আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবার ডিগবাজি এরশাদের

আবার ডিগবাজি খেলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি নিজেসহ ২৪৮ আসনে জাপার প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পরদিন গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর বনানীতে নিজ কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এরশাদ এ ঘোষণা দেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া জাপার প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও এ সময় তিনি জানান।

এর আগে কয়েক মাস ধরে এরশাদ সভা-সমাবেশ করে বলে আসছিলেন যে সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে তাঁর দল যাবে না।

একতরফা নির্বাচনে গেলে মানুষ তাঁকে থুতু দেবে। এরপর আকস্মিক ভোল পাল্টিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। তাঁর দল নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেয়। এর ১৪ দিনের মাথায় আবার অবস্থান পরিবর্তন করে গতকাল তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এটাই তাঁর শেষ কথা।



অথচ ২৪ ঘণ্টা আগে তিনি নিজেও তিনটি আসনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এক রাতের মধ্যে কী এমন ঘটনা ঘটে গেল, সেটা অবশ্য এরশাদ স্পষ্ট করেননি। তিনি দাবি করেন, ‘প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সব দল না এলে নির্বাচন করব না। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। ’

তাহলে বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে জাপার উপদেষ্টা-মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘সর্বদলীয় সরকার করা হয়েছিল নির্বাচন পরিচালনার জন্য।

যদি আমি নির্বাচন না করি, সর্বদলীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা না থাকে, তারা চলে আসবে। ’ কবে নাগাদ চলে আসবে? জবাবে এরশাদ বলেন, ‘নির্দেশনা দিইনি। সরকার যদি নির্বাচন করতে পারে থাকুক, আর না হলে চলে আসবে তারা। আমি নির্বাচন করব না, দিস ইজ মাই ফাইনাল ওয়ার্ড। ’ নির্বাচনে না গেলে সর্বদলীয় সরকারে আছেন কেন—জবাবে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই, আজকে মাত্র প্রেস করলাম।

আরেকটু সময় দাও। ’

সংবাদ সম্মেলনের পর নিরুদ্দেশ: সংবাদ সম্মেলনে এরশাদকে কিছুটা চিন্তিত দেখা যায়। তাঁর পাশে কোনো নেতাকে বসাননি। যদিও তখন দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে এরশাদ নিজের কক্ষে যান।

১২টা ২৫ মিনিটের দিকে সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এরশাদকে ফোন করেন। ফোন ধরেই এরশাদ বলেন, ‘...আই অ্যাম স্যরি, এ ছাড়া আমার কিছু করার নেই। আমাকে মানুষ পেটাবে, আমার জীবন...। ’ এই বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এরশাদ দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করেন। এ সময় এরশাদের চেহারা ছিল ফ্যাকাশে।



নিরাপত্তারক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এরশাদ নিজের গাড়িতে না উঠে অন্য একটি গাড়িতে করে এলাকা ত্যাগ করেন। এর পর থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। এরশাদের নিরাপত্তারক্ষী বাদশা জানান, রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এরশাদ নিজের বাসভবন বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে ফেরেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) হয়তো কোনো আপনজনের বাড়িতে দাওয়াতে আছেন। এ ধরনের বেড়ানোর সুযোগ তো অতীতে হয়নি তাঁর।



আর বিদ্রূপ করে লিখো না: সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ ছিলেন আবেগতাড়িত। সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোমরা আমার সম্পর্কে বিদ্রূপ করে লেখো, এরশাদ সাহেব সকালে এক কথা, বিকেলে আরেক কথা বলেন। এটা কতটা সত্য জানি না, কিছুটা হলেও সত্য। ’ তিনি বলেন, ‘নব্বই সাল থেকে আমি শৃঙ্খলিত রাজনীতিবিদ। মুক্ত রাজনীতি করতে পারিনি।

দুঃখের অনেক কাহিনি আছে। আমাকে আর বিদ্রূপ করে লিখো না। ’ এ সময় এরশাদ তাঁর নিজ হাতে লেখা দুই পাতার একটি বক্তব্য সাংবাদিকদের দিয়ে বলেন, ‘এটি তোমরা পড়বে। ’

তাঁর বিরুদ্ধে বিচারাধীন মঞ্জুর হত্যা মামলার কথা উল্লেখ করে এরশাদ বলেন, ‘মঞ্জুর হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জন বিচারক পরিবর্তন হয়েছে। একজন সাক্ষীও আমার নাম উচ্চারণ করেনি।

তা সত্ত্বেও রায় দেওয়া হচ্ছে না। আশা করেছিলাম রায় পাব। বিচারক সিদ্ধান্ত দিলেন, ২১ জানুয়ারি শুনানি হবে, রায় হবে না। অর্থাৎ আমাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এর চেয়ে দুঃখের আর কী হতে পারে!’

জাপা থেকে বহিষ্কার করা জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী জাফর আহমদের ব্যাপারে এখন কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘তাঁরা কেন গেলেন জানি না।

অতীতে অনেকে চলে গেছেন, আবার ফিরেও এসেছেন। আমি ঠিক পথেই ছিলাম। কিন্তু আমার দুঃখ-বেদনার কথা কেউ অনুভব করতে পারেনি। আশা করি, তাঁরা ফিরে আসবেন। ’

ডিগবাজি নিয়ে নানা আলোচনা: হঠাৎ করে এরশাদের নির্বাচন না করার ঘোষণায় জাপার ভেতরে-বাইরে নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের সায় নিয়েই এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে জাপার নেতাদের কারও কারও মতে, এ ঘোষণার সঙ্গে আসন নিয়ে বনিবনা না হওয়া, আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত বিষয় জড়িত আছে।
অবশ্য এরশাদ বলেছেন, ‘বলা হচ্ছে, এরশাদ এক হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে। যদি এক হাজার কোটি টাকা নিতাম, তাহলে এ ঘোষণা কেন দিলাম?’

জ্যেষ্ঠ নেতারা জানতেন না: দুপুরে এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলেও জাপার জ্যেষ্ঠ নেতারা আগে থেকে কিছুই জানতেন না। জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব ও বিমানমন্ত্রী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘোষণাটা টেলিভিশনে দেখলাম।

এইচ এম এরশাদ নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। তবে আমরা ওনার সিদ্ধান্ত মেনেই দলে আছি এবং থাকব। ’
অবশ্য মন্ত্রিসভায় জাপার ছয়জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে তিনজন গতকাল সচিবালয়ে নিজ নিজ দপ্তরে গেছেন, অপর তিনজন যাননি।

সন্ধ্যায় জাপার মহাসচিবের গুলশানের কার্যালয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর তিন সদস্য প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক বৈঠক করেন। এরপর সেখান থেকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ যান গণভবনে আর রুহুল আমিন হাওলাদার যান রওশন এরশাদের বাসায়।



এরশাদ-ফখরুল বৈঠক?: এদিকে অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাতে এরশাদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের সঙ্গেও এরশাদের যোগাযোগ হয়েছে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.