আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাযহাব অনুসরণ করা ফরয? (দলীল ভিত্তিক ধারাবাহিক --- ৫ম পর্ব)

জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক

শরীয়ত অনুযায়ী মাযহাব পালন করা ফরয কিনা তা এক লাইনে লেখা সম্ভব নয়। দলীল সহ বিস্তারিত লিখা হলে সহজে ‍বুঝা যাবে। তাই অনেকগুলো পর্ব হবে। সবগুলো পর্ব পড়ে মন্তব্য করবেন আশা করি। ৪র্থ পর্বের পর.................... “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত ।

তিনি বলেন, যে ব্যক্তি শরীয়তের ছহীহ্ নিয়মের অনুসারী হতে চায় তার জন্য একান্ত কর্তব্য আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবাগণের অনুসরণ করা । ছাহাবীগণই উম্মতের মধ্যে অতি উত্তম । উনারা আত্মার দিক দিয়ে অতি পবিত্র । ইলমের দিক দিয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী । মানুষকে দেখানোর জন্য উনারা কোন কাজ করেননি ।

আল্লাহ্ পাক উনারদেরকে মনোনীত করেছেন উনার প্রিয়তম হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী হিসেবে এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য । সুতরাং তোমরা উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং সথাসম্ভব উনাদের গুণাবলী ও চরিত্র মুবারককে গ্রহণ করো । কারণ উনারা হিদায়াত ও ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর দৃঢ় ছিলেন । ” (মিশকাত শরীফ) “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর, আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সম্পর্কে আল্লাহ্ পাককে ভয় কর ।

আমার বিছাল শরীফের পরে উনাদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করোনা । যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করলো, সে আমাকে মুহব্বত করার কারণেই করলো, আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলো, সে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো । যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিল, সে মূলতঃ আল্লাহ্ পাককেই কষ্ট দিল, আর যে আল্লাহ্ পাককে কষ্ট দিল, আল্লাহ্ পাক তাকে শীঘ্রই পাকড়াও করবেন । ” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণত । তিনি বলেন, একবার আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন ।

অতঃপর আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে এমন মর্মস্পর্শী নছীহত করলেন যাতে আমাদের চক্ষুসমূহ অশ্রুসিক্ত এবং অন্তরসমূহ বিগলিত হলো । এ সময় একজন ছাহাবী বলে উঠলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! এটা যেন বিদায় গ্রহণকারীর শেষ নছীহত । আমাদেরকে আরো কিছু নছীহত করুন । তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদেরকে আমি আল্লাহ্ পাককে ভয় করা এবং তোমাদের ইমাম বা উলিল আমরের কথা মান্য করা এবং উনার অনুগত থাকার জন্য নছীহত করছি যদিও তিনি হাবশী গোলাম হন । আমার বিদায়ের পর তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে সে অনেক ইখতিলাফ বা মতবিরোধ দেখতে পাবে ।

তখন তোমরা আমার সুন্নতকে এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রশিদীনের সুন্নতকে মাড়ির দাঁত দ্বারা শক্তভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে । ” (আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) “হযরত ইমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত । হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার বিছাল শরীফের পরে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে আমি আল্লাহ্ পাককে জিজ্ঞাসা করেছি । ” আল্লাহ্ পাক আমাকে বললেন, ‘হে আমার হাবীব, নিশ্চয়ই আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আমার নিকট তারকা সমতুল্য । প্রত্যেকেরই নূর রয়েছে ।

তবে করো নূরের চেয়ে করো নূর বেশী । সুতরাং, উনাদের যে কোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবে, তারা হিদায়াত পেয়ে যাবে । কারণ উনাদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য । ” অতঃপর রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ প্রত্যেকেই তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবে, হিদায়েত প্রাপ্ত হবে । ” (মিশকাত শরীফ) হাদীছ শরীফের উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত বর্ণনার দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, উলিল আমরের অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহ্ পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করা এবং কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত মুতাবিক চলা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় ।

আরো প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রদর্শিত বা অনুসৃত পথই সতন্ত্র একটা মাযহাব ছিলো । যার অনুসরণে হযরত তাবিয়ীনে কিরামগণ চলতেন। কিন্তু তাবিয়ীনে কিরাম এবং তাবি তাবিয়ীনে কিরামের যুগ অতিবাহিত হওয়ার শেষ দিকে অর্থাৎ দু’শত হিজরীর পর ইমাম-মুজতাহিদগণ অনুসন্ধান করে দেখলেন যে, কেবলমাত্র চার ইমামের মধ্যেই দ্বীনের পরিপূর্ণ মাসয়ালা রয়েছে । তাই উনারা এ ফতওয়ার উপর ইজমা বা ঐক্যবদ্ধ হলেন যে, চার মাযবাহের যে কোন এক মাযহাব অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব । হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العلم ثلاتة اية محكمة اوسنة قا ءمة اوفريضة عادلة وماكان سوى ذ لك فهو فضل. অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত ।

তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইলম তিন প্রকার । এক. আয়াতে মুহকামাহ, দুই. সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নতসমূহ, তিন. ফরীদ্বায়ে আদিলাহ বা ন্যায়সঙ্গত ফরযসমূহ । ইহা ব্যতীত যা রয়েছে তা অতিরিক্ত । ” (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত) মূলতঃ মাযহাবের ইমামগণের অনুসরণ এবং তরীক্বার ইমামগণের অনুসৃত পথের অনুসরণই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত ফরীদ্বায়ে আদিলাহর অন্তর্ভূক্ত । ৪র্থ পর্ব।

৩য় পর্ব। ২য় পর্ব। ১ম পর্ব। ---------------------------------------(ইনশাআল্লাহ চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.