আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাস্তায় নামলেন ব্যবসায়ীরা

দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের দাবিতে এবার রাস্তায় নামলেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে সহিংসতা বন্ধ এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।
এর আগে পোশাক কারখানার মালিকদের সমিতি বিজিএমইএর কার্যালয়ের নুরুল কাদির মিলনায়তনে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পোশাকশিল্পে নাশকতা নিয়ে এক মতবিনিময় সভা হয়। এ সময় উপস্থিত মালিকেরা নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা ও স্ট্যান্ডার্ড কারখানার ঘটনায় নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান। তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। আমদানি-রপ্তানি না হওয়ায় দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায়। এ কারণে দেশের মানুষের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত এ সভায় বিজিএমইএ ছাড়াও নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ ও টেক্সটাইল মিলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম।


সভায় সিদ্ধান্ত হয়, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার চাইতে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে স্মারকলিপি দিতে যাবেন উপস্থিত মালিকেরা। সভা শেষে পাঁচটা ৪২ মিনিটে বিজিএমইএ ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি দিতে মিছিল করে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেন মালিকেরা। এ সময় মালিকেরা ‘স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস পুড়ল কেন জবাব চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।

মিছিলে ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আবদুস সালাম মুর্শেদী, বর্তমান সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, এস এম মান্নান, বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন, স্ট্যান্ডার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেনসহ দুই শতাধিক পোশাক কারখানার মালিক।

মিছিল সন্ধ্যা ছয়টা চার মিনিটে ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের কয়েকজন সদস্য বাধা দেন।

মালিকদের সঙ্গে পুলিশের বাগিবতণ্ডা হয়। পুলিশ বিজিএমইএর সভাপতিকে স্মারকলিপিসহ একটি প্রতিনিধিদলকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যেতে অনুরোধ করে। উত্তেজিত মালিকেরা এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে সামনে এগোতে থাকেন। তবে ফার্মগেটের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের ফটকের সামনে পুলিশ আবার মিছিলের গতি রোধ করে।

পরে আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গাড়িতে করে গণভবনে যায়।

আর বাকি মালিকেরা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে স্মারকলিপি দিতে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে যান। কিন্তু খালেদা জিয়া এ সময় কার্যালয়ে ছিলেন না। বিজিএমইএর নেতারা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপি গ্রহণ করে সাবিহউদ্দিন বিজিএমইএর নেতাদের জানান, তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনকে স্মারকলিপি পৌঁছে দেবেন এবং দাবি-দাওয়ার বিষয়টি অবহিত করবেন।

মতবিনিময় সভা: মতবিনিময় সভায় উপস্থিত মালিকেরা স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে ঘুরে দাঁড়াতে সব রকমের সহযোগিতা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

বিজিএমইএকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে কয়েকজন মালিক বক্তব্য দেন।

গোলাম মোস্তফা নামের একজন পোশাক ব্যবসায়ী দুই নেত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সত্যিকারের মা হয়ে থাকলে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ করুন। ’

আরেক ব্যবসায়ী জাহানারা আক্তার বলেন, ‘দুই দল দেশকে নিয়ে খেলা শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের পরিবারে সব মিলিয়ে পাঁচ কোটি লোক আছে।

আমাদের শক্তিও কম না। আমরা রাস্তায় নামলে দুই নেত্রী কোথায় ভেসে যাবেন, খুঁজেও পাওয়া যাবে না। ’

মিতালী ফ্যাশনের মালিক সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা বন্দরে পণ্য পাঠাতে পারছি না। ’

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘দুই দল দেশকে দিনে দিনে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে দেশের জন্য নয়, তারা নিজেদের স্বার্থের জন্যই রাজনীতি করে।

আত্মঘাতী রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সহিংস রাজনীতি বন্ধ না করলে দেশের অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে। পোশাকশিল্পের অনেক ক্রয়াদেশ ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে চলে যাচ্ছে। ’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সবুর খান বলেন, স্ট্যান্ডার্ডকে সামনে রেখে পোশাকশিল্পের সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, স্ট্যান্ডার্ডের ঘটনায় কেবল এক হাজার ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়নি। দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।

সভার শুরুতে হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘অবরোধের মধ্যে পুলিশি পাহারায় পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান বন্দরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। রোববার রাতে ৬৫টি ট্রাক নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ’

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক: রাত সোয়া নয়টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম জানান, হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পোশাক কারখানার নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর কারখানায় সহিংস ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে পোশাক কারখানাগুলোকে কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) ঘোষণা করার দাবি জানান কারখানার মালিকেরা।

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি করেন তাঁরা।

বিজিএমইএর সভাপতি সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি তো হরতাল, অবরোধ দেইনি। যিনি দিয়েছেন, ওনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। ’ সম্প্রতি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানাটি দু-এক দিনের মধ্যে পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

সন্ধ্যা ছয়টা ৪২ মিনিটে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল গণভবনে প্রবেশ করে।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.