারন ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো আমার সম্ভব কিন্তু জাগ্রত ব্যক্তিকে সম্ভব নয়।

যারা সত্যিকার অর্থেই মাযহাব নিয়ে জানতে চান তাদের জন্য আমার এই পোষ্ট। সম্পূর্ণ পোষ্ট এবং সবার শেষে মাযহাব বিষয়ে প্রদত্ত দুটি বই ডাউনলোড করে পড়লে ইনশাল্লাহ আপনাদের প্রায় সমস্ত সন্দেহ দূর হবে। দোয়া করে কেউ অযথা কপি-পেষ্ট করবেন না। মাযহাব নিয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর মাযহাব কি এবং কেন? মাযহাব কি রাসূল,সাহাবী এবং তাবেঈ কারো মানার দলীল আছে? কুরআন ও হাদীস দেখে আমল করলে অসুবিধা কোথায়? মুহাদ্দিসগন কি মাযহাব মেনেছেন? আমরা কেন চারটি মাযহাব থেকে বেছে বেছে মাসআলা আমল করতে পারব না? কেন একটি মাযহাবই মানতে হবে? জবাব: بسم الله الرحمن الرحيم মাযহাব কি? মাজহাব মানে মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস। মিসবাহুল লুগাত (থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা) মুজতাহিদ হল কুরআন সুন্নাহ, সাহাবাদের ফাতওয়া, কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ঐক্যমত্বে এবং যুক্তির নিরিখে কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা বেরকারী গবেষক দলের নাম।

যারা নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন মূলনীতি নির্ধারণ করে কুরআন সুন্নাহর বাহ্যিক বিপরীতমুখী মাসআলার মাঝে সামাঞ্জস্যতা এনেছেন। কুরআন সুন্নাহর একাধিক অর্থবোধক শব্দের নির্ধারিত পালনীয় অর্থকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। নতুন উদ্ভূত মাসআলার শরয়ী মূলনীতির আলোকে সমাধান বরে করেছেন। সেই সাথে নতুন নতুন মাসআলার কোন মূলনীতির আলোকে হুকুম আরোপিত হবে যার বিধান সরাসরি কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত নেই, সেই মূলনীতিও নির্ধারিত করেছেন। মূলত সেই গবেষক দলের নাম হল মুজতাহিদ।

আর তাদের উদ্ভাবিত মূলনীতির আলোকে বের হওয়া মাসআলার নাম মাযহাব। মাজহাব মূলত এসেছে এই হাদীসটির মাধ্যমে….. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও আবু হুরায়রা রা. হুজুরের হাদীস বর্ণনা করেছেন, যখন কোন হাকীম (বিচারক ও মুফতী) কোন বিষয়ে ইজতিহাদ করে এবং তা সঠিক হয়, তবে সে দ্বিগুন সওয়াব পাবে। আর ইজতিহাদে যদি ভুল করে, তবুও সে একগুন সওয়াব পাবে। – বুখারী 2/109, মুসলিম 2/72, তিরমিজী 193 এবং কেন? মাযহাব পালনের কথা এই জন্য বলা হয় যে, যেহেতু কুরআন সুন্নাহ এর বিস্তারিত জ্ঞান সম্পর্কে বর্তমানে আলেম খুবই নগণ্য। যারাও আছে তারাও অনেক কিছু বিষয়ে বিজ্ঞ নন যেসব বিষয়ে বিজ্ঞ হওয়া অতীব জরুরী।

যেমনঃ # কুরআনে কারীমের কোন আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেছে? # কোন আয়াতের হুকুম বহাল আছে? # কোন আয়াত কোন প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে? # কোন আয়াত(কুর’আন-হাদীস উভয়ই) কাদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে? # কোন আয়াতাংশের প্রকৃত অর্থ কি? # আরবী ব্যাকরণের কোন নীতিতে পড়েছে এই বাক্যটি? # এই আয়াত বা হাদীসে কী কী অলংকারশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? সেই সাথে হাদীস শাস্ত্রে নিম্নোক্ত বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। # হুজুর স. কর্তৃক ত্রিশ পারা কোরআনের ব্যাখ্যায় রেখে যাওয়া দশ লক্ষ হাদীসের কয়টি হাদীস তিনি জানে? # কোন হাদীসেরর হুকুম রহিত হয়ে গেছে হাদীসটি সহীহ হলেও এবং কেন? # কোন হাদীসের হুকুম বহাল আছে? # কোনটি সহীহ হাদীস কোনটি দুর্বল হাদীস? # কোন হাদীস কি কারণে দুর্বল? # কোনো হাদীস দুর্বল হলে সেটা কোন রাবীর কারণে দুর্বল হয়েছে? # হাদীসের চেইনে এই দুর্বল রাবীর আসার আগে হাদীসটি কি অবস্থায় ছিল? # কোন হাদীস কী কারণে শক্তিশালী? হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী একদম নখদর্পনে থাকা আলেম বর্তমান যুগে একটাও নাই। অথচ হাদীসের বর্ণনাকারী শক্তিশালী না হলে তার দ্বারা শরয়ী হুকুম প্রমাণিত হয়না। শুধু তাই নয়, সিয়াহ-সিত্তার কিতাবের লেখকের মতন হাদীস গবেষকও উনাদের পর আর কেউ জন্মাননি। এই সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া যাওয়া দুস্কর।

একেতু অধিকাংশ মানুষই আলেম না। আর মুষ্টিমেয় যারা আসলেই আলেম তারাও উল্লেখিত সকল বিষয় সম্পর্কে প্রাজ্ঞ নয়। তাই যেখানে আলেমদেরই পক্ষে এত কিছু পুংখানুপুংখভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না সেখানে আমাদের মতন মূর্খ মানুষদের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে সঠিক মাসআলা বের করা অসম্ভব। - ইবনে তাইমিয়্যা যাকে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীসেরা সব থেকে বেশী অনুসরন করে থাকে, তিনি বলেন, “কেবল মাত্র হাদীস শ্রবণ, লিখন অথবা বর্ণনায় সীমাবদ্ধ ব্যক্তিদেরকেই “আহলে হাদীস” বলা হয় না বরং আমাদের নিকট “আহলে হাদীস” বলতে ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে বুঝায় যারা হাদীস সংরক্ষন, পর্যবেক্ষন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অর্থ অনুধাবন করার যোগ্যতা সম্পন্ন এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অর্থের অনুসারী হবে। ” [নাক্বদুল মানতিক, পৃ:১৮, কায়রো থেকে প্রকাশ ১৯৫১ইং] - হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. ইমাম বাগাবী রহ. সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইজতিহাদের জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।

যার মধ্যে এ পাঁচটি হতে একটিও কম পাওয়া যাবে, তার জন্য তাক্বলীদ ছাড়া কোন পথ নেই। [কাঞ্জুল উসূল ইলা মা’রিফাতিল উসূল- ২৭০, উসূলে ফিক্বাহ লি আবি হুরায়রা- ২৩৬, আল মালাল ওয়ান নাহাল- ১/২০০ মিশরী ছাপা। ] - হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. কে জিজ্ঞাসা করা হল, যার এক লক্ষ হাদীস স্মরণ থাকে, সে কি ফক্বীহ বা মুজতাহিদ হতে পারেবে, তদুত্তরে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বললেন, না। পুনারায় জিজ্ঞাসা করা হলো, যদি পাঁচ লক্ষ হাদীস স্মরণ থাকে, তদুত্তরে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বললেন, সে সময় তাকে ফক্বীহ হবে আশা করা যেতে পারে। [এমদাদুল ফতোয়া ৪/৮৭] একটি উদাহরণঃ এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-اقيموا الصلاة তথা সালাত কায়েম কর।

আরেক আয়াতে বলেছেন-إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ তথা নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এবং ফেরেস্তারা নবীজীর উপর সালাত পড়ে। এই আয়াতের শেষাংশে এসেছে-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا তথা হে মুমিনরা তোমরাও তাঁর উপর সালাত পড় এবং তাঁকে সালাম জানাও। {সূরা আহযাব-৫৬} এই সকল স্থানে লক্ষ্য করুন-“সালাত” শব্দটির দিকে। তিনটি স্থানে সালাত এসেছে। এই তিন স্থানের সালাত শব্দের ৪টি অর্থ।

প্রথম অংশে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল “নামায” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা নামায কায়েম কর। {সূরা বাকারা-৪৩} আর দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর উপর সালাত পড়েন মানে হল-আল্লাহ তায়ালা নবীজী সাঃ এর উপর রহমত পাঠান, আর ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর উপর সালাত পড়েন, মানে হল নবীজী সাঃ এর জন্য মাগফিরাতের দুআ করেন। আর তৃতীয় আয়াতাংশে “সালাত” দ্বারা উদ্দেশ্য হল উম্মতরা যেন নবীজী সাঃ এর উপর দরূদ পাঠ করেন। (كتاب الكليات ـ لأبى البقاء الكفومى) একজন সাধারণ পাঠক বা সাধারণ আলেম এই পার্থক্যের কথা কিভাবে জানবে? সেতো নামাযের স্থানে বলবে রহমাতের কথা, রহমতের স্থানে বলবে দরূদের কথা, দরূদের স্থানে বলবে নামাযের কথা। এরকম করলে দ্বীন আর দ্বীন থাকবে না, হবে জগাখিচুরী।

এরকম অসংখ্য স্থান আছে, যার অর্থ উদ্ধার করা কঠিন। তাই একজন বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তির শরাপন্ন হয়ে তার গবেষনা অনুযায়ী উক্ত বিষয়ের সমাধান নেয়াটাই হল যৌক্তিক। এই নির্দেশনাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন- {فَاسْأَلوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ} [النحل:43]তথা তোমরা না জানলে বিজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। {সূরা নাহল-৪৩} বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কিরাম কুরআন সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাত, এবং যুক্তির নিরিখে সকল সমস্যার সমাধান বের করেছেন। সেই সকল বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নামই হল মাযহাব অনুসরণ।

যেই অনুসরণের নির্দেশ সরাসরি আল্লাহ তায়ালা দিলেন পবিত্র কুরআনে। রাসূল সাঃ এর মাযহাব কি? মাযহাব কি এটা নিশ্চয় আগের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। সেই হিসেবে রাসূল সাঃ এর দুনিয়াতে কারো মাযহাব অনুসরণের দরকার নাই। কারণ তিনি নিজেইতো শরীয়ত প্রণেতাদের একজন। তিনি কার ব্যাখ্যা গ্রহণ করে অনুসরণ করবেন? তিনি কেবল আল্লাহ তায়ালার থেকেই সমাধান জেনে আমল করেছেন, এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাহাবীদের মাযহাব কি? সাহাবায়ে কিরাম যারা সরাসরি রাসূল সাঃ এর কাছে ছিলেন তাদের জন্য রাসূল সাঃ এর ব্যাখ্যা অনুসরণ করা ছিল আবশ্যক। এছাড়া কারো ব্যাখ্যা নয়। কিন্তু যেই সকল সাহাবারা ছিলেন নবীজী সাঃ থেকে দূরে তারা সেই স্থানের বিজ্ঞ সাহাবীর মাযহাব তথা মত অনুসরণ করতেন। যেমন ইয়ামেনে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর মত তথা মাযহাবের অনুসরণ হত। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ কে অনুসরণ করতেন ইরাকের মানুষ।

রাসূল সাঃ যখন মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ কে ইয়ামানে পাঠাতে মনস্ত করলেন তখন মুয়াজ রাঃ কে জিজ্ঞেস করলেন-“যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে তখন তুমি কিভাবে ফায়সাল করবে?” তখন তিনি বললেন-“আমি ফায়সালা করব কিতাবুল্লাহ দ্বারা”। রাসূল সাঃ বললেন-“যদি কিতাবুল্লাহ এ না পাও?” তিনি বললেন-“তাহলে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব”। রাসূল সাঃ বললেন-“যদি রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাতে না পাও?” তখন তিনি বললেন-“তাহলে আমি ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করব”। তখন রাসূল সাঃ তাঁর বুকে চাপড় মেরে বললেন-“যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি তাঁর রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে তাঁর রাসূল সন্তুষ্ট”। {সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৯৪, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২০৬১} এই হাদীসে লক্ষ্য করুন-রাসূল সাঃ এর জীবদ্দশায় হযরত মুয়াজ রাঃ বলছেন যে, আমি কুরআন সুন্নাহ এ না পেলে নিজ থেকে ইজতিহাদ করব, আল্লাহর নবী বললেন-“আল হামদুলিল্লাহ”।

আর ইয়ামেনের লোকদের উপর হযরত মুয়াজের মত তথা মাযহাব অনুসরণ যে আবশ্যক এটাও কিন্তু হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। এছাড়া সাহাবাদের যুগে যে সকল সাহাবাদের মাযহাব তথা মত অনুসরণীয় ছিল। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল- হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাঃ, হযরত আলী বিন আবু তালিব রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ, হযরত আয়েশা রাঃ, হযরত জায়েদ বিন সাবেত রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ প্রমূখ সাহাবাগণ। তাবেয়ীদের মাযহাবঃ তাবেয়ীরা যেই সকল এলাকায় থাকতেন, সেই সকল এলাকার বিজ্ঞ সাহাবীদের বা বিজ্ঞ মুজতাহিদের মত তথা মাযহাবের অনুসরণ করতেন। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব রহঃ, হযরত আবু সালমা বিন আব্দির রহমান রহঃ, হযরত ওরওয়া বিন জুবাইর রহঃ হযরত কাসেম বিন মুহাম্মদ রহঃ, হযরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রহঃ, হযরত খারেজা বিন জায়েদ রহঃ প্রমূখবৃন্দ।

তারপর মদীনায় যাদের মত তথা মাযহাবের অনুসরণ করা হত তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল-হযরত ইমাম জুহরী রহঃ, হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহঃ, হযরত রাবিয়া বিন আব্দির রহমান রহঃ। আর মক্কা মুকার্রমায় ছিলেন আতা বিন আবি রাবাহ রহঃ, আলী বিন আবি তালহা রহঃ, আব্দুল মালিক বিন জুরাইজ রহঃ প্রমূখ। আর কুফায় ছিলেন হযরত ইবরাহীম নাখয়ী, আমের বিন শুরাহবীল, শা’বী, আলকামা, আল আসওয়াদ রহঃ। আর বসরায় ছিলেন-হাসান বসরী রহঃ। ইয়ামানে হযরত তাওস বিন কায়সান রহঃ।

শামে হযরত মাকহুল রহঃ প্রমূখ। যাদের ফাতওয়া বিধৃত হয়েছে-মুয়াত্তাগুলোতে। মুসনাদগুলোতে, আর সুনানগুলোতে, যেমন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, কিতাবুল আসার, শরহু মায়ানিল আসার ইত্যাদী গ্রন্থে। {উসুলুল ইফতা লিত তাক্বী উসমানী দাঃবাঃ} কুরআন ও হাদীস দেখে আমল করলে অসুবিধা কোথায়? কি কি অসুবিধা তা আশা করি মাযহাব কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে পেয়ে গেছেন। সেই উত্তরটি আবার দেখে নিন।

মুহাদ্দিসগন কি মাযহাব মেনেছেন? এই কথাটি বুঝার আগে একটি কথা আগে বুঝে নিন। সেটা হল-রাসূল সাঃ এর যুগ থেকেই দু’টি দল চলে আসছে, একটি দল হল যারা ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী। তারা ইজতিহাদ করতেন তথা মত দিতেন বিভিন্ন বিষয়ে। আর একদল ছিলেন যাদের এই ক্ষমতা ছিলনা, তারা সেই মুজতাহিদদের মতের তথা মাযহাবের অনুসরণ করতেন। ঠিক একই অবস্থা ছিল সাহাবাদের যুগে।

একদল ছিল মুজতাহিদ, যাদের একটি তালিকা ইতোপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর বিশাল এক জামাত ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন না। তারা সেই সকল মুজতাহিদদের মাযহাব তথা মতের অনুসরণ করতেন। তেমনি তাবেয়ীদের একই অবস্থা ছিল, একদল মুজতাহিদ, আরেকদল মুকাল্লিদ তথা অনুসারী। এমনি মুহাদ্দিসীনদের মাঝেও দুই দল ছিল, একদল ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন, আরেকদল ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন না।

তাই তাদের মাঝে কারো কারো মাযহাব রয়েছে কারো কারো নেই। কেউ কেউ নিজেই মাসআলা বের করেছেন, কেউ কেউ অন্য কোন ইমামের অনুসরণ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী মুজতাহিদ ছিলেন, তাই তার কারো অনুসরণের দরকার নাই। তবে কেউ কেই তাকে শাফেয়ী মাযহাবী বলে মত ব্যক্ত করেছেন। {আল ইনসাফ=৬৭, তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাহ-২/২, আবজাদুল উলুম—৮১০} এমনিভাবে ইমাম মুসলিম রহঃ ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী।

{আল হিত্তাহ-১৮৬} নাসায়ী শরীফের সংকলক ইমাম নাসায়ী রহঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মাযাহাবের অনুসারী ছিলেন। , ইমাম আবু দাউদ রহঃ, ও ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। {ফয়জুল বারী-১/৫৮, আবজাদুল উলুম-৮১০, ইলাউল মুয়াক্কিয়ীন-১/২৩৬} ইমাম তাহাবী রহঃ ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী। যা তার সংকলিত তাহাবী শরীফ পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবে। এছাড়াও বাকি সকল মুহাদ্দিস হয়ত মুজতাহিদ ছিলেন, নতুবা ছিলেন মুকাল্লিদ কোননা কোন ইমামের।

কেন একটি মাযহাবই মানতে হবে? কুরআনে কারীম ৭টি কিরাতে নাজীল হয়েছে। কিন্তু একটি কিরাতে প্রচলন করেছেন হযরত উসমান রাঃ। যেটা ছিল আবু আসেম কুফী রহঃ এর কিরাত। এর কারণ ছিল বিশৃংখলা রোধ করা। যেন দ্বীনকে কেউ ছেলেখেলা বানিয়ে না ফেলে।

আর সবার জন্য এটা সহজলভ্য হয়। তেমনি একটি মাযহাবকে আবশ্যক বলা হয় এই জন্য যে, একাধিক মাযহাব অনুসরণের অনুমোদন থাকলে সবাই নিজের রিপু পূজারী হয়ে যেত। যেই বিধান যখন ইচ্ছে পালন করত, যেই বিধান যখন ইচেছ ছেড়ে দিত। এর মাধ্যমে মূলত দ্বীন পালন হতনা, বরং নিজের প্রবৃত্তির পূজা হত। তাই ৪র্থ শতাব্দীর উলামায়ে কিরাম একটি মাযহাবের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক বলে এই প্রবৃত্তি পূজার পথকে বন্ধ করে দিয়েছেন।

যা সেই কালের ওলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত সীদ্ধান্ত ছিল। আর একবার উম্মতের মাঝে ইজমা হয়ে গেলে তা পরবর্তীদের মানা আবশ্যক হয়ে যায়। - হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর পর শুধুমাত্র হানাফী, মালিকী, শাফিয়ী ও হাম্বলী উক্ত চার মাযহাবেই (কুরআন ও হাদীসের বিশ্লেষন) তাক্বলীদ (অনুসরন) সীমাবদ্ধ হয়েছে। কেননা, চার মাযহাব ছাড়া অন্যান্য মুজতাহিদদের মাযহাব তেমন সংরক্ষিত হয়নি। ফলে আস্তে আস্তে সেসব মাযহাব বিলুপ্ত হয়ে পড়ে।

[আহসানুল ফতোয়া ১/৪৪১, তাফসীরে আহমদী- ২৯৭, আল ইনসাফ- ৫২] - ইমাম ইবনে তাইমিয়াও লাগামহীনভাবে যে মাযহাব মনে চায় সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম ও অবৈধ ঘোষণা করেন। {ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া-২/২৪১} তিনি আরও লিখেনঃ “মুসলিম উম্মাহর ‘ইজ্মা’ উপেক্ষা করে মায্হাব চতুষ্টয়ের বিপরীতে কোন মায্হাব রচনা বা গ্রহণ বৈধ হবে না। ” (ফাত্ওয়া-ইবনে তাইমিয়্যাঃ পৃ – ২/৪৪৬) - ইমাম নববী (রহঃ) (মৃঃ ৬৭৬ হিঃ) যিনি সহীহ মুসলিম শারীফের ব্যাখ্যাকারী ‘রাওযাতুত তালেবীন’ নামক গ্রন্থে লিখেনঃ “উলামাগণ বলেন, ইজতিহাদে মুতলাক ইমাম চতুষ্টয় পর্যন্ত খতম হয়ে গেছে। তাই তাঁরা ইমাম চতুষ্টয়ের কোন একজনের ‘তাক্বলীদ’ মুসলিম উম্মাহর জন্য ওয়াজিব সাব্যস্ত করে দিয়েছেন। ইমামুল হারামাইন জুয়াইনী (মক্কা-মদীনা শরীফের ইমাম সাহেব – রহঃ, মৃঃ ৪৭৮ হিঃ) মায্হাব চতুষ্টয়ের তাক্বলীদ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ইজমা উল্লেখ করেছেন।

” (নুরুল হিদায়া হতে সংকলিত, পৃ – ১০; দেখুনঃ ফয়যুল কাদীরঃ পৃ – ১/২১০; শরহুল মুহায্যাব, নববীঃ পৃ – ১/৯১, আদাবুল মুস্তাফতী অধ্যায়) - আল্লামা ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহঃ) (মৃঃ ৯৭৩ হিঃ) তাঁর স্বীয় প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফাত্হুল মুবীন’ এ লিখেনঃ “আমাদের যুগের বিশেষজ্ঞদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবু হানীফা, শাফেয়ী, মালেক ও আহমদ বিন হাম্বল – এ চার ইমাম ব্যতীত অন্য কারও তাক্বলীদ (অনুসরণ) জায়িয নয়। ” (ফাত্হুল মুবীনঃ পৃ – ১৯৬) - মুহাদ্দিসুল শিরোমনি,পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের হযরত শাহ ওলীউল্লাহ দেহলভী (র) বলেনঃ ১. “আর তার মধ্যে অনেক উপকারিতা বিদ্যমান(অর্থাৎ কোন নির্দিষ্ট মাযহাব মেনে চলার মধ্যে ) যা সুস্পষ্ট । বিশেষত বর্তমান যুগে ,যখন শক্তি-সামর্থ ( নিজে সরাসরি কুরআন-হাদিস বুঝে অনুসরণ করার ) হ্রাস পেয়ে গেছে। আর প্রত্যেক মতামত সম্পন্ন ব্যক্তি স্বীয় মতামতকেই বড় মনে করে চলেছে। ” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহঃ ১ম খন্ড-মিশরী ;১৩২ পৃষ্টা) ২. “মাযাহাব চতুষ্টয়কে গ্রহণ করার মধ্যে অতি আবশ্যই বিরাট ফায়দা রয়েছে ।

“(ইক্বদুলজীদঃ৩৬) ৩. “হারামাইন শরীফাইনে অবস্থান কালে প্রিয় নবীজির (সাঃ) কাছ থেকে আমি (ইলহাম বা স্বপ্নের মাধ্যমে) তিনটি জিনিস অর্জন করেছি ; যা আমার ধ্যান-ধারণা বিপরীত ছিল। তম্মেধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল এই যে ,” যাতে আমি মুসলমানদের ওসীয়্যত করে যাই ;মাযহাব-চতুষ্টয়ের যে কোন একটিতে যেন তারা অন্তরভূক্ত হয় এবং আমি ও তা থেকে যেন বের না হই। “(ফুয়ূযুল-হারামাইনঃ ৬৫ পৃষ্টা) ৪. “সু-বিন্যস্ত গ্রন্থবদ্ধ এ চার মায্হাবের উপর সকল ইমামগণের ‘ইজ্মা’ তথা ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাঃ পৃ – ১/১২৩) এবার ইজমা সম্পর্কিত হাদীস দেখুনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতকে কোন ধরণের ভ্রষ্টতায় ‘ইজমা’ বা ঐক্যবদ্ধ করবেন না। আল্লাহর কুদরতী হাত মুসলমানদের জামাআতের উপর।

যারা মুসলমানদের পথের বিপরীত রাস্তা গ্রহণ করবে তারা বিচিত্রভাবে দোযখে যাবে। ” [তিরমিযীঃ পৃ – ৪/৪০৫, হাঃ ২১৬৭; মুস্তাদরাকে হাকিমঃ পৃ – ১/১১৬, হাঃ ৩৯৭, বুখারী ও মুসলিম শরীফসহ অসংখ্য হাদীসগ্রন্থে হযরত আব্বাস (রঃ) সহ ১৭ জন সাহাবী (রঃ) থেকে সমার্থবোধক শব্দে বর্ণিত। ] এছাড়াও আবু দাউদ শারীফ, মুসতাদ্রাক শারীফ, আল-মারিফা গ্রন্থসহ অনেক গ্রন্থে বলা আছে প্রত্যেক শতাব্দীতে মুজাদ্দিদ আসবেন যাঁরা দ্বীনের নবযৌবন দান করবেন এবং দ্বীনকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। এই পর্যন্ত যে সব মুজাদ্দিদ এসেছিলেন তাঁদের কেউই কোনো কালেই মাযহাবের বিরোধীতা করেন নি বরং সবাই কোনো না কোনো মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। আর এই মাযহবের বিরোধীতা শুরু করেছে এই সব থেকে বড় ফিতনা ফাসাদের যুগে এসে ওহাবী/সালাফী/আহলে হাদীস নামের একটি নির্দিষ্ট দল।

সত্যিই প্রসংশা করার মতো এদের প্রতিভা ও ধর্মজ্ঞান! আর সব থেকে বড় কথা কুর’আন-হাদীসের ব্যাখ্যা খারেজী-মুতাজিলা সম্প্রদায়ের মত দিয়ে পুরো মুসলিম উম্মার ইজমাকে বাতিল প্রমানের চেষ্টা করাটাও কম দুঃসাহসের ব্যাপার নয়! Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.