দুদিন আগে একটা লিখা লিখলাম নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে । আমি কোন ধর্ম বিরোধী বানী প্রচার করি নি; করতে চাইও নি । যদি এরকম কিছু করতে চাইতাম তাহলে করতে পারতাম । সে অধিকার আমার আছে । তবে বাস্তবতা হচ্ছেঃ এরকম কিছু করি নি ।
আমি আমার উপলব্ধির জায়গা থেকে যা বলার বলতে চেয়েছি । আমার ধারণা সেটা আমি খুবই শান্ত, সৌম্য, নম্রভাবে লিখাটি লিখেছিলাম । কোন ধরণের উগ্রতাই ছিল না । এমনকি ছিল না আঘাতমূলক কোন বক্তব্য । তবুও মুসলমান আস্তিকরা কষ্ট পেয়েছেন; এবং আমাকে গালি দিয়েছেন ।
আমি সব মুসলমানদের কথা বলছি না । তবে অধিকাংশ শব্দটা যুক্তটা হতে পারে । অনেকাংশ শব্দটা বেশি মানানসই । অনেকাংশ মুসলিমরা 'খানকির পোলা, মাগির পুত etc' বলে কিভাবে তাদের তুলে ধরার চেষ্টা করে আমি ঠিক জানি না । অনেকের বক্তব্যই শুরু হয় গালি দিয়ে ।
আমি বলতে পারবো না ইসলাম নিজে এ বিষয়টি ঠিক কিভাবে নেবে । আমি ইসলাম সম্পর্কে জানি না, ধারণা করতেই পারি, ইসলাম এগুলো সমর্থন করে । কোন এলিয়েন যদি নাস্তিকের পোস্টে মুসলিম গালিবাজদের এধরণের চালচলন দেখতো তাহলে এটিই মনে করতোঃ মুসলমানদের গালি ধর্ম দ্বারা সিদ্ধ । এলিয়েনরা এই বক্তব্য প্রচার করলে অনেক মুসলিমরাই এলিয়েনদের মা বাপ নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন । এবং বলতেন, মাগীর পুত, তোর মারে চুদি, এলিয়েন খানকি মাগীর পোলা. . . . এরকম আরো অনেক কিছু ।
তারা এগুলো বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন যে, এলিয়েনরা যা বলেছে তা তাদের ভুল ধারণামাত্র । তাদের ধর্ম শান্তিপ্রিয় এবং এখানে কটূ কথা নিষিদ্ধ যা এলিয়েন চোতমারানীরা একদমই বুঝতে পারছে না । যদিও এলিয়েন বেচারারা নির্দোষ । তাদের গঠিত মতবাদটি ছিল পর্যবেক্ষণ দ্বারা গৃহীত । ঠিক এরপর কিছু এলিয়েনকে শূলে চড়ানো হতে পারে ।
কোন এক চত্বরে ফাঁসির দাবী তোলা হতে পারে । এবং একদল বোদ্ধা বলতে পারে, 'এলিয়েনরা কেন ধর্মকে আঘাত দিবে ! এত খোঁচাখুঁচি কেন তাদের ?' বাস্তবতা হচ্ছে এলিয়েনরা আঘাত করতে চায় নি, মতামত ব্যক্ত করেছে । খুব সম্ভবত এলিয়েনরাও একটা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইবে । এবং শত্রু মিত্র চিহ্নিত করবে । আলাদা করবে শত্রু ।
প্রথমে তাদের ভঙ্গীটি হবে রক্ষণাত্বক । তাদের বারবার আঘাত করার ফলে তারাও হবে আক্রমণাত্বক । তখন অনেক মুসলমান বলা শুরু করবে, 'আক্রমণ করতে আসেই দেখি আমরা রাগী । এলিয়েনরা খোঁচা দেয় । প্রকৃতপক্ষে এলিয়েনরা নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করতে গিয়েই বক্তব্য প্রদান করেছে ।
এবার উপলব্ধির জায়গা থেকে কিছু কথা বলি । আমি বড় হয়েছি একটি মুসলিম সমাজে । আমার পাশের বাসার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি লোকটাকে আমার কখনোই খারাপ মনে হয় নি । খেলার মাঠের পাশে নামাজের দাওয়াত দেয়া সোহেল ভাইকে কখনোই বাজে লোক মনে হয় নি । অনেক বেশি নম্র ভদ্র ছিলেন ।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গোলযোগের সময় যখন টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল হঠাত্ দেখলাম একজন সিজদা দিয়ে পরে গেলেন; উনি নিশ্চই ভাল হয়ে থাকবেন । ভাল হয়ে থাকবেন অনেকেই । খারাপও হবেন । এখন আমরা একটা দুষ্টচক্রের ভেতর পরেছি । আস্তিকের আঘাত নাস্তিককে উগ্র বানিয়ে দিচ্ছে, নাস্তিকদের উগ্রতা আস্তিককে আরো উগ্র বানিয়ে দিচ্ছে, আস্তিকরা আরো আঘাত করতে চাইছে ।
নাস্তিকরা আরো আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে । নাস্তিকদের সাংগঠনিক কোন শক্তি নেই; তাদের নির্ভর করতে হচ্ছে যুক্তির ওপরই । আস্তিকরাও হয়তো আমার সাথে একমত হবেন যে নাস্তিকরা অনেক বেশি যুক্তিপ্রবণ । বাস্তবে আমি কোন নাস্তিককে দেখি নি তেড়ে মারতে আসতে । অনেকেই নাস্তিকদের মনে করেন খারাপ ।
সাম্প্রদায়িক চিন্তাভাবনার ফলেই এ ধারণা আসে । আমরা স্বাভাবিকভাবেই যদি ব্যপারটা ভাবি, নাস্তিকদের মাঝে এমন কি আছে যে তারা খারাপ হবে ! তারা সাধারণ মানুষ । যুক্তির জায়গা থেকে অবিশ্বাস করে ঈশ্বরের । তার একটা সময় মনে হয় ধর্ম সভ্যতার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে । এটি বলার জন্য তার কাছে বেশ কিছু তথ্য ও যুক্তি থাকে ।
তার জায়গা থেকে তার অধিকার আছে এরকম কিছু যুক্তি তথ্য উপস্থাপণ । আস্তিকদের দ্বারা তারা অনেক গালি খায় । নাস্তিকদের মন খারাপ হয় । তার আরো কয়েকটা নাস্তিক বন্ধুর সাথে কথা বলে । তার অস্তিত্বকে জোরদার করার জন্য সমমনা একটা সার্কেল চায় ।
ভাত তরকারি খায়, মানুষের জন্যে কষ্ট পায়, রাজনৈতিক অবস্থায় মুর্ষে পরে, শিশুকে দেখলে গাল চিপে আদর করে । আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, আমার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই যার ওপর আপনারা শতভাগ আস্থা রাখতে পারেন, নাস্তিকরা সাধারণ মানুষ । এদের মাঝে অনেকে মানবতাবাদী, কয়েকটা সামান্য দুষ্টু । ওমর ফারুক লুক্স ধর্মের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবেই পোস্ট দেন । সেটা উনি করেন কতকটা নিজের দায়িত্বের মত, কয়েকটা হতে পারে আঘাত করার জন্য, কয়েকটা অবদমিত হিংস্রতা প্রকাশ করার জন্য ।
তবে ওমর ফারুক লুক্স খারাপ মানুষ হবার কোন কারণ নেই । ওনার সামর্থ্য থাকলে উনি বাংলাদেশের সকলের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতেন ধর্ম নির্বিশেষে । আমি একটু সাহস করে বলতে চাই, আমার ধারণা অনেক মুসলিম সেটা সংখ্যায় নগন্য হলেও, মৌলিক চাহিদা সবার জন্য নিশ্চিত করতেন না । তাদের এরকম ফতোয়া বের হওয়া সম্ভব, নাস্তিকদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকারীরা হবে জাহান্নামি । আমি একটা নিছক উদাহরণের জন্য ব্যপারটা টানলাম ।
প্রকৃতপক্ষে সবার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সামর্থ্য ওমর ফারুক লুক্সের হবে না । আমার পোস্টটি শেষ করার সময় হয়েছে । আমি নির্দিষ্ট করে গুছিয়ে কিছুই বলতে পারি নি । আমি পরিশেষে সারমর্ম করে কিছু কথা নির্মোহভাবে বলতে চাইঃ আমার কাজিন অত্যন্ত নরম মনের মানুষ । কিছু হলেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় বসেন ।
বেশ ভাল আছেন । খারাপ কিছু ঘটলেই মনে করে, আল্লা যা করে ভালোর জন্যে করেন । তার বিশ্বাস কতটুকু ভ্রান্ত আমি সে আলোচনায় যেতে আগ্রহী নই । সে খুব সুখে আছে । সে আমার গলা কাটতে আসে না ।
এবং অবসরে আমার জন্যে দোয়া করে আমার ওপর হেদায়াত আসুক । তার প্রতি আমার ভালবাসার অভাব নেই । তার নাস্তিক হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ না । সুখে থাকাটাই বড় কথা । তবে সে যদি তার বিশ্বাস নিয়ে আমার গলা কাটতে আসতো, ক্ষতি করতো সভ্যতার, ছড়িয়ে দিত ঘৃণা, আমি সম্ভবত মানুষ হিসেবে অধিকার রাখি তার বিশ্বাসকে বধ করার
গদ্যটি লিখেছেন গাজি ফাতিহুন নূর (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।